২০৪১ সালের তরুণ সমাজকে উন্নত দেশ গড়ার কারিগর অ্যাখ্যা দিয়ে তাদের জন্য সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘(১৯৯৬ সালে) সরকারে আসার পর আমাদের লক্ষ্যই ছিল, দেশের যুব সমাজকে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। তখনকার যুগে কেউ কম্পিউটার শিখতো না, কম্পিউটার ছিলই না। দুই-চারটা অফিসে হয়তো ডেস্কটপ সাজানো থাকতো, কিন্তু কেউ ব্যবহার করতো না। আমিই উদ্যোগ নিয়েছিলাম যে, প্রথমেই প্রযুক্তি শিক্ষা দিতে হবে। কারণ সেসময় আমাদের বিজ্ঞান শিক্ষা বা কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে মাত্র সাত শতাংশ ছেলেমেয়ে সম্পৃক্ত ছিল। যে কারণে আমি ১২টা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্ত নেই। কারিগরি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেই।’
সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য ১১ জন ব্যক্তিকে ‘শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। অনলাইনে বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়। কাজেই অনলাইনে ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি, ফ্রিল্যান্সিং নানা সুযোগ সুবিধা আমরা সৃষ্টি করেছি। সাথে সাথে সম্পুর্ণ প্রযুক্তি নির্ভর চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযুক্ত মানব শক্তি গড়ে তুলতে উদ্যোগ নিয়েছি। প্রত্যেকটি উপজেলায় শেখ জামাল যুব প্রশিক্ষণ ও বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোহ নিয়েছি। আমাদের যুবসমাজই পারবে দেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে। আমাদের তরুণ সমাজই হবে সেই ’৪১ এর কারিগর।’
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য প্রয়োজন যুগোপযোগী যুবসমাজ। পৃথিবীর অনেক দেশ রয়েছে যেখানে প্রবীণদের বসবাস বেশি। আমরা সে অবস্থায় যেতে চাই না। আমাদের তরুণ সমাজকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে চাই। এর জন্য বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেই নানা উদ্যোগ নিয়েছে যেখান থেকে তারা নানা সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করতে পারে।
ইতোমধ্যেই সরকার ৩৬ লাখ ৮৩ হাজার ৩৬১ জনকে দক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ দিয়েছে জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, এর মধ্যে ১ লাখ জন আত্মকর্মসংস্থান করে স্বাবলম্বি হয়েছেন। এছাড়াও ন্যাশনাল সার্ভিস চালু করে সেখানে ট্রেনিং দিচ্ছি। বঙ্গবন্ধু যুব ঋণ কার্ক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির অধীনে ২ লাখ ৩৫ হাজার শিক্ষিত যুব নর-নারীকে অস্থায়ী কর্মসংস্থান করেছি। ৫ লাখ প্রশিক্ষিত যুবককে ১ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা যুব ঋণ দেয়া হয়েছে। যুবদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে কর্মসংস্থান ব্যাংক এবং এনআরবিসি ব্যাংকে মাধ্যমে এমওইউ করা হয়েছে। এখান থেকে প্রশিক্ষিত যুবরা ৫-১০ লাখ টাকা স্টার্টআপ ক্যাপিটাল ঋণ সুবিধা পাবেন।
রবিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানী ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল তাদের হাতে সম্মাননা তুলে দেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন। পুরস্কারপ্রাপ্ত ১১ জনের প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা এবং সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়।
এরমধ্যে শিক্ষা, বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি ও কারিগরি ক্যাটাগরিতে অসাধারণ অবদানের জন্য এবছর সম্মাননা পেয়েছেন জাগো ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক করভি রাকসান্দ দ্রুব এবং পেন ফাউন্ডেশনের মেঘনা খাতুন। আর যুব উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান ক্যাটাগরিতে অসাধারণ অবদানের জন্য শরীয়তপুরের বাসিন্দা মাসুম আলম এবং নেত্রকোণার বাসিন্দা কামরুন নাহার লিপি সম্মাননা পেয়েছেন।
দেশপ্রেম, বীরত্ব ও সাহসিকতার ক্ষেত্রে অবদানের জন্য সম্মাননা পেয়েছেন, রাঙ্গামাটির বাসিন্দা এন কে এম মুন্না তালুকদার এবং লক্ষ্মীপুরের বাসিন্দা রাজু আহমেদ। জ্যেষ্ঠদের প্রতি আদর্শ সেবা বা সমাজকল্যাণে অবদানের জন্য বরিশালের বাসিন্দা মিল্টন সমাদ্দার এবং সুনামগঞ্জের বাসিন্দা কাস্মিরুল হক সম্মাননা পেয়েছেন। আর ক্রীড়া, কলা (চারু ও কারু) ও সংস্কৃতিতে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য সম্মাননা পেয়েছেন জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক শেরপুরের মেয়ে নিগার সুলতানা জ্যোতি এবং রাজশাহীর বাসিন্দা মোস্তফা সরকার।