৪ মাসে ৩ কোটি টাকার বকেয়া আদায় ও ১.৫ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব
হার্ডওয়্যার, সফওয়্যার, নলেজ এবং আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন এই চার ভাগে বিভক্ত হাইটেক পার্ক মিলিয়ে দেশজুড়ে ৯২টি স্থাপনা ছাড়াও বেসরকারি ভাবে ১৯টি প্রতিষ্ঠানকে হেই-টেক পার্কের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এই স্থাপনাগুলোর টেকসই ব্যবহারের মাধ্যমে ২০৩৭ সালের মধ্যেই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে কৌশলী অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। কেবল রাজস্ব আয় কিংবা কত টাকা রিটার্ন আসলো তা মূল্যায়ণ না করে এখান থেকে কী পরিমাণ আইটি দক্ষ জনগোষ্ঠী সৃষ্টি হয়ে দেশের সম্পদে রূপান্তরিত হবে সেদিকটাতেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। আর এখন সেই গুরুভার পালন করছেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের দায়িত্বপালনের সময়- বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি সম্পাদন, জন্ম নিবন্ধন, আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ অর্ধ-ডজন ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় নেতৃত্ব দানকারী একজন অতিরিক্ত সচিব। সেখানে নিজ কর্মস্থলের আধা কিলোমিটারের মধ্যেই গড়ে ওঠা বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক নিয়ে বৈঠক এর মাধ্যমে এর সঙ্গে পরিচয় ঘটে তার। এর পর চলতি বছরের জুলাই বছরের এসে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান থেকে স্নাতক হয়ে ত্রয়োদশ বিসিএস উত্তীর্ণ হয়ে এবং মিরপুর সেনানিবাস থেকে এনডিসি প্রাপ্ত হন এই নটরডেমিয়ান। এখন বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের দ্বাদশ ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত জি এস এম জাফর উল্লাহ।
দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র চার মাসের মধ্যে নতুন চমক দেখাতে সক্ষম হয়েছেন বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের দ্বাদশ ব্যবস্থাপনা পরিচালক। করোনার অভিঘাত কাটিয়ে আরো একধাপ এগিয়ে নিতে অলস প্রতিষ্ঠানের ইজারা বাতিলসহ সরকারের বকেয়া রাজস্ব আদায়ে কৌশলী পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি। প্রণোদনা পেয়েও শর্তভঙ্গ করায় চার মাসে আটটি প্রতিষ্ঠানের ইজারা বাতিল, প্রথম কিস্তিতেই কেবল পার্কগুলো থেকে তিন কোটি টাকার বকেয়া আদায় এবং কালিয়াকৈরের হাইটেক সিটি থেকে দেড় হাজার কোটি টাকার মতো বিনিয়োগের সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছেন। জানিয়েছেন, কালিয়াকৈরের বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটির ৮২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে লাভের মুখ দেখেছে।
একান্ত সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছেন হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জি এস এম জাফর উল্লাহ। ডিজিবাংলাটেক.নিউজ নির্বাহী সম্পাদক এস এম ইমদাদুল হক-এর সঙ্গে আলাপকালে প্রাচ্যের ড্যান্ডি খ্যাত নারায়ণগঞ্জের এই অধিবাসী বললেন, কাওরানবাজার ও যশোর সফটওয়্যার পার্ক এবং কালিয়াকৈর হাইটেক পার্ক থেকে উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছি, বকেয়া রাখাটা কোনোভাবে স্মার্টনেসের পরিচায়ক নয়। যারা স্মার্টনেস তারা বকেয়া রাখে না। কেননা, এতে প্রাপ্ত সুযোগ উপভোগ থেকে বঞ্চিত হন। আপনাকে বার বার বকেয়া নিয়ে নক করলে আপনি বিরক্ত হবেন। আপনার বিনিয়োগ ও উৎপাদন দক্ষতা বাধাগ্রস্ত হবে। এভাবে আলোচনার মাধ্যমে তিন চার বছর আগের বকেয়া থেকে চার মাসের কিন্ত দিয়ে প্রথম কিস্তিতে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি থেকে তিন কোটি টাকা আদায় করতে পেরেছি। একইভাবে তাদের প্রাপ্ত সুবিধা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নিয়েছি। এখনো ২০-২৫ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে।
আলাপের শুরুতেই নিজের সাবেক কর্মস্থলের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, পদ্মার পাড়ে ৩১ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে স্থাপিত রাজশাহী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেকপার্কের সিনেপ্লেক্স এখন হয়ে উঠেছে বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠছে। দলে দলে মানুষ সেখানে সমবেত হচ্ছে। এখানে আছে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার ও জয় সিলিকন টাওয়ার। সেখানে ট্রেনিং হচ্ছে। তরুণ প্রার্থীদের ব্যাপক সমাগম ঘটছে। জায়গাটি এখন তরুণ প্রজন্মের পদচারণায় জয়জয়াকার। ছোট ছোট স্টার্টআপগুলোও সেখানে ভালো করছে। সবগুলো হাইটেক পার্কগুলোকেই এমন ফাংশনাল করতে চাই। এখান থেকেই তরুণরা কোনো না কোনো ভাবে স্মার্ট বাংলাদেশে অবদান রাখবে।
এক প্রশ্নের জবাবে জাফর উল্লাহ বললেন, প্রায় ৩৭০ একর জায়গার ওপর স্থাপিত কালিয়াকৈরের বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিতে এখন সাতটি ব্লকে ৮২টি প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করছে। এখানেই হুন্দাই গাড়ি তৈরি করে মাত্র ২৬ লাখ টাকায় এসইউভি গাড়ি বিক্রি কররছে। এছাড়াও মোবাইল, এটিএম কার্ড ও হাইটেক ইলেট্রনিক্স হার্ডওয়্যার সেখানে উৎপাদন হচ্ছে। আমি দায়িত্ব নেয়ার পর শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমে সৌদি আরব, ফ্রান্স ও জাপান থেকে নতুন বিনিয়োগকারীদের জায়গা দিতে সক্ষম হয়েছি। এখনো সেখানে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে। চাহিদা পূরণে আরো ৯৭ একর জমির আরো উন্নয়ন কাজ করছে। এভাবেই এই হাইটেক পার্ককে এখন পুরোপুরি ফংশনাল করার চেষ্টা করছি। এজন্য কিছু কিছু ব্লকে খেলার মাঠ, মসজিদ ও ডরমেটরির ব্যবস্থা করেছি। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য রেলের পর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে আগামী ১-২ বছরের ম্যধ্যে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি পুরোপুরি ফাংশনাল হবে।
আগামীতে হাইটেক পার্কগুলোকে কীভাবে সবার কাছে জনপ্রিয় করে তুলবেন জানতে চাইলে হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যক্তি জীবনে সংস্কৃতমনা হাইটেকপার্ক কর্তপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বললেন, হাইটেক-পার্কগুলোতে দেশী-বেদেশী যারা বিনিয়োগ করছেন তাদের চিত্তবিনোদনের জন্য একটি করে সিনেপ্লেক্স স্থাপন করা হবে। এজন্য অচিরেই স্টার সিনেপ্লেক্সের সঙ্গে একটি চুক্তি হবে। আপাতত রজশাহীর পর কালিয়াকৈরেও সিনেপ্লেক্স তৈরি করতে যাচ্ছে। এতে হাইটেকপার্কগুলো সাধারণ মানুষের জন্যও আনন্দময় স্থান হয়ে উঠবে। প্রাণচাঞ্চল্লে ভরপুর এই হাইটেক পার্ক হয়েতো ২০৩৭ সালের মধ্যেই বাংলাদেশকে স্মার্ট অর্থীনীতির দেশে রূপান্তর করবে। তখন হয়তো আপনি এখানে দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের মুখে দেখবেন তৃপ্তির হাসি।
একের পর এক স্থাপনা তৈরি করলেও তা পরিচালনায় হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের পর্যাপ্ত দক্ষ বা স্মার্ট জনবল আছে কি না প্রসঙ্গ তুলতেই বোঝা গেলো, প্রশ্নটি তার মনে ধরেছে। উত্তরে বললেন, আজকে বাংলাদেশ হাইটেক পার্কে ৯২ স্থাপনা হচ্ছে অথচ জনবল মাত্র ৭৬। এটি বিস্ময়কর। যদিও বলতে পারেন এখন পর্যন্ত ১৬টির মতো শেষ হয়েছে। আগামী এক বছরে আরো ১৬টার মতো হবে। কিন্তু আগামী ৫ বছরের মধ্যে ৯২টির কাজই শেষ হবে। তাই জনবল বাড়ানোর উদ্যোগটি আমার পূর্বসুরিই করে গেছেন। তার সময়েই অর্থমন্ত্রণালয় থেকে আরো ১০৩ জনবল মিলে ১৭৯টিতে উন্নীত করার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। কিন্তু এটাও অনেকটা বকেয়ার মতো অনেক দিন আটকে ছিলো। আমি এসে দ্রুত বাস্তবায়নের প্রায় শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছি। এখন শুধু জনপ্রশাসনে বিধি ঠিক করার কাজ চলছে। এটা হতে বড়জোর সর্বোচ্চ তিন মাস লাগতে পারে।
তারপরও স্মার্ট জনবল, বিদেশী বিনিয়োগ পেতে আস্থা অর্জন, ওয়ান স্টপ সার্ভিস আরো দ্রুত দেয়া এবং অংশীজনদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলার বিষয়কে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন তিনি। এসময় আগামীতে হাইটেক-পার্ক কর্তৃপক্ষ সরকারি-বেসরকারি যৌথ অংশীদারিত্বে নতুন উদ্যোমে পরিচালিত হবে বলেও আলাপকালে ইঙ্গিত দেন জি এস এম জাফর উল্লাহ। বললেন, এতে দেশও ভালো করবে। আমদেরও চাপ কমবে। উইন উইন একটা সিচুয়েশন তৈরি হবে। এতে সকলের একটা মায়া হবে। দরদ প্রতিষ্ঠিত হবে।