আপেল, পাখির ডাক, মেঘ, জলধারা শব্দগুলোর ইংরেজি শব্দ এখন প্রযুক্তির দখলে চলে গেছে। শব্দগুলোর মূল অর্থগুলো এখন গৌণ হয়ে উঠেছে। তাই ইংরেজি অ্যাপেল (আপেল) এখন অভিজাত স্মার্টফোন ব্র্যান্ড।
টুইট (পাখির কিচিরমিচির ডাক)হয়ে উঠেছে সোশ্যাল মাইক্রোব্লগ। ক্লাউড (মেঘ) অনলাইনের ভার্চুয়াল আধার। স্ট্রিম (জলধারা) হয়ে গেছে তথ্যের প্রবাহ।
শব্দগুলো এখন স্রেফ নামপদ হয়ে উঠেছে। প্রযুক্তি দুনিয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম রয়েছে এসব নামে। তাই এখন সচরাচর শব্দগুলো এসব মাধ্যমকেই বোঝাচ্ছে।
ন্যাশনাল ট্রাস্ট স্ট্যাডির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কথোপকথনে এখন ‘টুইট’ বলতে পাখির ডাক বোঝানো হয় এমন সংখ্যা মাত্র ১ শতাংশ।
কিন্তু ১৯৯০ এর দশকে প্রতিদিনকার কথোপকথনে স্ট্রিম বলতে জলধারা বা প্রবাহ বোঝানো হত ১০০ ভাগ। যা বর্তমানে ৩৬ শতাংশে নেমে এসেছে।
সমীক্ষায় দেখা যায়, পরিবারে বয়স্ক মানুষেরা এ বিষয়ে অনেক উদ্বিগ্ন। কারণ বর্তমান প্রজন্ম এই শব্দের প্রাকৃতিক উৎস কি তা জানতে পারছে না।
লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা বিজ্ঞানী এবং এ বিষয়ে গবেষণাকারী ডাঃ রবিই লাভ বলেন, ‘প্রযুক্তির প্রভাবে বেশ কিছু নতুন শব্দ অভিধানে ঢুকে গেছে। যেগুলো বিমূর্ত এবং সহজে বোধগম্য নয়।’
কিন্তু একটি সহজ এবং ছোট্ট শব্দ অনেক সময় অনেক বেশি অর্থ বহন করে। এজন্য সেই শব্দের উৎস জানা থাকা উচিত। যেমন: স্ট্রিম শব্দের অর্থ জলধারা বা প্রবাহ। যখন প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে তা বোঝাচ্ছে তথ্যের প্রবাহ। যা যথার্থ অর্থ বহন করে।
ডাঃ লাভ বলেন, শব্দের ব্যবহার ও অর্থের পরিবর্তনে ভালো খারাপের কিছু নেই। শব্দ সবসময়- সময়, স্থানভেদে অর্থ পরিবর্তন হতে পারে।
শব্দের নতুন অর্থ নিয়ে আরেক বৈশিষ্ট্য হাজির করেছেন ব্র্যান্ডবিষয়ক এজেন্সি ভিভিড ক্রিয়েটিভের ম্যানেজিং ডিরেক্টর গ্যারি অ্যাকারি। তিনি বলছেন- প্রতিষ্ঠানের নাম হিসেবে প্রকৃতির যে শব্দগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে সেটা অ্যাপল, নর্থ ফেস, অ্যামাজন, নেকটার বা এটসেটরা, এর প্রতিটিই শোনার সঙ্গে সঙ্গে একটি ভালো অনুভূতি দেয়।
তবে, এর সবটাই যে মন ভালো করা তেমন নয়। ন্যাশনাল ট্রাস্ট-এর অন্যতম পরিচালক অ্যান্ডি বিয়ার বলেন, দেশজুড়েই তরুণ প্রজন্ম প্রকৃতি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। তিনি মনে করেন, কেবল প্রযুক্তি নয় শিশু-তরুণদের প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ ঘটাতে পারলেই কেবল হারানো বন্ধন আবার তৈরি হতে পারে। তার মতে, সেটি করতে হলে ফিরে যেতে হবে প্রকৃতির কাছেই।
তিনি আরো বলেন, বিশ্বব্যাপী গ্রাহকদের সঙ্গে কমিউনিকেশন করতে প্রতিষ্ঠানের জন্য এরকম নাম নির্ধারণ করা একটি সৃজনশীল প্রক্রিয়া। যা খুব সহজেই মানুষের মধ্যে একটি অর্থ তৈরি করতে পারে।