বাংলা ভাষার জাতীয় প্রমিত মান নিয়ে কোন আপস না করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সকল ক্ষেত্রসহ বাংলা ভাষার ডোমেইনে নাম লিখার ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার নিজস্বতা অক্ষুন্ন রাখার আহ্বান জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জনাব মোস্তাফা জব্বার।
বাংলা ডোমেইনের নামে বিদ্যমান জটিলতা নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের বিকল্প নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক ডোমেইন ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ সংস্থা – আইক্যান এর পূর্ণ সহযোগিতা আদায়ে জোরালো উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন।
মন্ত্রী বলেন, ১৯৮৭ সাল থেকে আমরা ইউনিকোড বাংলার প্রমিত মান ব্যবহার করার জন্য ইউনিকোড কনসোর্টিয়ামকে সম্মত করিয়েছি।
মন্ত্রী আজ মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) ঢাকায় বাংলাদেশ সচিবালয়ে বাংলা ভাষায় ডোমেইনে বাংলা নাম লিখার বিষয়ে আইক্যান বিষয়ক গভর্নমেন্টাল অ্যাডভাইজারি কমিটির আইক্যান প্রস্তাব পর্যালোচনা সংক্রান্ত বৈঠকে সংশ্লিষ্টদের এই নির্দেশ প্রদান করেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এর সভাপতিত্বে বৈঠকে বিটিআরসি মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহফুজুল করিম মজুমদার, বিসিসি পরিচালক মো: এনামুল কবির এবং বাংলা ভাষা উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. মো: জিয়াউদ্দিন অন্যান্যগণের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আমরা বুকের রক্ত দিয়েছি। দুঃখজনক হলেও সত্য ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম বাংলা লিপি উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মতামতকে অনকে ক্ষেত্রেই গৌণভাবে দেখছে। ফলে প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে অক্ষর ব্যবহারে আমরা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। অনেক ক্ষেত্রেই বাংলা ভাষাকে দেবনাগরীর মতো করে দেখা হয়েছে। বাংলাদেশের ভাষাবজ্ঞিানীসহ সাধারণ ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতা ও মতামতকে বাংলা ইউনিকোড লিপি উন্নয়নে বিবেচনায় রাখা অপরিহার্য বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
মন্ত্রী বাংলা ভাষাকে তথ্যপ্রযুক্তিতে সম্পৃক্ত করার বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরে বলেন, ‘বাংলা ভাষায় যখন ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম হয়, তখন বাংলাদেশ থেকে কোন মতামত না নেওয়ায় বাংলা ইউনিকোডে ত্রুটি রয়ে গেছে। বাংলা ভাষায় অস্তিত্বহীন এমন অনেক অক্ষর ইউনিকোডে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আবার বাংলা ভাষায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় তেমন অক্ষরকে প্রথমে কোডভূক্ত করা হয়নি ও পরে বিযুক্ত অবস্থায় কোডভূক্ত করা হয়।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বৈঠকে জানান, ‘আমাদের দু’তিনটা ইস্যু ছিল, যে জায়গাগুলোতে ইউনিকোডের সঙ্গে আমাদের সমস্যা। ২০১০ সাল থেকে সরকার ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম সদস্য। সরকার ডোমেইন সংস্থা আইক্যান এরও সদস্য। উভয় ক্ষেত্রেই বাংলা ভাষা বিষয়ক জটিলতা বিরাজ করছে যা নিরসনে মন্ত্রী নিজে এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দু‘টি বিভাগ সমন্বিতভাবে কাজ করছে। তিনি সংশ্লিষ্ট সকলকে দক্ষতা ও মেধা দিয়ে যৌক্তিকভাবে বাংলা ভাষার বিষয়গুলো উত্থাপন করতে বলেন।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, বাংলায় ‘ড়, ঢ়, য় এবং ৎ বর্ণ আছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন ভারতে দেবনাগরীতে নোক্তা বলে একটা জিনিস আছে, এই নোক্তা তাদের নানা কাজে লাগে। আমরা নোক্তার যুগ থেকে বিদ্যাসাগরের আমল থেকেই বেরিয়ে এসেছি এবং আমাদের ভাষায় নতুন চারটি অক্ষর যোগ করেছি। দেবনাগরী যেহেতু ফলো করা হয়েছে তাই আমাদের দাঁড়ি, ডাবল দাঁড়ি দেবনাগরীতে রয়ে গেছে বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী। আর আমাদের ড়, ঢ়, য় লিখতে ওরা নোক্তা ব্যবহার করে। আমাদের যে স্বরচিহ্নগুলো এগুলোকে আমরা কার চিহ্ন বলি আর ওরা বলে মাত্রা। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন আমরা কিন্তু আমাদের প্রমিত মান তৈরি করে ফেলেছি। কিন্তু ইউনিকোডে বাংলার এই সমস্যার কারণে আমরা যখন ডটবাংলায় বাংলা ডোমেইনে লিখতে যাচ্ছি তখন বাংলার ড়, ঢ়, য় এর প্রতিটি ক্যারেক্টারের জন্য দুটি করে কোড দিতে হয়। নোক্তা একটা আর ড একটা, নোক্তা একটা ঢ একটা-এমন করে। এটির পাশাপাশি সার্চ ইঞ্জিনেও বাংলায় তথ্য খুঁজতেও ঝামেলা তৈরি করছে।’
মন্ত্রী বলেন ‘ ২০১৮ সাল থেকে আমরা সার্বিক বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আসছি। ভবিষ্যতেও সেই গুরুত্ব অব্যাহত থাকবে।