পরবর্তী প্রজন্মের ওয়্যারলেস প্রযুক্তি নির্ভর নানা উদ্ভাবনা আমাদের প্রতিদিনকার জীবনযাত্রার ধরন বদলে দিচ্ছে। স্বয়ংক্রিয় গাড়ি চালনা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), ভার্চুয়াল রিয়ালিটি (ভিআর), বিগ ডাটা, ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি), স্মার্ট সিটি সব কিছুতেই রয়েঠে এর প্রভাব। ডিভাইসে ডিভাইসে শক্ত নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে আসছে ফাইভ জি। সব মিলিয়ে ক্রমেই রাশময় হয়ে উঠছে আমাদের ভার্চুয়াল আকাশ।
সঙ্গত কারণেই পৃথিবীজুড়ে বেড়ে চলেছে ডাটার পরিমাণ ও গুরুত্ব। ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে চাহিদা। বিপুল ডাটা প্রক্রিয়া করণে একের পর এক স্থাপিত হচ্ছে ডাটা সেন্টার। বিনোদন, কর্মসংস্থান, উদ্ভাবন থেকে শুরু করে আধুনিক অর্থনীতিতেও ডাটা সেন্টারের রয়েছে সক্রিয় প্রভাব।
এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। ডাটার এই উঠতি চাহিদা নিয়ন্ত্রণে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে হাই-টেক পার্কে দেশের প্রথম জাতীয় টায়ার ফোর ডাটা সেন্টার স্থাপন করেছে বাংলাদেশ। দুই লাখ বর্গফুট জায়গাজুড়ে দুই পেটাবাইটের সক্ষমতার এ ডাটা সেন্টার নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৫শ’ কোটি টাকার বেশি (এক পেটাবাইট সমান হচ্ছে ১০ লাখ গিগাবাইট)। এ ডাটা সেন্টারটি নির্মাণে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়েছে চীনভিত্তিক আন্তর্জাতিক শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান জেডটিই।
এ নিয়ে জেডটিই করপোরেশন বাংলাদেশের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা (সিএমও) প্যাং উই বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রথম টায়ার ফোর জাতীয় ডাটা সেন্টার নির্মাণে বাংলাদেশ সরকার আমাদের নির্বাচন করেছে। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের একইসাথে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী এ ডাটা সেন্টার নির্মাণের অংশ হতে পেরে আমরা আনন্দিত। আমার বিশ্বাস, ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে এ ডাটা সেন্টার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে।’
ডাটাসেন্টরাটির অত্যধুনিক সুবিধা বিষয়ে জেডটিই করপোরেশন বাংলাদেশের এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের জাতীয় ডাটা সেন্টারটি নির্মিত হয়েছে আপটাইম ইনস্টিটিউটের টায়ার ফোর স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী। এ মানদণ্ড নির্ধারণে বিবেচনায় ছিলো ডিজাইন, কনস্ট্রাকশন, অপারেশন ও পারফরমেন্স। টায়ার ফোর ডাটা সেন্টারের বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী ডাটা সেন্টারটি ৯৯.৯৯৫ শতাংশ সময় সচল থাকবে। অটো ডিটেক্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে এর ফল্টারিটি হার শুন্যের কোঠায়। পাওয়ার ফল্ট হলেও কোনো সমস্যা হবে না।
এদিকে আপটাইম ইনস্টিটিউটের সনদপ্রাপ্ত টায়ার ফোর ডাটা সেন্টারটি অ্যাভাইলেবিলিটি, পারফরমেন্স ও রিসাইলেন্স অনুযায়ী সর্বাধুনিক টায়ার ফোর ডাটা সেন্টার। এ ডাটা সেন্টারটি দেশের প্রথম জাতীয় ডাটা সেন্টার যার আপটাইম টায়ার ফোর ডিজাইন সার্টিফিকেশন ও ফ্যাসিলিটি সার্টিফিকেশন রয়েছে। এবং ডাটা সেন্টারটি দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম ডাটা সেন্টার যার আপটাইম টায়ার ফোরের ফ্যাসিলিটি সার্টিফিকেশন রয়েছে। আমাদের জাতীয় ডাটা সেন্টারটি ‘ফল্ট টলারেন্ট’, যার মানে ডাটা সেন্টারের কোনো একটা অংশে ত্রুটি ধরা পড়লে বা কোনো যান্ত্রিক প্রতিবন্ধকতা হলে খুব দ্রুতই এটা বন্ধ হবে এবং ডাটা সেন্টারের মূল কার্যক্রমে এর কোনো প্রভাব পড়বে না।
এ ডাটা সেন্টারটি নির্মাণের মধ্য দিয়ে জেডটিই সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত ডিসিডি (ডাটাসেন্টারডায়নামিকস) এশিয়া প্যাসিফিক অ্যাওয়ার্ডস ২০১৯- এ ‘ডাটা সেন্টার কনস্ট্রাকশন টিম অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কার জিতে নিয়েছে। ডাটা সেন্টারটি নির্মাণে জেডটিইকে অনেক প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে যার মধ্যে ছিলো পরিবহনের অসুবিধা, পাওয়ার সাপ্লাইয়ে বিঘ্ন ঘটা এবং খারাপ আবহাওয়া প্রভৃতি।