ঈদে ঘরমুখো মানুষের স্বাচ্ছন্দ্যে বাড়ি ফিরতে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। শুক্রবা ষষ্ঠ দিনের মতো অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। সকাল ৮টায় পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু হয়। যাত্রীদের টিকিট ক্রয় সহজলভ্য করার জন্য পশ্চিমাঞ্চলের সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট সকাল ৮টা হতে শুরু হয় এবং পূর্বাঞ্চলে চলাচল আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট দুপুর ২টা হতে ইস্যু করা হবে। আজ যারা অগ্রিম টিকিট নিচ্ছেন তারা আগামী ৮ এপ্রিল ভ্রমণ করতে পারবেন।
স্টেশন নয়, শতভাগ ঈদে ভ্রমণের আগাম টিকিট বিক্রি হচ্ছে অনলাইনে। ফলে ভোর রাতে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে সিরিয়াল না দিয়ে এখন যাত্রীরা মুঠোফোন কিবং পিসিতে নেমেছেন অনলাইন যুদ্ধে। সকাল ৮টা বাজতেই রেল অ্যাপ বা ওয়েবে হুমড়ি খেয়ে পড়েন টিকিট প্রত্যাশীরা। এতে সার্ভার সচল থাকলেও গতি হয়ে পড়ে শ্লথ। সাইন ইন করলেও টিকেট মেলা ভার। টিকেট কাটার বিড়ম্বনা নিয়ে বেসরকারি পেশাজীবী মাহতাব উদ্দিনের অভিযোগ, রেলের টিকেটিং সিস্টেমে নতুন গ্যাড়াকল। ঘড়ির কাঁটা ঠিক ৮ টায় সার্ভারে ঢুকে দেখি ভরপুর সিট। কিন্তু কোন সিট সিলেক্ট হয় না!আগে সার্ভারে ঢোকা যেত না আর এখন সহজে ঢোকা গেলেও সিট সিলেক্ট হয় না। গত দু’দিন ধরে এটাই দেখছি।
টিকট কাটতে গিয়ে বিফল অপর এক ব্যক্তি জানালেন, আগে কয়েকজন মিলে রাতে রেলস্টেশনে চলে যেতাম। মশার কামড় খেয়ে রাত জেগে কয়েক ঘণ্টা পার করতাম। তারপরও অনেক সময় টিকিট পেতাম না। এখন অনলাইনে যেকোনো জায়গা থেকে টিকিট কাটা যায়। তবে অনেক সময় অ্যাপে প্রবেশ করা যায় না।
আগামী ৭ তারিখের ট্রেন টিকেট কাটার দুর্ভোগের ভিডিও রেকর্ড পাঠিয়ে ভুক্তভোগী একজন জানালেন, ঘড়ির কাাঁটার ঠিক ৮টায় সাইন ইন করেও দেখতে পান কয়েক মিনিটের মধ্যে সব টিকিট সেল হয়ে গেছে। তিনি বললেন. আমি তো শুধু একটি স্টেশনেকে সিলেক্ট করে কাজ করেছি। গত তিনদিন ধরে এই একই অবস্থা। দুই থেকে তিন মিনিটের মধ্যে এসে স্টেশনের টিকিট সেল হয়ে যায়। এরপরে আপনি অন্য যে কোন স্টেশন সিলেকট করে সার্চ করবেন দেখবেন কোন স্টেশনে সিট নেই। দুই থেকে তিন মিনিটের মধ্যে সব টিকিট সেল!
তবে পরদিন সোভাগ্যক্রমে এই একই ব্যক্তি টিকিট পেয়েছেন বলে জানান। তার ভাষ্য, কেউ হয়তো ফেরত দেয়ায় কপালে জুটেছে।
অনলাইনে এমন টিকিট যুদ্ধর কথা স্বীকার করে রেলের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিদিন কমপক্ষে চার লাখ টিকিটের চাহিদা থাকে। সকালে ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার প্রথম আধঘণ্টায় একেকটি টিকিট পেতে গড়ে ৬০০ জন চেষ্টা চালান। এই ঘাটতির মধ্যেই আন্তনগর ট্রেনের ৩০ হাজারের কিছু বেশি টিকিট প্রতিদিন বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে অনেকে টিকিট পাচ্ছেন না।
রেলওয়ে সূত্র বলছে, গতকাল বিক্রি হয়েছে ৭ এপ্রিলের টিকিট। এদিন সকালে ট্রেনের পশ্চিমাঞ্চলে টিকিট বিক্রি শুরুর প্রথম আধঘণ্টায় ৯৪ লাখ বার এবং বিকেলে পূর্বাঞ্চলের টিকিট বিক্রির প্রথম আধঘণ্টায় ৭৪ লাখ ৫০ হাজার হিট হয়েছে। এর আগে পশ্চিমাঞ্চলের টিকিটের জন্য সকালের প্রথম আধঘণ্টায় কোটির আশপাশে এবং পূর্বাঞ্চলে প্রথম আধঘণ্টায় ৫০ লাখের মতে হিট হয়েছে।
জানা যায়, ঈদ উপলক্ষ্যে ঘরমুখো মানুষের এই ট্রেন যাত্রার টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে গত ২৪ মার্চ। আগের ঈদগুলোতে ৫ দিনের টিকিট বিক্রি করলেও এবারই প্রথম ৭ দিনের টিকিট বিক্রি করছে রেলওয়ে। পঞ্চম দিনে বৃহস্পতিবার ১০ ঘণ্টায় ট্রেনের ৪৫ হাজার টিকিট বিক্রি হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১০ ঘণ্টায় সারাদেশে অপরদিকে টিকিট বিক্রি হয়েছে ৪৪ হাজার ৯৫২টি। এছাড়া ঢাকা থেকে বহির্গামী টিকিট বিক্রি হয়েছে ২৭ হাজার ৯০০টি। সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে ৮২ লাখ ৫০ হাজার টিকিট প্রত্যাশী ওয়েবসাইটে হিট করেছেন। এ সময় বিক্রি হয়েছে পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেনের টিকিট। আর দুপুর ২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত ৭৪ লাখ ৫০ হাজার টিকিট প্রত্যাশী ওয়েবসাইটে হিট করেছেন। এ সময় বিক্রি হয়েছে পূর্বাঞ্চলের ট্রেনের টিকিট।
তবে অনলাইনে টিকিট কাটতে গিয়ে টিকিট প্রত্যাশীরা টিকিট না পেলেও তাদের কর্মঘণ্টা বা যাতায়াত ব্যয় নষ্ট হয়নি। পাড় করতে হয়নি নির্ঘুম রাত।