রাজধানীর হোটেল শেরাটনে মঙ্গলবার পঞ্চম বিশেষ সাধারণ সভা, ত্রয়োদশতম বার্ষিক সাধারণ সভা এবং মেম্বারস নাইট উদযাপন করেছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ কন্ট্যাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো। সন্ধ্যায় শুরু হয়ে একে একে দুইটি সভা এবং একটি সদস্য সমাবেশ উৎসব পালন করে সংগঠনটি।
সভার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয় ৫ম বিশেষ সাধারণ সভার (EGM) মাধ্যমে। প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন এবং উদ্ভাবন বিশ্বব্যাপী বিপিও শিল্পকে নানাভাবে প্রভাবিত করছে, এবং এই পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে বাক্কো তার প্রাতিষ্ঠানিক সংবিধানে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সংশোধন প্রস্তাব করে। সভায় উপস্থিত সকল সদস্য এই সংশোধনসমূহ সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন করেন।
এরপর শুরু হয় বাক্কোর ১৩ তম বার্ষিক সাধারণ সভা। সভায় বাক্কোর কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফয়সল আলিম বিগত ১২তম বার্ষিক সাধারণ সভার কার্যবিবরণী, চলতি বছরে বাক্কোর সকল কার্যক্রম, অগ্রগতির প্রতিবেদন, বিপিও শিল্পের উন্নয়নের নিমিত্ত ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত সম্ভাব্য কার্যক্রম সদস্যদের সম্মুখে উপস্থাপন করেন এবং অর্থ সম্পাদক মোঃ আমিনুল হক উপস্থাপন করেন ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন। সকলের সম্মতিক্রমে প্রতিবেদনদ্বয় অনুমোদিত বলে গৃহীত হয়।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্যে বাক্কো কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি তানভীর ইব্রাহীম বিপিও শিল্পের অগ্রগতি, যুব সমাজের অবদান এবং ভবিষ্যৎ লক্ষ্য নিয়ে বক্তব্য রাখেন। তিনি জানান, বর্তমানে বাক্কোর সদস্য সংখ্যা ৪০০ এর বেশি যা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রতি বছর প্রায় ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যোগ করছে এবং ২০২৫ সালের মধ্যে এই আয় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার-এ উন্নীত করার পাশাপাশি ১ লক্ষ টেকসই, মধ্যম-আয়ের চাকরি সৃষ্টির লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে বাক্কো।
সাধারণ সম্পাদক ফয়সল আলিম তার বক্তব্যে বলেন, “আমরা সামনের বছরগুলোতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে চাই। এজন্য সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে আন্তর্জাতিক মেলায় সক্রিয় অংশগ্রহণের আহ্বান জানাই, যেখানে বাক্কো সবসময় আপনাদের পাশে থাকবে। একইসঙ্গে, বাক্কোর অভ্যন্তরীণ নয়টি সাবকমিটির কার্যক্রমে সক্রিয় অংশগ্রহণের অনুরোধ করছি, কারণ আপনাদের মতামত আমাদের বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা তৈরির মূল ভিত্তি। আমরা বিশেষভাবে জুলাই-আগস্ট মাসের তরুণদের অভ্যুত্থান থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছি যাঁদের আত্মত্যাগ আমাদের জন্য শুধু অনুপ্রেরণাই নয়, বরং একটি দায়বদ্ধতা। সুতরাং, একটি বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টাই আমাদের পথপ্রদর্শক।”
উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে বিপিও প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং প্রশিক্ষণ ল্যাবগুলোতে জরুরী অগ্নিনির্বাপণের সুব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের প্রয়োজনীয়তা; বিপিও কর্মীদের জন্য প্রফেশনাল আইডেন্টিটি তৈরি ও তাদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচী নিশ্চিতকরণ; অটোমেশন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, মেশিন লার্নিং, ল্যাঙ্গুয়েজ লার্নিং মডেল-এর মত আধুনিক প্রযুক্তির আবির্ভাব; সরকারি অংশীজনের সঙ্গে নীতিমালার সামঞ্জস্য তৈরির পরিকল্পনাসহ বিপিও শিল্পের নানামুখী বিষয় নিয়ে কথা বলেন সদস্যরা।
এছাড়াও সভায় অংশগ্রহন করেন বাক্কো সহ-সভাপতি মোঃ তানজিরুল বাসার, পরিচালকবৃন্দ- আবু দাউদ খান, আব্দুল কাদের, জায়েদ উদ্দীন আহমেদ, মেহেদী হাসান জুলফিকার, এবং সায়মা শওকত।
সভার সমাপনী বক্তব্য রাখেন বাক্কোর কার্যনির্বাহী কমিটির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মোঃ আবুল খায়ের। সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এবং সার্বিক সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “বাক্কো কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষ থেকে আজকের অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানাই। বিশেষ করে আমাদের সম্মানিত সদস্যবৃন্দ, উপদেষ্টামণ্ডলীদের যারা সবসময় তাঁদের মূল্যবান দিকনির্দেশনার মাধ্যমে বাক্কোকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করছেন”।