কাগজ ভিত্তিক প্রথাগত শিক্ষা ভেঙ্গে ডিজিটাল ফরম্যাটে যাত্রা করতে সকলের প্রতি তাগিদ দিয়েছেন ডাক ও টিলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। বলেছেন, মৃত কাগজের চেয়ে শিক্ষার্থীরা যদি জীবন্ত হরফের সঙ্গে ইন্টারঅ্যাকশন করতে পারে তবেই ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থার সুফল মিলবে।
মুন্সিগঞ্জের সদরের জাজিরা কুঞ্জনগর ও বাঘাইকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডিজিটাল কন্টেন্ট ব্যবহার করে পাঠদান প্রক্রিয়া উদ্বোধন করে শ্রেণীকক্ষ পরিদর্শনের সময় বুধবার বিকেলে এই তাগিদ দিয়েছেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর কোনো উন্নত দেশ এখন কাগজ নির্ভর লেখাপড়ার ওপর নেই। কিন্তু আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা যে কাগজ ভিত্তিক ট্র্যাডিশনাল ফরম্যাটে ছিলো সে ফরম্যাটেই আছে। আমরা এ ফরম্যাট ভাঙবো। সেজন্য, ইতোমধ্যেই আমরা শিশু-পঞ্চম শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ের ডিজিটাল কনন্টেন্ট তৈরি করেছি। এটা আমাদের কাছে সবচেয়ে সহজ মনে হয়েছে।
দুর্গম অঞ্চলেও টেলিকিমিউনিকেশন সুবিধা পৌঁছে দেয়ার পরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি আরো বলেন, আমরা দুর্গম হাওর ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে টেলিকম নেটওয়ার্ক গড়ে তুলছি। ইন্টারনেট দিচ্ছি। পাশাপাশি ডিজিটাল কন্টেন্ট তৈরি করছি। এর মাধ্যমে আমরা ডিজিটাল ফরম্যাটে শিক্ষা বিস্তারে সহায়তা করতে পারি। আমরা এখন ৬৫০টি প্রাইমারি স্কুল এবং ২৮টি পাড়া কেন্দ্রগুলোতে ডিজিটাল কন্টেন্ট দিয়ে ডিজিটাল ক্লাস রুম তৈরি করছি। যেখানে বই ছাড়াও লেখাপড়া করানো সম্ভব হবে।
টেলিযোগোযোগ শিক্ষা ব্যবস্থায় দারুণ সুযোগ সৃষ্টি করছে উল্লেখ করে বিজয় ডিজটাল জনক বলেন, শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও স্কুল যখন ডিজিটাল কন্টেন্টের মাধ্যমে উপকৃত হয় তখন আমার ৩৫ বছরের লড়াইয়ের ফল পাই। টেলিভিশন, কম্পিউটার বা ল্যাপটপ সহজলভ্য করার পাশাপাশি এর মাধ্যমে শিক্ষা বিস্তারে ডিজিটাল কন্টেন্টের ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। কেননা একজন শিক্ষার্থী যদি কাগজের বইয়ের মৃত হরফের বদলে একটি জীবন্ত ছবি দেখতে পায়, যদি একটি চলমান ছবি দেখতে পায়, অক্ষর যদি কথা বলে এবং তার সঙ্গে সে যদি ইন্টরঅ্যাকশন করতে পারে তাহলে সেটা হবে অসাধারণ একটি কাজ।
ডিজিটাল কনটেন্টের মাধ্যমে প্রাথমিক পাইলটিং স্তরের শিক্ষার্থীদের পাঠদান বিষয়ে শিক্ষক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রাথমিক স্তর থেকে শিক্ষার ডিজিটাল রুপান্তরের কার্যক্রম শেষ স্তুরে রয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরির উদ্যোগ বাস্তবায়নে তার ১৩ বছরের অক্লান্ত লড়াইয়ের সহযোদ্ধা বিজয় ডিজিটাল-এর সিইও জেসমিন জুইসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি মন্ত্রী গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। শিশুদেরকে পোগ্রামার বানানোর পরিকল্পনা কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন- আমরা প্রথমবারের মতো স্কুলে শিশুদেরকে পোগ্রামিং শেখানোর জন্য একটি সফটওয়্যারও দিচ্ছি। এটা সহজেই তাদের পক্ষে আয়ত্ত করা সম্ভব। অনুষ্ঠানে বিজয় ডিজিটালের প্রধান নর্বিাহি জেসমিন জুই বলেন ১৩ বছর ধরে দিনে রাতে শ্রম দিয়ে আজ যখন শিশুদের মুখে হাসি দেখছেন তখন সকল কষ্ট আনন্দে পরিণত হয়েছে। স্ত্রানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা এ্ সফরকালে উপস্থিত ছিলেন। তারা সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়কে এই কর্মসূচির আওতায় আনার দাবি জানান।
অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক মো. আব্দুল ওহাব, বিজয় ডিজিটাল এর সিইও জেসমিন জুই, মুন্সীগঞ্জের এডিসি শিক্ষা মো: কামরুল ইসলাম খান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিনহাজুল ইসলাম , সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসেন মো: আল জুনায়েদ, উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবেৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
জেসমিন জুঁই বলেন শিশুদের জন্য মান সম্মত একটি ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি করা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরির সে চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করা অনেক কঠিন কাজ। তার পরেও আমরা থেমে থাকিনি। তিনি ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরিতে মন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টার বিবরণ তুলে ধরেন।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরের বাস্তবায়নাধীন এই প্রকল্পের বাইরে তার অধীন যে সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ডিভাইস আছে সেগুলোর জন্য বিজয় ডিজিটাল উপাত্ত পাওয়ার জন্য অনুরোধ ব্যক্ত করেন। মন্ত্রী এ বিষ্যয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের আশ্বাস ব্যক্ত করেন। ডিজিটাল কনটেন্টের মাধ্যমে পাঠদানে সংশ্লিষ্টদের সুবিধা এবং অসুবিধা সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করাই এই পরিদর্শনের লক্ষ্য।
পরে সন্ধ্যায় জেলার সিরাজদি খান উপজেলা ডাকঘর ও বিকারীবাজার সাব পোস্ট অফিস ভবনের পুণনির্মাণ কাজ পরিদর্শন করেন।