রূপকল্প ২০২১ ও ডিজিটাল বাংলাদেশের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশে ই-কমার্স উন্নয়নে সরকারের পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী।
বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা) ও ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ই-সিএবি) সহযোগিতায় শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ফ্রান্স বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (সিসিআইএফবি) আয়োজিত উদ্যোক্তাদের কেভিড-১৯ উত্তর চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা বিষয়ক ওয়েবিনারের উদ্বোধন কালে এ আশ্বাস দেন তিনি।
তিনি বলেন, বৈশ্বিক ই-কমার্স বাজারের বর্তমান মূল্য ৩.৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং আশা করা হচ্ছে ২০২১ সালে তা ৪.৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে এবং এটি বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য অপার সম্ভাবনা বয়ে আনবে। তিনি আরো বলেন, সরকার ইতোমধ্যে জাতীয় ডিজিটাল বাণিজ্য নীতি প্রণয়ন করেছে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের উপলব্ধি ত্বরান্বিত করতে নিজস্ব স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে।
বর্তমান কোভিড-১৯ সংকটের ফলে অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক বিপর্যয়, উৎপাদন প্রক্রিয়ার নেতিবাচক চাপ এবং আমাদের বাণিজ্য সংক্রান্ত কার্যক্রমের উপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে উল্লেখ করে উদ্বোধনী বক্তব্যে সিসিআইবির সভাপতি সৈয়দ মাহমুদুল হক বলেন, এর ফলে ই-বাণিজ্য কৌশল কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ টেকসই অর্থনৈতিক কার্যক্রম নিশ্চিত করতে উৎসাহিত করছে।
তিনি আরো বলেন- কৃষি, উৎপাদন ও সেবা শিল্পের সাথে অনগ্রসর সম্পর্ক জোরদার করে বাংলাদেশের ই-কমার্স উদ্ভাবন, উদ্যোক্তা ও কর্মসংস্থান উৎপাদনে বিশাল সুযোগ সৃষ্টি করে এবং আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি প্রধান চালিকাশক্তি হতে পারে।
সরকার, বেসরকারি খাত, বাংলাদেশ প্রবাসীদের প্রাসঙ্গিক অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা সম্পন্ন এবং উন্নয়ন অংশীদারদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার উপর জোর দেন এবং জাতীয় কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বিডার প্রতি আহ্বান জানান সৈয়দ হক।
ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় ডিজিটাল বাণিজ্য সেলের সমন্বয়কারী মোঃ হাফিজুর রহমান। এসময় তিনি অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক উভয় ই-কমার্স খাতের উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। তিনি ই-কমার্স প্রস্তুতি মূল্যায়ন ও কৌশল প্রণয়ন, আইসিটি অবকাঠামো ও সেবা, বাণিজ্য লজিস্টিক ও বাণিজ্য সুবিধা, পেমেন্ট সলিউশন, লিগ্যাল অ্যান্ড রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্ক, ই-কমার্স স্কিল ডেভেলপমেন্ট এবং অ্যাক্সেস সহ প্রাসঙ্গিক জাতীয় নীতির প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করেন।
তিনি বাংলাদেশের ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতায় একটি অভিযোগ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি প্রণয়ন নিয়েও আলোচনা করেন।
মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল জানান, বাংলাদেশের বর্তমান ই-কমার্স বাজারের আকার ২.৭৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই বাজার অচিরেই ৩.৭৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হবে। এসময় এটুআই এবং ই-কমার্স সেল এবং বিডার সমন্বিত ও পরিকল্পিত প্রচেষ্টার উপর জোর দেয়ার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং ব্যবসার আরও সম্প্রসারণের উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
র্তমান ই-কমার্স দৃষ্টিভঙ্গি এবং ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা সম্পর্কে আলিবাবার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে নিজের মতামত উপস্থাপন করেন দারাজ বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোস্তাহিদাল হক। তিনি ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের জন্য বাড়ির ঠিকানাতেই ট্রেড লাইসেন্স এবং ই-কমার্সের প্রসারের নিরিখে বিশেষ ভ্যাট প্রণোদনা প্রদানের আবেদন জানান।
আইএসপি কোম্পানির চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে ই-কমার্সকে এগিয়ে নেয়ার স্বার্থে দেশের আইসিটি অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু নীতিগত সমস্যার কথা উল্লেখ করেন বাংলাদেশ ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ আমিনুল হাকিম।
‘লজিস্টিক ই কমার্স ব্যবসার অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং এটি একটি প্রধান ক্ষেত্র যা ফর্ম নীতি এবং প্রযুক্তিগত উভয় দিক মোকাবেলা করা প্রয়োজন’ উল্লেখ করে অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক উভয় জন্য ই-কমার্স লজিস্টিক চ্যালেঞ্জের ওপর আলোকপাত করেন বাংলাদেশ ফ্রেট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি মাহবুবুল আনাম। তিনি আন্তঃসীমান্ত ই-কমার্স, প্রযুক্তিগত এবং আইনি দিক, কাগজ বিহীন বাণিজ্য নীতি সম্পর্কিত দিকগুলি র পাশাপাশি ভবিষ্যতে লজিস্টিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য ভবিষ্যৎ সুপারিশের উপর জোর দেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ইউরোপের বর্তমান ই-কমার্স প্রবণতা এবং চর্চা সম্পর্কে তার মতামত তুলে ধরেন বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার প্রযুক্তি ও সেবা বিষয়ক গবেষক ও বিশ্লেষক মিস অ্যান ডেসেমন্ড।
আইট্রিপলই ফেলো ড. মাহবুব হক নিরবচ্ছিন্ন সেবা অবকাঠামো উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করেন। বাংলাদেশের অর্থনীতির ডিজিটাল রূপান্তরে যথাযথ ভূমিকা পালন করার জন্য প্রাসঙ্গিক ক্ষেত্রে যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা থাকা বাংলাদেশী প্রবাসীদের জন্য নীতিগত পরিসর গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
বিগ ডাটা এবং ই-কমার্স খাতে বাংলাদেশে নিজেদের সম্ভাব্য অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে কথা বলেছেন গ্লোবাল লিডার ফর আমাজন ওয়েব সার্ভিসেস (এডব্লিউএস) এর ক্লাউড কম্পিউটিং সার্ভিসেস অ্যান্ড অটোমেশন ইঞ্জিনিয়ারিং প্র্যাকটিস ক্লাউড টেকনোলজির জারজিস ইমাম।
ইউনাইটেড নেশনস ক্যাপিটাল ডেভেলপমেন্ট ফাণ্ডের (ইউএনসিডিএফ) শেপিং ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স ট্রান্সফর্মেশন (শিফট) এর কান্ট্রি প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর আশরাফুল আলম সাপ্লাই চেইন কারবারিদের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা ও ডিজিটাল রূপান্তরের উপর জোর দিয়েছেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য সচিব ড. মোঃ জাফর উদ্দিন মহামারীর কারণে ই বাণিজ্য খাতের সাম্প্রতিক প্রবৃদ্ধির কথা তুলে ধরার পাশাপাশি ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জের কথাও উল্লেখ করেছেন। তিনি অনলাইন পেমেন্ট মেকানিজম এবং মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থার সাম্প্রতিক অগ্রগতি, গ্রাহকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, ইন্টারনেট প্রাপ্যতা, সরকারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত ৫৮৬৫ ডিজিটাল সেন্টার এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে কেন্দ্রীয় ডিজিটাল বাণিজ্য সেল প্রতিষ্ঠা এবং ই-কমার্সের উন্নয়নে একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠনের বিষয় তুলে ধরেন। তিনি ই-কমার্স খাতে উদ্যোক্তা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ দিয়ে তার বক্তব্য শেষ করেন।
ওয়েবিনারে ই-কমার্স খাতে বিনিয়োগের জন্য একটি সক্রিয় পরিবেশ সৃষ্টির আশ্বাস দেন বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম।
আলোচকদের ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে আলোচনার ইতি টানেন সিসিআইআইএফবি’র নীতি ও এডভোকেসি কমিটির আহ্বায়ক শাহ সৈয়দ কামাল।