সাইবার অপরাধের পরিধি পুলিশি চোখে দেখা ‘ইলেক্ট্রিক ক্রাইম’ নিয়ে আলোচনা করেন পুলিশের সাইবার নিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার নাজমুল ইসলাম। ‘মোবাইল নম্বর স্পুফ’ করে একটি বেসরকারি ব্যাংকে জালিয়াতি এবং ডিএনএস পয়জনিং বিষয়ে নিজের তদন্ত অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন তিনি। এ নিয়ে ব্যবহারকারীদের সচেতন হয়ে কোনো ফাঁদে পা না দেয়ার আহ্বান জানান নাজমুল ইসলাম। বলেন, আত্মসুরক্ষায় নিজেরে সম্পদের সুরক্ষা নিজেকেই করতে হবে। এজন্য অনলাইনে ‘ডোন্ট সেভ’ মেনে চলুন। অভিভাবকরা প্যারেন্টাল কন্ট্রোল মেনে চলুন।
সাইবার অপরাধ তদন্ত ও অপরাধীদের ধরতে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসটেন্স ট্রিটি বা ‘এমল্যাট ( MLAT) দরকার’ বলেও সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। তিনি বলেন, উন্নত দেশের সঙ্গে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসটেন্স ট্রিটির (এমএলএটি) বাস্তবায়ন করা হলে দেশে বসে বিদেশী অবস্থান করা অপরাধীদের সনাক্ত ও গ্রেপ্তার সহজ হবে।
এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বহুপাক্ষিক এই সমঝোতা চুক্তিতে গুরুত্বারোপ করেন সাইবার বন্ধু হিসেবে পরিচিত এই পুলিশ কর্মকর্তা।
কলেজগামী শিক্ষার্থীরা ফিশিং, হ্যাকিং এবং সাইবার পর্নোগ্রাফি শিকার বেশি হচ্ছে জানিয়ে অতিরিক্ত উপ—পুলিশ কমিশনার নাজমুল ইসলাম বলেন, বিগত বছরগুলোতে মোবাইলে আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত ঘটনায় অপরাধের হার বেশি হলেও বর্তমানে তা অনেকাংশ কমে গেছে।
তিনি আরো বলেন, মোবাইল স্ফুফিং তথা মোবাইল নাম্বার ক্লোনের মাধ্যমে সন্দেহজনক কোনো কল আসলে কল কেটে দিয়ে কলব্যাক করলে মোবাইল স্ফুফিং প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
বৃহস্পতিবার বিটিআরসি সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত কর্মশালা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফ জব্বার।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদারের সভাপতিত্বে কর্মশালা পরবর্তী আলোচনা সভা পরিচালনা করেন সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের সভাপতি কাজী মোস্তাফিজুর রহমান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিটিআরসি’র সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ নাসিম পারভেজ।
এসময় আলোচনায় অংশ নেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’র কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. তৌহিদ ভূঁইয়া।
সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন বিটিআরসি ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায়। বক্তব্যে তরুণ সমাজ যাতে সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতন হয়, সে বিষয়ে অধিক প্রচার প্রচারণা ও কর্মশালা আয়োজনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. তৌহিদ ভূঁইয়া বলেন, দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠানসমূহ সাইবার আক্রমণের সম্মুখিন হলে সুনাম ক্ষুন্ন হওয়ার ভয়ে ঘটনাটি গোপন রাখে, ফলে সমস্যাগুলো চিহ্নিত ও সমাধানে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করা যায় না। ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সিকে এ সংক্রান্ত বিষয়ে এগিয়ে আসার পাশাপাশি সাইবার নিরাপত্তায় দক্ষ জনশক্তি তৈরি ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
কপি অ্যাপলিকেশন বা সফটওয়্যার ব্যবহারের কারণে ‘সাইবার’ ঝুঁকি বাড়ে বলে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান সাবাইর সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ (ডিএসএ) পরিচালক তারেক বরকতুল্লাহ।
বাংলাদেশে পাইরেটেড সফটওয়্যার বেশি ব্যবহার হওয়ায় সাইবার আক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বড় বড় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সাইবার সুরক্ষার বিষয়ে কৃচ্ছ্রতা সাধরণ করেন। তারা পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করে। তাই আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোতে তাদের প্রয়োজনের বাইরের কোনো সফটওয়্যার ইনস্টল করা বন্ধ রাখতে হবে। আক্রান্তদের ৯৯৯-৮ নম্বরে ফোন করলো সরাসরি পুলিশে অভিযোগ করতে পারবেন।
আগামীতে সক্ষম ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে নিজস্ব প্রযুক্তি ও প্রযুক্তি সংক্রান্ত গবেষণা ও উন্নয়নের জোর দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, বিদেশি প্রযুক্তির অনুকরণ কমিয়ে নিজস্ব সক্ষমতা বাড়ানো সাইবার সিকিউরিটির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাইবার সুরক্ষায় সাইবার ইনসিডেন্ট রিসপন্স টিমের (সিআইআরটি) পরিধি প্রতিটি সেক্টরে বাড়ানোর কাজ চলছে।
এর আগে দুই ঘণ্টাব্যাপী কর্মশালায় সারাদেশ থেকে আসা শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় তরুণকে সাইবার সুরক্ষা ‘কী, কেন, কীভাবে’ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেন সাইবার অপরাধ ও সাইবার ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ মোঃ মেহেদী হাসান।
অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব মোঃ খলিলুর রহমান, বিটিআরসি’র ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড অপারেশন্স বিভাগের কমিশনার প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ, লীগ্যাল এন্ড লাইসেন্সিং বিভাগের কমিশনার আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন, প্রশাসন বিভাগের মহাপরিচালক মো: দেলোয়ার হোসাইন, স্পেকক্ট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জুয়েল, লিগ্যাল এন্ড লাইসেন্সিং বিভাগের মহাপরিচালক আশীষ কুমার কুন্ডু, সচিব (বিটিআরসি) মো: নুরুল হাফিজ এবং যুব কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।