ডিসেম্বরে বাণিজ্যিক ৫জি :বিটিআরসি চেয়ারম্যান ইন্টারনেটের ব্যবহার হোক প্রোডাক্টিভ
তারুণ্যের ৮ সেমিনার ও শিশুদের কর্মশালার মধ্য দিয়ে মধ্য দিয়ে শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হলো তিন দিনের ইয়্যুথ আইজিএফ। মোট ৪০০ জন নিবন্ধিত মাল্টিস্টেকহোল্ডার অংশগ্রহণকারীর সামনে সাইবার দুনিয়া ও ইন্টারনেট প্রশাসনে বাংলাদেশে অবস্থান, চ্যালেঞ্জ ও করণীয়সহ ইন্টারনেটকে তরুণদের ক্ষমতায়নে তিন দিন ধরে বৈচিত্রময় বিষয়ে আলোচনা করেন ৭০ জন বক্তা। সম্মেলনে সবার জন্য নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চিত করার মাধ্যমে আগামীর জন্য সমান্তরাল পৃথিবী গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন বক্তারা। শহর-গ্রামের ডিজিটাল বৈষম্য দূর করতে ডিভাইসে নারী-পুরুষ এবং শিশুদের সমান অংশীদারীত্বের মাধ্যমে ইন্টারনেটের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয় সম্মেলন থেকে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি খন্দকার হাসান শাহরিয়ারের সঞ্চালনায় বিকেলে সমাপনী অধিবেশনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ভিকারুন্নেসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী জারতাজ হক সিমরা। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেইন্ট ফ্র্যান্সিস জ্যাভিয়ার্স গ্রিন হের্যাল্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষিকা আয়েশা লাবিবা।
আলোচক ছিলেন সানবিম ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষার্থী আয়ান আহমেদ, সানফ্র্যান্সিস জ্যাভিয়ার্স গ্রিন হের্যাল্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষার্থী কাজী সব্যসাচী, ইলমা খন্দকার, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী শ্রীপর্না পাল, তানজিরুল হক এবং বিসিএসআইআর স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী খন্দকার আয়েশা শাহরিয়ার।
ইন্টারনেট হোক সবার নেটহাইজিন নিশ্চিত করতে বাধ্যতামূলক ডিজিটাল লিটারেসি
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিসিএসআইআর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ ইদ্রিস আলী। প্রধান অতিথি ছিলেন সঙ্গীত শিল্পী আলম আরা মিনু। বক্তব্যে তিনি, শিশুদের সময়ের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিয়ে নিজের ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা ও শারীরিক খেলাধূলা এবং সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান। খুদে নেটিজেনদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, বলেছেন, বন্ধুত্ব হতে হবে সবার আগে পিতামাতা ও পরিবারের সঙ্গে। পারিবারিবারিক বন্ধন অটুট থাকলে সাইবার বুলিং কমবে। সাইবার বিষণ্ণতার ঘুনপোকা কোনো ক্ষতি করতে পারবে না তারুণ্যের শক্তিকে।
সেমিনারের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরামে মহাসচিব মোহাম্মাদ আব্দুল হক অনু। সেমিনার শেষে পাঁচটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে কর্মশালায় অংশ নেয় উপস্থিত শিশুরা। এরপর তারা ইন্টারনেটের নিরাপদ ও উৎপাদনশীল ব্যবহার নিয়ে নিজেদের উপস্থাপনা তুলে ধরেন নেটশিশুরা।
অংশগ্রহণকারীদের হাতে সনদ তুলে দেন আইকান দক্ষিণ এশিয়ার জ্যেষ্ঠ পরিচালক নিতুন ওয়ালি। তিন দিনের সম্মেলনে অংশ নিয়ে প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর তারুণ্যশক্তির উত্থানে বাংলাদেশ সহসাই গ্লোবাল পাওয়ার হাউজে যুক্ত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। এজন্য শিশু ও কিশোরদের নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহারের পাশাপাশি তারা যেনো প্রোডাক্টিভ কাজে ইন্টারনেট ব্যবহার করে সেদিকটায় নজর দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন নিতুন। বলেছেন, গত সাত কয়েক বছরে বাংলাদেশের ডিজিটাল অবকাঠামোগত দারুণ উন্নতি হয়েছে। কিন্তু ভাষা সীমাবদ্ধতার কারণে ইন্টারনেট প্রান্তিক মানুষের কাছে ততটা পৌঁছতে পারে না। ফলে এ দিকেটায় আমাদের বেশি নজর দিতে হবে। কেননা, ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় বাংলাদেশ এখন খুবই সম্ভাবনাময় একটি জায়গায় রয়েছৈ। আর ইন্টারনেটের যেহেতু কোনো সীমানা নেই; তাই তরুণদের উচিত ক্যারিয়ার গঠনে ইন্টারনেট ব্যবহার করা।
এর আগে সকালে নেট দুনিয়ায় যুব ও যুব নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে সমাপনী ও ৭ম সেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ উইমেন আইজিএফ মহাসচিব ফারহা মাহমুদ তৃণা।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের পরিসংখ্যান তুলনা করে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টি রুমানা হক রিতা বলেছেন, জাতিসংঘের হিসেবে আমরা ২৮৬ বছর পিছিয়ে গেছি। তবে আমরা থেমে যাবো না। এক্ষেত্রে দ্রুত এগুতে ইন্টারনেট সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম। এই মাধ্যমে আমরা পিছিয়ে নেই। তবে ফেসবুকিং, ইনস্টাগ্রাম নয়; ইন্টারনেটের ‘ইফেক্টিভ’ ব্যবহারে গুরুত্ব দিতে হবে।
অনলাইনে সংযুক্ত হয়ে আইজিএফ দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক অমৃতা চৌধুরী বলেছেন, কোভিডে লিঙ্গ বৈষম্য বেড়েছে। ক্রসকাটিং টেকনলোজিতে নারীদের ইন্টারনেট ব্যবহারে সমতা না হলে নারী-পুরুষ বৈষম্য বাড়বে। আবার ইন্টারনেটে নারীরা বেশি সহিংসতার শিকার হন। তারপরও কানেক্টিভিটির বিকল্প নেই। এই সুবিধা নিশ্চিত করে বাংলাদেশ এসডিজি ৫ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে সক্ষম হবে। চ্যাটজিপিটি’র মতো অ্যালগরিদমও নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতায় ব্যবহৃত হতে পারে বলেও সতর্ক করেন তিনি। এজন্য আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক আইজিএফ-এ বাংলাদেশের নারীদের যুক্ত থেকে সোচ্চার আহ্বান জানান অমৃতা।
ইউএন এজেন্সির উন্নয়ন কর্মকর্তা কাকলী চক্রবর্তী পরিবার ও স্কুলকে ইন্টারনেট গভর্নমেন্সের অন্তর্ভুক্ত করার ওপর জোর দেন। একইসঙ্গে সরকারি কর্মকর্তারা যেখানে নিজেরা কম্পিউটার ব্যবহার করেন না সেখানে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ রূপকল্প নিয়ে প্রশ্ন তুলেন তিনি।
ডিসিশান মেকিং-এ নারীরা এলেও তাদের সিদ্ধান্ত কতটা গ্রহণ করা হয় তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন চ্যানেল আই নিউজ এডিটর ড. শাকিলা জেসমিন। এমন পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে গেরিলা যুদ্ধের আহ্বান জানান নারীদের।
বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ২৪ সিএনই শাহনাজ মুন্নী বলেন, শহরে ইন্টারনেটে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। যে কোনো তথ্য আমারা সহজেই পাচ্ছি ইন্টারনেটে। কিন্তু সেই তথ্য খুঁজতে গিয়েও সাইবার দুনিয়ায় নারীরা বেশি ঝুঁকিতে পড়ছেন। তাই সাইবার লিটারেসি বাড়াতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ উইমেন আইজিআইএফ চেয়ারপার্সন শামীমা আক্তার নারী-পুরুষ একসঙ্গে সাইবার দুনিয়ায় ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে নারী-পুরুষ নির্বশেষ সবাইক একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়া ওপর গুরুত্বারোপ করেন। নেটহাইজিনের জন্য তিনি ডিজিটাল স্বাক্ষরতা নিশ্চিত করতে বহুপক্ষীয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বিআইজিএফ সবসময় সোচ্চার থাকবে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
এর আগে দ্বিতীয় দিনের সমাপনী অধিবেশনে বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার আগামী ডিসেম্বররের মধ্যে দেশে বাণিজ্যিকভাবে ৫জি সেবা চালুর প্রস্তুতির কথা তুলে ধরেন। এছাড়াও তিনি জানিয়েছেন, সাইবার নিরাপত্তায় সচেতনতা গড়ে তুলতে বিটিআরসি দেশজুড়ে ৬৪টি জেলাতেই কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
যুব এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য: যুব এবং গ্লোবাল ডিজিটাল কমপ্যাক্ট/সামিট অফ দ্য ফিউচার শীর্ষক ওই সেশসটি সঞ্চালনা করেন নাগরিক টিভি’র প্রধান প্রতিবেদক মিসেস শাহনাজ শারমীন। বক্তব্য রাখেন নিরাপদ সড়ক চাই চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বহুপক্ষীয় অর্থনৈতিক বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফাইয়াজ মুর্শিদ কাজী।
সভাপতির বক্তব্যে ইউএন আইজিএফ বাংলাদেশের ফোকাল পয়েন্ট ও বিটিআরসি মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিম পারভেজ ডিজিটাল বিভক্তি কমিয়ে আনার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, বিটিআরসি এখন ফেসিলেটর হিসেবে কাজ করছে। ইন্টারনেটকে ছড়িয়ে দিতে পলিসি তৈরির পাশাপাশি দেশের তরুণদের জন্য বেশি কিছু করতে আলোর দিকে এগিয়ে এসেছে।