কালিয়াকৈরের বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি, শেখ জামাল সফটওয়্যার টেকনলোজি পার্ক পার্ক এবং চট্টগ্রামের শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেশন সেন্টারে বিনিয়োগের সুযোগ পেলো ২১টি প্রতিষ্ঠান। এই তিন হাইটেক পার্কে মোট এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ২৫০০ মানুষের কর্মসংস্থান করবে এই প্রতিষ্ঠানগুলো। আগামী দুই মাসের মধ্যেই পার্কগুলোতে বিনিয়োগ করতে হবে জায়গা প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে।
প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কালিয়াকৈরে ৪টি এবং চট্টগ্রামে ১৬টি ও কুয়েটে ১টি প্রতিষ্ঠানকে জমি বরাদ্দ দিয়েছে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ।
এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে বাংলাদেশ কার্ড লিমিটেড ৪নম্বর ব্লকে সাত একর জায়গা বরাদ্দ পেয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সেখানে স্মার্টকার্ড বিশেষ নিরাপত্তা পণ্য এবং এটিএম মেশিন উৎপাদন ও সংযোজন করবে। এজন্য প্রতিষ্ঠানটি বিনিয়োগ করবে ৮৬০ কেটি টাকা। সেখানে কর্মসংস্থান হবে ৬৫০ জনের।
এছাড়াও এই পার্কের ৬ নম্বর ব্লকে ২ একর জায়গা প্রাপ্ত এশিয়া কম্পিউটার বাজার লিমিটেড ৩৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে কর্মসংস্থান তৈরি করবে ৬০০ জনের। আর ৪ নম্বর ব্লকে ০.৫ একর জমিতে ২৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ১৫০ জনের কর্মসংস্থান তৈরি করবেমসেলট্রন ইলেক্ট্রো ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড। এই পার্কেই ১৪.৩৩ একর জায়গা পেয়েছে আইসিটি বিভাগের ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সি।
অন্যদিকে চট্টগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে জমি বরাদ্দ পেয়েছে জেনেক্স, হ্যালো ওয়ার্ল্ড, এক্সসিড বাংলাদেশ লিমিটেড, ইঞ্জেনিয়াম কনসাল্টিং, এডব্লিউ কমিউনিকেশন, কাজী কমিউনিকেশনস, আমরা নেটওয়ার্কস লিমিটেড, এক্সপোনেন্ট ইনফো সিস্টেম, ট্রাস্ট গ্লোবাল, ইমতিয়াজ এন্টারপ্রাইজ, রিয়েল আইটি, সংযোগ ইউ ডটকম, কোডার্স ল্যাব, প্লান-বি সল্যুশন, কে এ আরকমিউনকেশন এবং বাংলা পাজল লিমিটেড।
বুধবার বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের সম্মেলন কেন্দ্রে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বত্বাধিকারের হাতে জমির দলিল বুঝিয়ে দেন আইসিটি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এন এম জিয়াউল আলম। এসময় হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের পক্ষে চুক্তি দলিলে স্বাক্ষর করেন সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকর্ণ কুমার ঘোষ।
একই অনুষ্ঠানে ওমেন অ্যান্ড ই-কমার্স (উই), নারী উদ্যোক্তা ফোরাম, নিবেদিতা এবং বাংলাদেশ ওমেন ইন টেকনোললজির সঙ্গেও পৃথক সমঝোতা চুক্তি হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম বলেন, বাংলাদেশে টেকসই হাই-টেক ম্যানুফ্যাকচারিং ইকোসিস্টেম নির্মাণের এখনই উপযুক্ত সময় যেখানে হাই-টেক পার্ক অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। কোভিড-১৯ পরবর্তী বৈশ্বিক যে মন্দার ঝুঁকি রয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে উদীয়মান অর্থনীতিগুলোর প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে শ্রম-নির্ভর অর্থনীতি যথেষ্ট নয়। চলমান পরিস্থিতিতে যেসব দেশ জ্ঞান-ভিত্তিক ও প্রযুক্তি নির্ভর শিল্পের বিকাশে মনোনিবেশ করছে তারাই এফডিআই (সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ) আকৃষ্ট করতে সমর্থ্য হবে। এই বাস্তবতা উপলব্ধি করে, প্রযুক্তিভিত্তিক অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করার তাগিদ দেন সিনিয়র সচিব।
তিনি আরো বলেন, দেশে এই মুহূর্তে ১০টি হাই-টেক পার্ক বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত, এরমধ্যে সম্প্রতি তিনটি পার্ক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবসে উদ্বোধন করেছেন। বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিতে উৎপাদিত পণ্য বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।
হাইটেক পার্কের এই উদ্যোগ বিষয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকর্ণ কুমার ঘোষ বলেছেন, আশা করি ২০৪১ সাল বাংলাদেশের কর্মসংস্থান এবং রফতানি আয়ের একটি বড় হাব হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, এখন পর্যন্ত হাই-টেক পার্কসমূহে দেশের হাই-টেক পার্কগুলোতে ১৭৫টি প্রতিষ্ঠানকে স্পেস ও প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং ১৪৮টি স্থানীয় স্টার্টআপ কোম্পানিকে বিনামূল্যে স্পেস/কো-ওয়ার্কিং স্পেস বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ আইটি ইন্ডাস্ট্রির জনবলের চাহিদার দিক বিবেচনা করে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মধ্যমে আইসিটি খাতে দক্ষ জনবল তৈরি হয়েছে ৩৬০০০ জন। বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আইসিটি খাতে প্রায় ২২০০০ জনের প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।বিনিয়োগকারীগণকে দ্রুত ও সর্বোত্তম সেবা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ বদ্ধপরিকর; বিনিয়োগকারীগণকে অতি সহজে, অল্প সময়ে ও কম খরচে সেবা প্রদান করার লক্ষ্যে ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে মোট ১৪৮টি সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৪৩টি সেবা অনলাইনে প্রদান করা হচ্ছে।