যৌথভাবে ফ্যাব্রিক লাগবে লিমিটেড এবং মার্কোপলো এআই পেলো এক কোটি করে টাকার তৃতীয় বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্র্যান্ট। সেরা বিজয়ীদের মধ্যে ডিজিটাল বিপণনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর সেবাদাতা মার্কোপোলো এআইয়ের দুই প্রতিষ্ঠাতা হলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) স্নাতক রোবায়েত ফারহান এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) থেকে স্নাতক তাসফিয়া তাসবিন। বিশ্বখ্যাত সামিয়কী ‘ফোর্বস’-এর ‘থার্টি আন্ডার থার্টি ২০২৩ এশিয়া’ তালিকায় স্থান পেয়েছেন এই দুই তরুণ।
অপর বিজয়ী উদ্ভাবনী উদ্যোগ ফেব্রিক লাগবে লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা নাজমুল ইসলাম ও সহপ্রতিষ্ঠাতা রাজিয়া সুলতানা। নাজমুল ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে মেকাট্রনিক্স প্রকৌশলে স্নাতক এবং রাজিয়া সুলতানা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
এবারের আসরে সেরা ৫২ স্টার্টআপ পেল ৭ কোটি টাকার অনুদান। অনুদান হিসেবে দুই দলই পেয়েছে এক কোটি করে টাকা।
অনুদান জয়ী উদ্যোগগুলোর মধ্যে রয়েছে এগ্রিস্মার্ট, অ্যান্ট স্যুট, অ্যাকোয়ালিংক বাংলাদেশ লিমিটেড, আয়করি ডিজিটাল লিমিটেড, বাংলা ইস্কুল বিডি লিমিটেড, বাজার৩৬৫ লিমিটেড, কার্ডিকেয়ার, ছাদ বাজার, চেকবক্স, দেশিফার্মার লিমিটেড, ডিগারমা, ডকটাইম লিমিটেড, ড্রিপ ইরিগেশন বিডি লি., ই-ইরিগেশন, ই-ওস্তাদ, ইজি গো, এডু এসিস্ট- দি ফিউচার অব ইনক্লিউসিভ এডুকেশন, এনগেজ, ইপল্লি, ফার্মহাউস বিডি, জি-উইজেটস স্মার্ট এনার্জি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এসইএমএস), গ্রামশপ, হিশাবি টেকনোলজিস লিমিটেড, ইনকাম, ইন্টারেক্টিভ কেয়ারস্, জেআরসি বোর্ড, কৃষি স্বপ্ন, লাইল্যাক, ম্যাভেরিক ইনোভেশন, মিমবা, মমিকিডস্ লি., মোর টেক বিডি, নিরাময় হেলথটেক, রোবট্রি বাংলাদেশ, রিওগ্যাস, স্বাস্থ্য সেবা, শালবৃক্ষ লি., সম্ভব, সঠিক এআই, সক্রিয় টেকনোলজিস লিমিটেড, সোল শেয়ার- সোল মবিলিটি, স্টাফবেস লিমিটেড, টেকরেভ ৪.০- স্মার্ট ফ্যাক্টরি (টেকনোভাস লিমিটেড), টয়লেন্ড, টয়ো, ভিআর বাংলা, ওয়ান্ডার ওম্যান, ওয়েস্ট বাংলাদেশ, ইয়োর ক্যাম্পাস এবং যায়ন্যাক্স হেলথ লিমিটেড।
শনিবার রাজধানীর এম এ জি ওয়াসমানী মিলনায়তনে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান। এর আগে স্কুল থেকেই এআই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, আর্টিফিশিয়াল টেকনোলজি, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এখন আমাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসছে। তাই এখন আমরা প্রাথমিক থেকেই কোডিং শেখাবো কি না তা ভেবে দেখতে হবে। ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার বিষয়নি এখন বেশি চিন্তা করতে হবে।
উপস্থিত তরুণদের উদ্যেশ্যে তিনি আরো বলেন, আমি তরুণদের দেখে অনুপ্রাণিত হই। অনুকূল পরিবেশ পেলেই বাংলাদেশের তরুণরা পারে। আমাদের মনে রাখতে হবে আমাদের জনসংখ্যা আমাদের সবচেয়ে বড় সম্ভবনার জায়গা। কেননা পপুলেশন লাইবেলিটি নয় এটা আমাদের অ্যাসেট। কিন্তু দীর্ঘদিন আমরা উল্টোপথে চলেছি। তবে এরই মধ্যে পরনির্ভরশীলতা ও ভিক্ষার মানসিকতা থেকে আমাদের বেরিয়ে এসেছি।
উপদেষ্টা এসময় প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে ‘রেভ্যুনিউ’ মডেলে নিয়ে আউটসোর্সিং এর ওপর গুরুত্বারোপ করে আরো বলেন, বিদেশীরা কে কী করছে তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমি যা করছি সেটাই গুরুত্ব পূর্ণ। আমাদের বিবেক পরিস্কার থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর বিবেক খুবই পরিস্কার। উনি যা করছেন দেশের কল্যাণের জন্যই করছেন।
সভাপতির বক্তব্যে ‘ই-জিপি’র কল্যাণে বাংলাদেশে এখন টেন্ডার বাক্স ছিনতাই হয় না’ উল্লেখ করে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, এই সল্যুশন দিয়ে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানও বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের নির্দেশনায় দলীয় সংস্কৃতি তৈরি করে সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রেই রেগুলেট না করে ‘ডিরেগুলেট’ করা হয়েছে।
উবারের মতো সফল উদ্যোগের সূতিকাগার যুক্তরাষ্ট্রের ‘উই ওয়ার্ক’ পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা থেকেই আইসিটি বিভাগের উদ্যোক্তা সংস্কৃতির এই উদ্যোগ বলে জানান পলক।
তিনি বলেন, গত ছয় বছরে ১০ লাখ করে অনুদান দেয় ৪০০টি স্টার্টআপের মধ্যে ৩০ শতাংশই এখনো টিকে আছে। এর ১০ শতাংশ সিড স্টেজ থেকে পরবর্তী ধাপে উন্নীত হয়েছে। গত দুই বছরে স্টার্টআপ বাংলাদেশ থেকে যতগুলো প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করা হয়েছে তাদের বাজর মূল্য দ্বিগুণ হয়েছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশের অর্জন আইসিটি পরিবারের সম্মিলিত সফলতার প্রায়স বলেও মন্তব্য করেন প্রতিমন্ত্রী।
স্টার্টআপ ইকো সিস্টেম গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অল্পদিনের মধ্যেই ‘সর্টাটআপ পলিসি’; ‘ফান্ড অব ফান্ড’; ঝুঁকি শেয়ারে স্টার্টআপ বাংলাদেশ-কে ‘গ্যারান্টার’ হওয়ার প্রস্তাব দেবেন বলে জানান জুনােইদ আহমেদ পলক।
প্রত্যাশা করলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে আরো ৫টি বিলিয়ন ডলারের স্টার্টআপ হবে বাংলদেশ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আইসিটি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব সামসুল আরেফিন জানান, কোনো স্টার্ট আপের উদ্যোগ সম্ভাবনাময় হলে সেই উদ্যোগ পুঁজিবাজারে আসার জন্য আইসিটি বিভাগ গ্যারান্টার হবে। এজন্য আমি এরই মধ্যে স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছি। একইভাবে ব্যাংক ঋণের জন্যও আইসিটি বিভাগ গ্যারান্টার হতে পারে।
এছাড়াও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক রণজিৎ কুমার ও স্টার্ট আপ বাংলাদেশ ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামি আহমেদ বক্তব্য রাখেন।
সামি আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ কম সময়ের মধ্যে অনেক সফলতা এসেছে। ২০২৫ সালের মধ্যে ৫টি এবং ৪১ সালের মধ্যে ৫০টির বেশি ইউনিকর্ন হবে। বিচারের সময় মনে হয়েছে, যারা বিজয়ী হয়নি ইক্যুইটি বিনিয়োগ করবো। এখানে ব্যর্থতা বলে কিছু নেই। পুরোটাই শিক্ষণীয়। তাই এটাই শেষ নয়।
স্বাগত বক্তব্য দেন আইডিয়া প্রকল্প পরিচালক আলতাফ হোসেন। প্রতিযোগিতার বিস্তারিত তুলে ধরে বিগ সহ-সমন্বয়ক স্বিদ্ধার্ত গোস্বামী জানান, প্রাথমিক ভাবে জমা পড়া ৭৭ হাজার আবেদনের মধ্যে ২২ শতাংশই নারী উদ্যোক্তা। কেবল দেশই নয় কানাডা থেকেও উড়ে এসে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন উদ্যোক্তারা। কাজেই বিগ এখন একটি ব্র্যান্ড।
অনুষ্ঠানে বিগত সময়ে গ্র্যান্ট পাওয়া সফল উদ্যোগ শপআপ এবং ওপেন রিফ্যাক্টর এর ওপর ডক্যুমেন্টারি উপস্থাপন এবং দৃক ব্যান্ডের সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। প্রদর্শন করা হয় ‘মুজিব ভাই’ অ্যানিমেশন মুভির চুম্বক অংশ।