গুগল, ফেসবুক এবং এই টেকজায়ন্টগুলোর স্থানীয় পরিবেশক প্রতিষ্ঠান রিভ সিস্টেম ও এরিকসন বাংলাদেশের অসহযোগিতায় বিপাকে পড়তে যাচ্ছেন দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের উচ্চগতির সাশ্রয়ী ইন্টারনেট গ্রহাকরা। নতুন বছরের শুরুতেই দেশের বিভাগীয় পর্যায়ের বাইরের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট গ্রাহকদের ব্যবহৃত ইন্টারনেটের গতি কমে যেতে পারে ২০ শতাংশ। ক্যাশ সার্ভার স্থানান্তরগত জটিলতায় এমন ভোগান্তিতে পড়তে হতে পারে তাদের।
কেননা, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি’র বেধে দেয়া সময়ে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নিজেদের কাছে থাকা গুগল ও ফেসুবকের ক্যাশ সার্ভারগুলো আইআইজি ও ন্যাশনওয়াইড আইএসপি’র কাছে হস্তান্তরে সব বন্দোবস্ত করেও এখন এই প্রতিষ্ঠান দুটির তরফ থেকে তড়িৎ সাড়া পাচ্ছেন না স্থানীয় পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে বেধে দেয়া সময়ে ক্যাশ সার্ভারের নোড পুরোপুরি হস্তান্তর করা সম্ভব হচ্ছে।
তাদের অভিযোগ, সার্ভার হস্তান্তরের জন্য অটোনোমাস সিস্টেম বা এএস নম্বরগুলো ওয়েয়েবসাইটে সরবরাহ করা কন্টেন্টগুলি ইউজার বা ব্যবহারকারীর জন্য আরও দ্রুত লোড করতে ব্যবহৃত কন্টেন্ট ডেলিভারি নেটওয়ার্ক বা সিডিএন-এর সঙ্গে সমন্বয় করতে মেইল দেয়ার পরও অপর পক্ষ থেকে তেমন সাড়া মিলছে না। ফলে বিটিআরসি’র বেধে দেয়া সময়ের মধ্যে তাদের কাছে থাকা ক্যাশ সার্ভারের অর্ধেকও স্থানান্তর সম্ভব হয়ে উঠবে না। এমন অবস্থা চলতে থাকলে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে আরো তিন মাসের মতো সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন ইন্টারনেট সেবাদাতাদের সংগঠন আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হক।
তিনি বলেছেন, এখন পর্যন্ত যা পরিস্থিতি তাতে গুগল’র সার্ভার নিয়েই বেশি বিপাকে পড়তে হতে পারে। ফেসবুকের ৮০ শতাংশ পর্যন্ত সার্ভার ট্রান্সফার করা হলেও বাকি গুলো ৩১ তারিখের মধ্যে হবার কোনো লক্ষণ দেখছি না। গুগল ও ফেসবুকের কাছে মেইল করা হলেও তারা এখন কোনো রেসপন্স করছে না। গুগল সার্ভারের বাংলাদেশী ডিস্ট্রিবিউটর রিভ সিস্টেম এবং ফেসবুকের এরিকসন এ বিষয়ে একেবারেই নির্বিকার। ছয় মাস আগেই গুগল বাংলাদেশে সার্ভার দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। বিটিআরসি- থেকে এনওসি তাদের কাছে পাঠানো হলেও তারা নতুন এএস নম্বরগুলো পাঠাচ্ছে না। চার বা এর অধিক যেই এএস নম্বর রয়েছে সেটি যেহেতু প্রতিটি আইএসপির জন্য স্বতন্ত্র্য একটি আইপি, তাই সিডিএন-এর সঙ্গে তা সমন্বয় বা হস্তান্তর আমাদের হাতে নেই। এটা গুগল-ফেসবুককেই করতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে আমরা বিটিআরসি’র কাছে সময় বাড়ানোর আবেদন করেছিলাম। কিন্তু যেহেতু তা এখনো হয়নি; তাই ডিস্ট্রিবিউটাররা যখন নিয়ম অনুযায়ী ক্যাশ সার্ভারগুলো বন্ধ করে দেবে তখন তার প্রভাবটা প্রান্তিক গ্রাহক পর্যায়েই পড়বে। এতে গুগল ব্যবহারকারীদের গতি অর্ধেকে নেমে যেতে পারে।
সূত্রমতে, এরই মধ্যে গুগল ও ফেসবুক কোনো কোনো আইএসপি প্রতিষ্ঠানের ক্যাশ সার্ভার ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে গ্রাম পর্যায়ে ব্যবহারকারীরা এরই মধ্যে কিছুটা সমস্যার সম্মুখীন হতে শুরু করেছেন।
প্রসঙ্গত, শুরুতে যে কোনো আইএসপি সেবাদাতাই ক্যাশ সার্ভার স্থাপন করতে পারতো। কিন্তু বিটিআরসির নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, বিটিআরসি’র অনুমতিক্রমে কেবল ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি), ন্যাশনাল ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ (নিক্স), মোবাইল অপারেটর নেটওয়ার্ক এবং ন্যাশনওয়াইড আইএসপি নতুন করে ক্যাশ সার্ভার স্থাপন করতে পারবে। স্থানীয় পর্যায়ে আইএসপিদের কোনো ক্যাশ সার্ভার থাকবে না। যাদের আছে তা বন্ধ করে দিতে হবে। আর আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই নিজেদের কাছে থাকা ক্যাশ সার্ভারগুলো অবশ্যই আইআইজিসহ এ বিষয়ে অনুমতিপ্রাপ্ত সেবাদাতার কাছে স্থানান্তর করতে হবে।