নিজেদের বিশাল ‘নিউ মুন রকেট’ নামের স্পেস লঞ্চ সিস্টেম (এসএলএস) উত্তোলন করার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে আমেরিকান স্পেস এজেন্সি নাসা। এসএলএস হল নাসার তৈরি করা সবচেয়ে শক্তিশালী যান এবং এটি আর্টেমিস প্রকল্পের ভিত্তিতে হবে যার লক্ষ্য ৫০ বছর আগের অ্যাপোলো মিশনের পর আবারও মানব জাতিকে চাঁদে নিয়ে যাওয়া। গবেষকদের দাবি, এই রকেটটি এ যাবতকালে নাসার সবচেয়ে শক্তিশালী রকেট। এর মাধ্যমে মানুষকে চাঁদে এবং অবশেষে মঙ্গলে নেওয়ার মিশন শুরু করবে যুক্তরাষ্ট্র।
ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, রকেটটি কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে স্থানীয় সময় সোমবার সকাল ৮টা ৩৩ মিনিটে উৎক্ষেপণ করা হবে। এর কাজ হবে পৃথিবী থেকে অনেক দূরে ওরিয়ন নামক একটি টেস্ট ক্যাপসুলকে চালিত করা। এই সম্পূর্ণ মিশন নাসার অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে লাইভ দেখা যাবে।
আর্টেমিস-১ নামের এই ছয় সপ্তাহের পরীক্ষামূলক ফ্লাইটের লক্ষ্য হল রকেটের ওপরে থাকা এসএলএস এবং ওরিয়ন ক্রু ক্যাপসুল পরীক্ষা করা। অদূর ভবিষ্যতে জাহাজটি মানুষের জন্য নিরাপদ কিনা তা দেখতে ক্যাপসুলটি চাঁদকে প্রদক্ষিণ করবে।
১৯৭২ সালের পর অর্থাৎ প্রায় পাঁচ দশক পর মানুষকে আবার চাঁদে পাঠানো (২০২৫ সালে) হচ্ছে। আর এটা করার প্রথম ধাপ হিসেবে আর্টেমিস-ওয়ান মিশন লঞ্চ করছে নাসা। এই মিশনে কোন মানুষ বা মহাকাশচারী থাকবে না। এর বদলে মহাকাশচারীদের সমান ভরের ডামী বা পুতুল থাকবে। এর পর আর্টেমিস -২ মিশনে মানুষ পাঠানো হবে চাঁদে। কিন্তু তারা চন্দ্র পৃষ্ঠে অবতরণ করবে না। শুধু চাঁদকে অরবিট করে পৃথিবীতে ফিরে আসবে। আর সর্বশেষ আর্টেমিস -৩ (২০২৫ সালে) মিশনে মানুষ ৭ তম বারের মতো চাঁদে অবতরণ করতে চলছে।
ওরিয়ন এই প্রদর্শনের জন্য অপ্রস্তুত। কিন্তু সমস্ত হার্ডওয়্যার যেমন কাজ করা উচিত তেমনটা অনুমান করে মহাকাশচারীরা ২০২৪ সালে শুরু হওয়া ভবিষ্যতের আরও জটিল সিরিজ মিশনের জন্য জাহাজে চড়বে।
নাসা মহাকাশচারী রেন্ডি ব্রেসনিক ব্যাখ্যা করে বলেছেন, ‘এই আর্টেমিস-১ ফ্লাইটের সঙ্গে আমরা যা কিছু করছি তা থেকে আর্টেমিস-২ ক্রুড মিশনের জন্য ঝুঁকি কমানোর জন্য আমরা কী প্রমাণ করতে পারি এবং আমরা কী প্রদর্শন করতে পারি তা লেন্সের মাধ্যমে আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।’
ইউএস ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসসহ কয়েক হাজার মানুষ এটি দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন। কেপ ক্যানাভেরালের আশেপাশের হোটেলগুলি ইভেন্টের জন্য ইতোমধ্যে বুক করা হয়েছে৷
নাসার প্রশাসক বিল নেলসন শনিবার বলেছিলেন, ‘এই মিশনটি অনেক লোকের অনেক আশা এবং স্বপ্ন নিয়ে যায় এবং আমরা এখন আর্টেমিস প্রজন্ম।’
মহাকাশচারীদের পরিবর্তে রকেটটিতে কম্পন, ত্বরণ এবং বিকিরণ পরিমাপ করার জন্য তিনটি টেস্ট ডামি ক্যাপসুলে আটকে দেওয়া হয় যা গভীর মহাকাশে মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় বিপদগুলির মধ্যে একটি।
একটি ক্যাপসুলে ১ হাজারের বেশি সেন্সর রয়েছে। আর্টেমিস -৩ মিশন সফল করার জন্যই এই আর্টেমিস -১ মিশন লঞ্চ করা হচ্ছে। বলা যেতে পারে, এটি একটি টেষ্টিং মিশন। এই আর্টেমিস মিশন গুলো সফল হলে নাসা মানুষকে মঙ্গলে অভিযান এ পাঠানো কাজ শুরু করবে।