কাগজ আর অত্যন্ত হালকা ফোমবোর্ড দিয়ে চারটি প্রোপেলারযুক্ত দৈত্যাকার ড্রোন বানিয়ে তাক লাগালো যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি। এই কোয়াডকপ্টারটির এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের দৈর্ঘ্য ২১ ফুট বা ৬ দশমিক ৪ মিটার। ওজন সাড়ে ২৪ কিলোগ্রাম, যা ব্রিটিশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের বেঁধে দেওয়া সীমার চেয়ে ৫০০ গ্রাম কম।
উদ্ভাবনী নকশার ড্রোনটির চারটি বাহু ফাঁপা বক্স কাঠামোর একটি সিরিজ দিয়ে গঠিত। চাইলেই এগুলো খুলে নিয়ে যেকোনো স্থানে নিয়ে যাওয়া যাবে। এখন পর্যন্ত এ ধরণের আনক্রুড কোয়াডকপ্টার (চারটি রোটর) এর কোনো রেকর্ড নেই।
উদ্ভাবকদের দাবি, আজ অবধি তৈরি হওয়া বিশ্বের বৃহত্তম কোয়াডকপ্টার এটি। যানটির নকশা ও নির্মাণের নেতৃত্ব দেয়া ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষণা প্রকৌশলী ড্যান কোনিং বলেছেন, “ব্যাপক পটভূমি গবেষণার পরে আমরা এই নকশাটি করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতে পারি যে আমরা বিশ্বের বৃহত্তম কোয়াডকপ্টার ড্রোন তৈরি করেছি।”
যদিও এই রেকর্ডের কোনো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির কথা জানা যায়নি।
তবে জায়ান্ট ফোমবোর্ড কোয়াডকপ্টার (জিএফকিউ) নামের ড্রোনটিকে স্বয়ংক্রিয়ভাবেও ওড়ানো সম্ভব হয়েছে। গত ৫ জুলাইয়ে এর প্রথম উড্ডয়ন সম্পন্ন হয় স্নোডোনিয়া অ্যারোস্পেস সেন্টারের একটি হ্যাঙারের ভেতর। এর পাইলট ছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটির অ্যারোস্পেস সিস্টেমের প্রভাষক কিয়েরান। তিনি জানান, বড় ধরনের কোনো সমস্যা ছাড়াই ড্রোনটির প্রথম উড্ডয়ন সফল হয়েছিল।
দৈত্যাকার ড্রোনটির মূল কাঠামো তৈরি হয়েছে ফোমবোর্ডের কয়েকটি শিট দিয়ে। এর মধ্যে স্যান্ডউইচের মতো করে বসানো হয়েছে কাগজ।
কার্বন ফাইবারের চেয়ে বেশি পরিবেশবান্ধব, হালকা ওজন এবং কম খরচে ড্রোন কাঠামো তৈরির লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের একটি প্রকল্প হিসেবে প্রথম যাত্রা শুরু হয়েছিল জিএফকিউর।
ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক বিল ক্রোথার বলেন, এখন এই নকশার সাহায্যে আপনি কৌশলগতভাবে কয়েকটি কাগজের টুকরো দিয়ে ২৫ কেজির আকাশযান ধরে রেখেছেন।
দলটি এবার দৈত্যাকার এই ড্রোনের আকার আরও বড় করার চেষ্টা করছে।
কম খরচের বিকল্প উপাদান ব্যবহার করে সাধারণ কার্বন ফাইবারের চেয়ে বেশি পরিবেশ বান্ধব হালকা ওজনের মহাকাশ কাঠামোর নকশার কৌতুহল থেকেই এই প্রকল্পটি গ্রহণ করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। উদ্দেশ্য ছিলো শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতাকে অনুপ্রাণিত করার। শিক্ষার্থীদের নিয়ে এই প্রকল্পে কার্বন ফাইবারের বিপরীতে, কম ঘনত্বের শীট উপাদানগুলি অত্যন্ত পুনর্ব্যবহারযোগ্য বা এমনকি কম্পোস্টযোগ্য উপাদান নিয়ে শুরু হয় এই কার্যক্রম। এখন গবেষকরা আশা করছেন, তাদের এই নকশা পরবর্তী প্রজন্মকে সম্পূর্ণ নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে স্থায়িত্ব সম্পর্কে চিন্তা করতে অনুপ্রাণিত করবে।
যানটির নকশা ও নির্মাণের নেতৃত্ব দেয়া ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষণা প্রকৌশলী ড্যান কোনিং বলেন, “ফোমবোর্ড কাজ করার জন্য একটি আকর্ষণীয় উপাদান, সঠিক উপায়ে ব্যবহার করে আমরা জটিল মহাকাশ কাঠামো তৈরি করতে পারি; যেখানে প্রতিটি উপাদান নকশা করা হয়। শুধুমাত্র যতটা শক্তিশালী হতে হবে – এখানে ওভার-ইঞ্জিনিয়ারিং এর কোন জায়গা নেই।
অত্যাধুনিক আকাশপ্রযুক্তির তুলনায় কার্ডবোর্ড জাতীয় উপাদান দিয়ে ড্রোন তৈরিকে অনেকের কাছেই ছেলেখেলা মনে হতে পারে। তবে এটি কিন্তু বাস্তবিক এবং বিশাল ব্যবসা।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে অস্ট্রেলীয় প্রতিষ্ঠান সাইপ্যাকের তৈরি ফিক্সড-উইং কার্ডবোর্ড ড্রোন ব্যবহার করছে ইউক্রেন। গত মার্চে প্রতিষ্ঠানটি স্বীকার করেছে, প্রতি মাসে ইউক্রেনকে শত শত ড্রোন সরবরাহ করছে তারা।
এসব ড্রোনের অন্যতম সুবিধা হলো, সৈন্যরা এগুলো সহজেই সংযুক্ত করতে পারেন এবং কার্ডবোর্ড দিয়ে তৈরি হওয়ায় ড্রোনগুলো রাডারে ধরা পড়ার আশঙ্কাও থাকে কম।