গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এক ক্লিক-এ ন্যাশনাল কার্ড স্কিম ‘টাকা পে’ উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় সোনালি ব্যাংক পিএলসি-থেকে নিজের নামেও পেয়েছেন একটি কার্ড। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সঞ্চালনায় বুধবার (১ নভেম্বর) সকালে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
এরপর ন্যাশনাল কার্ড স্কিম ‘টাকা পে’র নিরাপত্তা, বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কথা তুলে ধরেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক। সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিম, ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আরএফ হোসেন, সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাশরুর আরেফিন তাদের অফিস থেকে টাকা পে কার্ডের ব্যবহার, এর মাধ্যমে অনলাইন পেমেন্ট, এটিএম থেকে টাকা উত্তোলন করে দেখান। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে তা প্রত্যক্ষ করেন। এসময় প্রথম লেনদেন করা হয় রাষ্ট্রায়ত্ব সোনালী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংকের কার্ডের মাধ্যমে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে চালু হওয়া এই কার্ড ভিসা কার্ড, মাস্টারকার্ড ও অ্যামেক্সের মতো আন্তর্জাতিক কার্ড সেবার একটি স্থানীয় বিকল্প। পুরোপুরি দেশীয় মধ্যস্থতায় চলবে এই সেবা। বিদেশি কার্ডের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের উদ্দেশ্যে এই টাকা পে কার্ড চালু করা হয়। প্রাথমিকভাবে ব্যাংকগুলো পাইলটভিত্তিতে ‘টাকা পে’ ইস্যু করবে। প্যারিসভিত্তিক কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠান ‘ফাইম’ কার্ডটি তৈরি করেছে।
‘টাকা-পে’ কার্ড চালুর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে শুরুতে যুক্ত হচ্ছে রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি মিলিয়ে আটটি ব্যাংক।কার্ড ব্যবহারে গ্রাহক সংখ্যায় এগিয়ে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ব সোনালী ব্যাংক, বেসরকারি খাতের ব্র্যাক ব্যাংক, দি সিটি ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক (ইবিএল), ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি), ডাচ-বাংলা ব্যাংক ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক প্রথম দিকে ‘টাকা-পে’ কার্ড ইস্যু করার সুযোগ পাচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সূত্র জানিয়েছে, ‘টাকা-পে’ কার্ডের মত ভারতের রয়েছে ‘রুপি কার্ড’। একইভাবে শ্রীলঙ্কার ‘লঙ্কা-পে’, পাকিস্তানের ‘পাক-পে’, এবং মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরবের ‘মাদা-কার্ড’ নামে নিজস্ব কার্ড রয়েছে। এবার ‘টাকা-পে’ চালুর মধ্য দিয়ে সেই তালিকায় যুক্ত হল বাংলাদেশও। ডেবিট কার্ড দিয়ে শুরু করে পরবর্তীতে ক্রেডিট ও আন্তর্জাতিক কার্ড তৈরির লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী ডিসেম্বরে ‘টাকা-পে’ কার্ডের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে ডুয়ল কারেন্সি বা দ্বৈত মুদ্রা ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হতে যাচ্ছে। তখন বাংলাদেশিরা ভারতে গেলে ‘টাকা-পে’ কার্ডের মাধ্যমে ভারতীয় মুদ্রা রুপিও ব্যবহার করতে পারবেন। আলাদাভাবে বিদেশি মুদ্রা, ডলার বা রুপি বহনের প্রয়োজন পড়বে না। প্রাথমিকভাবে এটি দেশের ভেতরে ব্যবহার করা যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালিত ইলেকট্রনিক পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম ‘ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ বাংলাদেশ’র ব্যবহারের মাধ্যমে টাকা পে জাতীয়ভাবে একই সেবা দেবে।
এই প্ল্যাটফর্মে বিদেশি ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠান যুক্ত হলে টাকা পে বিদেশেও ব্যবহার করা যাবে। অচিরেই এই কার্ডের ব্যবহার ভারতেও সম্প্রসারিত হবে।গত ১৮ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার জানিয়েছিলেন, চিকিৎসা, ভ্রমণসহ বিভিন্ন কাজে প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে অনেকে ভারতে যান। এ জন্য মার্কিন ডলার কিনে ভারতে গিয়ে রুপিতে রূপান্তর করতে হয়। এতে ভ্রমণকারীকে প্রায়ই বিনিময় হারজনিত লোকসানে পড়তে হয়। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে টাকা পে নামে ডেবিট কার্ড আনছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে মানুষ টাকা বা রুপি তুলতে পারবে। এটি ভারতে ভ্রমণকারী বাংলাদেশিরা অর্থ প্রদানের জন্য ব্যবহার করতে পারেন।