প্রশিক্ষণ দেয়ার ক্ষেত্রে সরকারের আইসিটি বিভাগের চেয়ে বেসরকারি উদ্যোগ কোডার্সট্রাস্ট এগিয়ে থাকায় প্রতিষ্ঠানটির জন্য গৌরব প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটিকে বরিশালের শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেশন সেন্টারে তৃতীয় শাখা স্থাপনের আহ্বান জানিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
চট্টগ্রামে নুতন ক্যাম্পাস স্থাপনের পরদিন বুধবার শাহবাগের জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে ঢাকায় সুপার কিডস এর কার্যক্রম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির ভাষণে কোডার্ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি এই আহ্বান জানান প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের তরুণ প্রজম্মকে ভবিষ্যতের প্রযুক্তি জ্ঞানে দক্ষ ও ডিজিটাল কর্মশক্তিতে রূপান্তরে ‘কোডার্সট্রাস্ট’ ৭০ হাজার প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছে। আমাদের লার্নিং আর্নিং প্রকল্পে ৫৩ হাজার প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এক্ষেত্রে আমরা দ্বিতীয় হলেও গর্বিত। কেননা, ডিজিটাল বাংলাদেশের আর্কিটেকচার সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরিকল্পনায় এটা সম্ভব হয়েছে।
অনুষ্ঠানে কোডার্সট্রাস্টকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত হওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির জন্য গৌরব প্রকাশ করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সারাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় আইসিটি প্রশিক্ষণ জরুরি। কারিগরি দক্ষতা ছাড়া ভবিষ্যতের কর্ম দুনিয়ায় টিকে থাকা সহজ হবে না। ইতিমধ্যে কোডার্সট্রাস্ট চট্টগ্রামে সে সুযোগ তৈরি করছে। আগ্রহীদের কেউ সায়েন্স, কেউ টেকনোলজি, কেউ রোবটিক্স আবার কেউ সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে কাজ করবে। বলতে গেলে চতুর্থ শিল্প বিল্পবের যেসব কাজ আছে প্রায়ই সব কাজে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে কোডার্সট্রাস্ট প্রশিক্ষণ দেবে। ফলে স্মার্ট বাংলাদেশেও অগ্রযাত্রার দুয়ার প্রায় খুলে যাচ্ছে।
এসময় বরাবরের মতো ২০২৫ সালের লক্ষ্যমাত্রা ব্যক্ত করে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বিকাশ স্বপ্নদ্রষ্টা কামাল কাদীরের দেশ ফিরে বাংলাদেশের সুনাম ছড়িয়ে দেয়ার কথা তুলে ধরেন। যোগ করেন কোডারট্রাস্ট থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ফরিদপুর থেকে দেশজুড়ে কর্মসংস্থান গড়ে তোলা আসিফ ঘরে বসে মাসে দেড় লাখ ডলার আয়ের গল্প। বললেন, বর্তানে ১০ হাজার শিক্ষার্থী এখন যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করলেও তারা আবার ফিরে এসে কামাল কাদিরের মতোই দেশের মান ছড়াবে।
পুরস্কারজয়ী আইটি উদ্যোক্তা ও কোডার্সট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আজিজ আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান, সাবেক মুখ্য সচিব মোঃ আব্দুল করিম, যুক্তরাষ্ট্রর ঢাকার প্রতিনিধি জেমস গার্ডিনান, ডিসকভারি এডুকেশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন গ্রিল, থিম্বল আইও সিইও অস্কার পেড্রোসো প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে কোডার্সট্রাস্টের বৈশ্বিক সহযোগীদের কার্যক্রম ভিডিওচিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়।
কোডার্ট্রাস্টের সফলতা ও দৃষ্টান্ত তুলে ধরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কোডার্সট্রাস্টের চুক্তির কথা জানিয়ে বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোডার্সট্রাস্ট বিশ্বস্ত সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। ৩৫ লাখ শিক্ষার্থী এখানে অধ্যয়ন করছে। বলতে গেলে পুরো বাংলাদেশের মানচিত্রেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দখলে। এত সংখ্যক শিক্ষার্থীদে যদি আইটি স্কিল বাড়ানো যায় তাহলে ভেবে দেখুন বাংলাদেশের চিত্র কিভাবে জাদুর মতো বদলে যাবে। তাই এসব বিশ্বমানের কোর্সগুলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ ব্যাপক শিক্ষার্থীদের জন্য কর্মসংস্থানসহ দেশ গড়ার সুযোগ তৈরি করবে।
ডিজিটাল অগ্রগতিতে গবেষণার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে সে জন্য শিল্পপতিদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী জানালেন, গবেষণায় বিনিয়োগই পারবে অগ্রযাত্রাকে স্থায়ী রূপ দিতে।
অনুষ্ঠানে কোডার্সট্রাস্টের চেয়ারম্যান আজিজ আহমেদ বলেন, ভবিষ্যতের প্রতিষ্ঠানের ৬৫ শতাংশ লোক কর্ম অযোগ্য হয়ে পড়বে কারিগরি জ্ঞানের অভাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নেওয়ার পরেও চাকরি পেতে ৩ থেকে ৫ বছর সময় লেগে যায়। কোডার্সট্রাস্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল স্কিলস দিয়েই তাদের দ্রুত কর্মবাজারে সুযোগ করে দিতে পারি। যারা এখন কাজকর্মে আছে তাদেরও প্রতিনিয়ত নতুন দক্ষতা নিতে হয়। বর্তমান দক্ষতাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে হয়। কর্মবাজারে টিকে থাকতে প্রতি ৫ বছরে বিশ্বের ৪৫ শতাংশ মানুষকেই নিজেকে নতুন কিছুতে দক্ষ করে তুলতে হয়। তা না হলে পিছিয়ে পড়তে হবে। কর্মহীন হওয়ার ঝুঁকিও থাকে।
অনুষ্ঠানে কোডার্সট্রাস্টের আন্তর্জাতিক সহযোগী প্রতিষ্ঠান থিম্বল সিইও অস্কার পেড্রোসো যুক্তরাষ্ট্রে স্কুলে লেখাপড়ার সময়ে রোবটিক্স শেখার অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বলেন, কোডার্সট্রাস্টের সঙ্গে কাজ করে বাংলাদেশেও আমরা স্কুল পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের রোবোটিক্স বিজ্ঞান ও দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষায় উৎসাহিত করতে চাই।
বক্তারা বলেন, বিগত ১৪ বছরে দেশ বহুলাংশে এগিয়েছে। দারিদ্র কমেছে, বেড়েছে শিক্ষার হার। ২০১০ সালে কারিগরি শিক্ষার হার ছিল ১ শতাংশ। যা এখন ১৭ শতাংশ। ১৭ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশে পৌঁছাতে কোডার্সট্রাস্ট দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে পারবে। বাংলাদেশের যে উন্নয়নের অভিযাত্রা সে জায়গায় সবার একযোগে কাজ করা জরুরি।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মশিউর রহমান বলেন, ডিজিটাল হওয়ার পরে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অগ্রযাত্রায় কোডার্সট্রাস্ট অন্যতম সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীরা কোডার্সট্রাস্টের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেদের জীবিকার মানোন্নয়নে সক্ষম হবে।