জাতীয় ফুল ‘শাপলা’র অনুকরণে বুড়িগঙ্গার তীরে কেরানীগঞ্জের ঝিলমিল সংলগ্ন এলকায় হচ্ছে ‘আইটি পার্ক’। মিত্রদেশ ভারতের অর্থায়নে এই পার্কটি নির্মাণ করছে দেশটির ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এল এনটি।
মঙ্গলবার এই পার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সভাপতিত্বে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জ্বালানী ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় দূত বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে ভারতের ঋণ সহায়তায় জেলা পর্যায়ে ১২টি হাইটেক পার্ক স্থাপন প্রকল্পের অধীনে কেরানীগঞ্জের আইটি পার্কটি ২০২৩ সালের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে জানান হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকর্ণ কুমার ঘোষ।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকার জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন এবং উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদসহ স্থানীয় নেতারা।
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের আগে পরিকল্পনাধীন আইটি পার্ক ভবনের সামনে বৃক্ষ রোপন করেন দুই প্রতিমন্ত্রী ও রাষ্ট্রদূত। বক্তব্য পর্বের আগে পরিবেশন করা হয় বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় সঙ্গীত।
বাংলা ও ইংরেজির মিশ্রণে দেয়া বক্তব্যে ‘এই প্রকল্পটি আইটি সেক্টরে ভারত-বাংলাদেশ সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এবং দুই দেশের অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব আরো উঁচুতে নিয়ে যাবে’ বলে প্রত্যাশা করেন বিক্রম কুমার দোরাই স্বামী। তিনি বলেন, সামনে এগিয়ে যেতে ভবিষ্যতমুখী এই প্রকল্পটি একটি অনন্য উদ্যোগ। রমজানের মধ্যেও এই প্রকল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় আমি সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানাই। ডিজিটাল ব্যবসায় ক্ষেত্রে এটি তরুণ বাংলাদেশের জন্য একটি হাব হিসেবে গড়ে উঠবে বলেই বিশ্বাস রাখি। আশা করি আমি অবসরে যাওয়ার পরও কয়েক দফা এই পার্ক দেখতে আসবো।
তার বক্তব্য দেয়ার পরই লার্নিং অ্যান্ড আর্নি প্রকল্পের বিজয়ীদের হাতে ল্যাপটপ তুলে দেয়া হয়। অতিথিদের কাছ থেকে একে একে ল্যাপটপ গ্রেহণ করেন হাফিজুর রহমান, শরীফ মাহমুদ, চিন্ময় গাইন, হানিফ মিয়া, জান্নাতুল মাওয়া লক্ষ্মী, মোঃ মোশাররফ হোসেন, জান্নাতুল ইসলাম তানিয়া, ফারহানা আক্তার লোপা, পান্না ফাতেমা, রাবেয়া আক্তার, প্রিয়াঙ্কা আক্তার রুপালী, মোহনা আক্তার লিসা এবং সানিয়া মিজান।
এরপর সভাপতির বক্তব্যে জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, চার একর জায়গায় আমরা এখানে ২০০ কোটি টাকে একটি সাত তলা মাল্টিট্যানেন্ট বিল্ডিং করবো। যেখানে বিপিও ফ্লোর, প্লাগ ইন প্লে, সাইবার ক্যাফে, স্টার্টআপ ফ্লোর, ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবিশন এবং গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা ও ২৫০ আসনের একটি সিনে প্লেক্স থাকবে। সবমিলিয়ে এখানে এমন একটি কর্মপরিবেশ ও বিনোদন কেন্দ্র তৈরি হবে যা কেরানীগঞ্জ বাংলাদেশে রোল মডেলে পরিণত হবে।
আরো বেশি কর্মসংস্থান তৈরিতে এই এলাকায় আরো ৫ একর জমি পেলে সেখানে একটি ৪১ তলা বিল্ডিং করার পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, হসপিটালিটি সেন্টার, টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার সবই এখানে হবে। পাশাপাশি উদ্ভাবনী স্মার্ট বাংলাদেশ রূপকল্পনা বাস্তবায়নে আমাদের স্মার্ট প্রজন্ম প্রযুক্তি ও তারুণ্যের মেধার সমন্বয়ে একটি চমৎকার নলেজ বেজড ইকোনোমি গড়ে তুলবে; এই আইটি পার্কগুলোই হবে যার ভবিষ্যত ঠিকানা।
পলক আরো বলেন, তারুণ্যের মেধা ও প্রযুক্তির শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশের তরুণরা চাকরি করবে না চাকরির ক্ষেত্র তৈরি করবে উল্লেখ করে বলেন দেশের তরুণদের উদ্যোক্তা ও আত্মনির্ভরশীল হতে পারে সেজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক মাননীয় উপদেষ্টা জনাব সজীব ওয়াজেদ জয়ের ব্রেন চাইল্ড আইটি /হাইটেক পার্ক, শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার, স্কুল অব ফিউচার, ডিজিটাল এডুটেইনমেন্ট সেন্টার সহ দেশে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামীতে আমাদের মেধাবী তরুণরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রযুক্তি রোবটিক্স, আইওটি, সাইবার সিকিউরিটি টুলস তৈরি করে বিদেশে রপ্তানি করবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে নসরুল হামিদ বিপু বলেন, হাইটেক পার্ক ডিজিটাল বাংলাদেশের ব্যাকবোন। পোশাক শিল্পের ডাইং ও সুতার কারখানার মতো দেশের বিভিন্ন উপজেলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দূরদৃষ্টিতে এই হাইটেক পার্ক হচ্ছে। এই পার্কগুলো স্থানীয়দের জীবন মানের উন্নতি হবে। কেননা আমরা যেখানে নৌকা দিয়ে চলছি এখন সেখানে ডিজিটাল পার্ক হেবে! এর মাধ্যমে আইটি ইন্ডাস্ট্রিতেও এখন কেরানীগঞ্জবাসীর অবদান রাখার ক্ষেত্র প্রস্তুত হলো। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণার সময় অনেকেই বিদ্রুপ করেছে। অথচ এখন এই ডিজিটাল বাংলাদেশ কোনো স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা। মুজিব বর্ষে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশের শতভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে দিয়েছি। কেরানীগঞ্জে হাই-টেক পার্ক স্থাপন সম্পন্ন হলে এই এলাকার ছেলেরা গতানুগতিক ব্যবসা-বাণিজ্যর বদলে অনলাইনে কাজ করে ডলার উপার্জন করতে পারবে যা এই দেশের আর্থ-সামাজিক পরিবেশের ব্যাপক পরিবর্তন আনবে।
মোনাজাতের মাধ্যমে যথাসময়ে সফলতার সঙ্গে পার্ক নির্মাণের প্রত্যাশার মধ্য দিয়ে শেষ হয় ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠান।