কথায় বলে-সময় আর নদীর স্রোত কারো জন্যই অপেক্ষা করে না। কিন্তু নদী কিংবা চর নয়; বাঙাল দামালের চোখ এখন মহাকাশে।
এবার কেউ চোখ কুঁচকাতে পারেন। তবে এটাই বাস্তবতা। যাপিত সময়ে অন্ন-বস্ত্র; খাদ্য-শিক্ষা ও চিকিৎসা- মৌলিক এই ৫ অধিকারের মেরুদণ্ড হয়ে উঠেছে প্রযুক্তি। মানুষের শিরায় শিরায় পৌঁছে যাচ্ছে এআই।
এমন পরিস্থিতিতে দেড় বছরের প্রচেষ্টায় রবিবার থেকে শুরু হলো মোফা-এটুআই এআই ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ ২০২৩। কোটি টাকা পুরস্কারের এই প্রতিযোগিতা হবে তিন ধাপে। প্রোটোটাইপ, পাইলট ও ইমপ্লিমেন্টেশন। দেবে। নিউরাল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রচুর পরিমাণে অসংগঠিত ডাটা থেকে সময়োপযোগী এবং সঠিক তথ্য প্রদান করে জ্ঞাত সিদ্ধান্ত গ্রহণকে সমর্থন করবে। বিভিন্ন মিশনের নথি থেকে মূল তথ্য বের করা এবং বিশ্লেষণ করার জন্য একটি স্বয়ংক্রিয় সমাধান এনে দেবে, যা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জ্ঞাত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারে দক্ষতা, নির্ভুলতা এবং মাপযোগ্যতা উন্নত করতে পারবে। এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে এই লিংকে ক্লিক করে উদ্ভাবনী আইডিয়া জমা দেওয়া যাবে আগামী ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত।
রাজধানীর সেগুনবাগিচার পরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে একইস অনুষ্ঠানে উদ্বোধন করা হলো একটি ইনোভেশন কর্নার- আইল্যাব। ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এটি উদ্বেধান করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল কালাম আব্দুল মোমেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি অনুবিভাগ এবং আইসিটি অনুবিভাগের মহাপরিচালক ড. সৈয়দ মুনতাসির মামুনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এটুআই নীতি উপদেষ্টা আনীর চৌধুরী। বক্তব্যে তিনি কৃষি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের মতো সেবায় কীভাবে চ্যাপজিপিটি কাজে লাগানো যায় কিংবা খাদ্য সুরক্ষায় ভিশন প্রসেসিং; ড্রোনের মাধ্যমে বিদ্যুত সঞ্চালন লাইন পর্যবেক্ষণ করা যায় এমন ধারণার ওপর আলোকপাত করেন। এমন ১২ হাজারের মতো আইডিয়া এটুআই এর কাছে রয়েছে বলে জানান তিনি।
অ্যাডভাইজর আনীর চৌধুরী বলেন, ‘এআই ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ ২০২৩’ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে দেশের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এবিষয়ে উদ্ভাবনের সাথে থাকার সুযোগ পাবেন। যেখান থেকে অনেকগুলো উদ্ভাবনী আইডিয়া বেড়িয়ে আসবে বলে আশা করা যাচ্ছে, যা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিশন নথির কার্যক্রম সহজ করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। পাশাপাশি, শুধু একটা প্রজেক্ট প্রকিউমেন্ট এর উপর নির্ভর না করে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বিভিন্ন পর্যায়ের বুটক্যাম্প, গ্রুমিং সেশন ও গবেষণার ফলে বেশকিছু গতিশীল ও ব্যবহারবান্ধব সমাধান তৈরি হবে এবং তা কর্তৃপক্ষের কাজ সহজ করতে অবদান রাখবে বলে আশা রাখি।’
কীভাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এআই সেবা দিয়ে বাংলাদেশকে বিশ্বময় প্রতিষ্ঠিত করা হবে সেই আর্টিফিশিয়াল নিউরাল নেটওয়ার্ক এর ওপর আলোকপাত করেন এটুআই টেকনোলজি লিড সোহেল রানা। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন মেডট্রনিক সিইও ওমর ইশরাক এবং ইউএনডিপি আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং এটুআই-এর মধ্যে এই যৌথ উদ্যোগের প্রশংসা করে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইউএনডিপি বাংলাদেশ-এর আবাসিক প্রতিনিধি জনাব স্টেফান লিলার বলেন, ‘এই অংশীদারিত্ব একটি দুর্দান্ত উদাহরণ, আমরা কীভাবে উদ্ভাবনের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সমস্যা সমাধান করতে একসাথে কাজ করতে পারি।’
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে তৈরি সাশ্রয়ী একটি সার্ভিলেন্স ড্রোন দেখানো হয় যেটি ৩০০ গ্রাম ওজনের বস্তু বহন করে ১.৮ কোলিমিটার পাড়ি দিতে পারে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সভাপতিত্বে মোফা-এটুআই এআই প্রতিযোগিতার এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন আইসিটি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন।
মোঃ সামসুল আরেফিন বলেন, কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্ক আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে ডাটাভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম ব্যবহার করতে পারলে ভবিষ্যতে কূটনৈতিক ডাটা বিশ্লেষণে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে যাবে। বিশ্বব্যাপী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন মিশনের সাথে যোগাযোগ প্রক্রিয়ায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করা গেলে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হবে এবং জাতীয় স্বার্থের ক্ষেত্রে বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা আরো সহজ হবে।
পররাষ্ট্র সচিব রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন তার বক্তব্যে জনসেবা প্রদানের লক্ষ্যে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারের উপর জোর দেন। ইনোভেশন ল্যাব এবং এআই চ্যালেঞ্জ ফান্ড পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইসিটি সক্ষমতাকে শক্তিশালী করবে এবং ভবিষ্যত বিশ্বের প্রযুক্তি-সক্ষমতার সাথে সরাসরি সংযুক্ত করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ-এর প্রক্রিয়া সম্পর্কে উপস্থাপনা প্রদান করেন এটুআই ইনোভেশন ফান্ড এক্সপার্ট নাঈম আশরাফী । অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও এটুআই-এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ এবং গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বিদেশস্থ ৮১টি বাংলাদেশ দূতাবাস অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যোগদান করেন।