প্রায় ৫০ কোটি টাকা হুন্ডির মাধ্যমে দেশ থেকে পাচারের অভিযোগে বিকাশের দুই এজেন্টকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি)।
বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) রিপোর্ট-এর উপর ভিত্তি করে মঙ্গলবার নোয়াখালীর চাটখিল এলাকা থেকে এই দুই হুন্ডি ডিলারকে গ্রেফতার করেছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে সিআইডি। গ্রেফতারকৃতদের নাম হলো শাহাদাৎ হোসেন ও বলাই চন্দ্র দাস।
বহুদিন থেকেই বিকাশের এই দুই এজেন্ট এলাকায় হুন্ডি ডিলার হিসেবে কাজ করে আসছিল। তবে ঈদকে সামনে রেখে প্রবাসীরা বিদেশ থেকে আরো বেশী পরিমান রেমিটেন্স পাঠাতে শুরু করলে সাম্প্রতিক সময়ে এই এলাকায় হুন্ডি ব্যবসা আরো জমজমাট হয়ে ওঠে।
সিআইডি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, তারা জানতে পারে নোয়াখালী জেলার চাটখিল থানার আদর্শ টেলিকম, বাবর টেলিকম, নিউ শাড়ি গ্যালারি এন্ড কসমেটিক্স ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের আড়ালে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টরা হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে কোটি কোটি টাকা পাচার করছে। সিআইডি প্রতিষ্ঠানগুলোর লেনদেন বিবরণী বিশ্লেষণ করে জানতে পারে, এসব প্রতিষ্ঠান গত তিন বছরে বিকাশের মাধ্যমে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে।
সিআইডি জানিয়েছে যে, গ্রেফতারকৃত শাহাদিাৎ হোসেন স্বীকার করেছে যে, তার চাচা কাতার প্রবাসী মনোয়ার, সৌদি প্রবাসী মিজান, হংকং প্রবাসী মমিনসহ বেশ কিছু প্রবাসী বিদেশ থেকে রেমিটেন্স সংগ্রহ করে সেই টাকা বাংলাদেশে না পাঠিয়ে নিজেদের কাছে রেখে দেয়। পরে হোয়াটসঅ্যাপ ও ইমো এর মাধ্যমে শাহাদাৎকে বিকাশে ক্যাশ-ইন করার জন্য নাম্বার পাঠায়। নির্দেশনা পাওয়ার পর বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান শাহাদাৎ-এর বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা প্রদান করে।
শাহাদাৎ হোসেন ব্যাংকে জমা হওয়া টাকা তুলে বিকাশ এজেন্ট নাম্বারের ই-মানি সংগ্রহ করে। শাহাদাৎ এবং বলাই বিদেশে থাকা ব্যক্তিদের নির্দেশনা মোতাবেক প্রবাসীদের আত্মীয়দের বিকাশ নাম্বারে ওই টাকা পাঠায়। এভাবেই এই চক্রটি হুন্ডির ব্যবসা চালিয়ে আসছে।
এই অভিযানে দু জনকে গ্রেফতার করার পাশাপাশি অর্থ পাচারের কাজে ব্যবহৃত এজেন্ট সিম, ল্যাপটপ, ৭টি মোবাইল ফোন, পেনড্রাইভ, চেক বই, ব্যাংকের এটিএম কার্ডসহ নগদ ১৯ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ডিএমপির পল্টন থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এর আগে গত নভেম্বরে হুন্ডির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকায় ঢাকা ও কুমিল্লা থেকে বিকাশের কর্মকর্তাসহ ছয় জনকে গ্রেপ্তার করেছিল সিআইডি এবং পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট।
সে সময় গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে বিকাশের ডিস্ট্রিবিউটর সেলস অফিসার (ডিএসও) কাজী শাহ নেওয়াজ, ডিস্ট্রিবিউশন হাউজ ম্যানেজার খোরশেদ আলম, তিন বিকাশ এজেন্ট মো. ইব্রাহিম খলিল, মো. নিজাম উদ্দিন এবং মো. আজিজুল হক তালুকদারকে গ্রেফতার করে সিআইডি।
একইভাবে গত বছরের সেপ্টেম্বরেই অবৈধ হুন্ডি ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম এবং সাইবার ক্রাইম ইউনিট ঢাকা এবং চট্টগ্রামে যৌথভাবে তিনটি অভিযান পরিচালনা করে বিকাশের কর্মকর্তাসহ ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করে। এই হুন্ডি চক্রের সদস্যরা সে সময় চার মাসে ২০ কোটি ৭০ লাখ টাকা পাচার করে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। তখন চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানা, ঢাকার মোহাম্মদপুর এবং খিলগাঁও মডেল থানায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে তিনটি মামলা হয়।
আর আগস্টে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা বিভাগের প্রায় ৩০০ বিকাশ এজেন্টের সিম এই অভিযোগে বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেই অভিযোগেরও তদন্ত করেছে সিআইডি।