উদ্ভাবনের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের বিশ্বের বুকে দেশের পতাকা তুলে ধরতে সরকার সব ধরনের সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এজন্য আইসিটি মাস্টার প্লানে নতুন কিছু উদ্যোগ অন্তর্ভূক্তির কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি। প্রতিমন্ত্রীর প্রত্যাশা, অদূর ভবিষ্যতে শফিউল-তানিয়ার মতো উদ্যোক্তারা দেশের কৃষি খাতে আইওটির ব্যবহার করে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
বক্তব্যে শতভাগ স্যামসাং হ্যান্ডসেট বাংলাদেশেই অ্যাসেম্বেল করে বিদেশে রপ্তানি করা হবে এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, গত ৪ বছর আগে ‘স্টার্টআপ’ বলতে তেমন কিছু ছিল না। কিন্তু বিগত ৪ বছরে আইসিটি উপদেষ্টার নির্দেশনায় তরুণদের উদ্যোক্তাদের জন্য ৪টি মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর উদ্যোগ নিয়েছে। স্টার্টআপ বাংলাদেশ, আইডিয়া একাডেমি এবং উপজেলা পর্যায়েও ডিজিটাল দক্ষতা অর্জনের সুযোগ তৈরি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর আইসিটি টাওয়ারের বিসিসি সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত আইডিয়াথন প্রতিযোগিতার সেরা ৫ম বিজয়ীদের পুরস্কৃত করতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রতিযোগিতায় চূড়ান্ত ধাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কৃষিয়ান। বাকি বিজয়ী উদ্যোগগুলো হলো- চার-ছক্কা সাই, এনটিটি রোবটিক্স, রক্ষী লিমিটেড এবং ছবির বাক্স।
এই বিজয়ীরা দক্ষিণ কোরিয়াতে ৬ মাসের বিশেষ প্রশিক্ষণ, ইনকিউবেশন, ফান্ডিং, আন্তর্জাতিক পেটেন্টসহ কপিরাইট ও ট্রেডমার্ক পাবার সহযোগিতা পাবে।
এছাড়াও এই আয়োজনে টপ ৩০টি স্টার্টআপকে ক্রেস্টসহ টিমের প্রত্যেক সদস্যকে অর্থাৎ মোট ১১১ জনকে সনদপত্র প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানের গেস্ট অব অনার বাংলাদেশে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং-কিউন বলেন, অপ্রত্যাশিত কোভিড-১৯ এর মতো কঠিন সময়েও এ ধরনের আয়োজনে সকলের অংশগ্রহণ বাংলাদেশের সাহসীকতাকেই প্রকাশ করেছে। কোরিয়া বাংলাদেশের বিজয়ীদের সঙ্গে কাজ করার জন্য মুখিয়ে আছে।
আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম বলেন, আমরা শুন্য অবস্থা থেকে শুরু করেছিলাম, অ্যানালগ থেকে আমরা ডিজিটাল হয়েছি। এখন ফ্রন্টিয়ার টেকনলোজির দিকে যাচ্ছি। আর বিজয়ীরা ছাড়ও প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীরা দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে কাণ্ডারি হিসেবে কাজ করবে।
আইডিয়া প্রকল্পের পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ মজিবুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) এর নির্বাহী পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব জনাব পার্থপ্রতিম দেব, দক্ষিন কোরিয়ার কোরিয়া প্রোডাক্টিভিটি সেন্টার (কেপিসি) এর পরিচালক স্যাংগন পার্ক, বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর এবং স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক টিনা এফ জাবিন।
পার্থপ্রতিম দেব বলেন, কোরিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের সম্পর্ক পুরোনো। দেশটির সঙ্গে ৪টি প্রকল্প নিয়ে কাজ হচ্ছে। তবে বিজয়ী ৫ জন প্রমাণ করেছে বাংলাদেশ হবে তথ্যপ্রযুক্তির পরবর্তী হাব। তারাই আমাদের ব্রান্ড অ্যাম্বেসেডর।
অনলাইনে সংযুক্ত হয়ে দো-ভাষীর মাধ্যমে বক্তব্য দেন দক্ষিণ কোরিয়ার কোরিয়া প্রোডাক্টিভিটি সেন্টার (কেপিসি) এর পরিচালক স্যাংগন পার্ক। বিজয়ী ৫ উদ্যোক্তা কোরিয়ার উদ্যোক্তাদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মধ্যে নিজেরাই ৬ মাস পর দেশে ফিরে ইউনিকর্ন প্রতিষ্ঠান গড়তে সক্ষম হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
বক্তব্যে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই দেশে রোবটিকস, ব্লকচেইনের মতো ফ্রন্টিয়ার প্রযুক্তির জয়জয়াকার শুরু হবে উল্লেখ করে বিজয়ীদের উদ্ভাবনী ধারণা বাস্তবায়নে এই প্রযুক্তিগুলো ব্যবহারের পরামর্শ দেন বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর। এসময় হ্যাকাথন ও স্টার্টআপ বাংলাদেশের মতো উদ্যোগ নিয়ে নতুন উদ্যোক্তাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ পুঁজি প্রাপ্তির সহজ পথ তৈরি করে দেয়ায় সরকারের নেতৃত্বের প্রশংসা করেন তিনি।
বিজয়ীদের উদ্দেশে টিনা এফ জাবিন বলেন, আজ যারা বিজয়ী হলেন, তারা শুধু একদিনের নয়, পুরো জীবনের জন্যই জয়ী হলেন। আর আপনাদের মনে রাখতে হবে আপনারা শুধু একটি স্টার্টআপকেই নয় বিশ্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। আর এই প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে প্রমাণ করুন আপনারাই রয়েল বেঙ্গল টাইগার।