ইন্টারনেটের হাত ধরে নিত্যদিন বদলে যাচ্ছে শিক্ষণ প্রক্রিয়া। একটি কম্পিউটার কিংবা স্মার্টফোনে ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে রাজ্যের বিষয় হাজির হয় হাতের মুঠোয়। ভার্চুয়াল উপস্থাপনায় আনন্দের সঙ্গে শেখায় জটিল বিষয়ও।
তাই দেশিয় ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আলোচনায় ই-লার্নিং। গৎবাঁধা শিক্ষা ব্যবস্থার বাইরে হওয়ায় ক্রমশ এবং দ্রত ই-লার্নিং এখন একটি জনপ্রিয় শিক্ষা ব্যবস্থা।
সাধারণত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থী যখন কোন একটি বিষয়ের ওপর অধ্যয়ন করেন তখন একই সময়ে অন্য বিষয়ে তার শেখার সুযোগ থাকে খুব কম। অথচ অপরাপর অভ্যাস ও অধ্যয়নের পাশাপাশি কিংবা পেশাগত কাজের ফাঁকেও ই-শিক্ষা ব্যবস্থায় অংশগ্রহণের অপার সুযোগ রয়েছে।
এ ব্যবস্থার সবচেয়ে সুবিধাজনক দিক হলো, নিজের ঘরে বসেই ক্লাশ করা, অভীক্ষার মুখোমুখি হওয়া এবং সনদপত্র অর্জন করা খুব সহজেই সম্ভব হয়। এ ক্ষেত্রে এখন লিন্ডা, কোর্সেরা, ইউডেমি, ইউডাসিটির মত ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্মের সুখ্যাতির কথা মানুষের মুখে মুখে ফিরছে।
২০০২ সালে ম্যাসচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) প্রথমবারের মত ৫০টি ই-লার্নিং কোর্স চালু করেছিলো। এমআইটি-এর উদাহরণ খুব দ্রতই সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। দুনিয়াব্যাপী শুরু হয় Open Courseware Consortium. অনলাইন জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে এখন সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফরমের নাম ‘খান একাডেমি’। ২০০৬ সালে বিনামূল্যে বিশ্বমানের শিক্ষা পৃথিবীর সকল প্রান্তে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে খান একাডেমির ওয়েবসাইট চালু করা হয়। এখানে রয়েছে বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানচর্চামূলক অনুশীলন, নির্দেশনামূলক ভিডিও, ব্যক্তিগত ড্যাশবোর্ড এবং শিক্ষক সহায়িকা। খান একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশি বংশভূত সালমান খান ইতিমধ্যে ভিডিও টিউটোরিয়ালগুলো বাংলায় অনুবাদের উদ্যোগ নিয়েছেন।
বাংলা ভাষায় বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানার্জনের জন্য খুবই জনপ্রিয় ই-লার্নিং ওয়েব সাইটের নাম শিক্ষক ডটকম। প্রায় সকল বিষয়ের কোর্স থাকলেও কম্পিউটার প্রোগ্রামিং সংশ্লিষ্ট প্রচুর কোর্স রয়েছে এখানে। ফলে ঘরে বসে যে কোন বয়সের, যে কেউ নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারেন।
পাশাপাশি অন্য বন্ধুদের সঙ্গে তুলনা ও প্রতিতুলনা করে নিজে কতটুকু ই-শিক্ষার্থী হিসেবে এগিয়ে বা পিছিয়ে আছেন তা জানতে পারেন। ই-লার্নিং ব্যবস্থাকে শক্তিশালীকরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের আওতায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়ধীন টিচিং কোয়ালিটি ইম্প্রুভমেন্ট ইন সেকেন্ডারী এডুকেশন প্রজেক্টের মাধ্যমে নবম-দশম শ্রেণির ইংরেজি, গণিত, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞানসহ বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়গুলোর অপেক্ষাকৃত জটিল অধ্যায়গুলোকে ই-লানিং ম্যাটেরিয়ালসে রূপান্তর করা হয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সেসিপ প্রকল্পের মাধ্যমেও ই-লানিং কার্যক্রম ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে। সারা বাংলাদেশে ৬৪০টি ই-লার্নিং সেন্টার স্থাপন এবং বিপুল পরিমাণ ই-লানিং ম্যাটেরিয়ালস তৈরি করেছে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ও ই-বুক প্রবর্তিত করেছে।
ই-লার্নিং ব্যবস্থায় একজন শিক্ষার্থীকে কখনই শিক্ষকের মুখোমুখি না হলেও চলে। তবে শিক্ষার্থী তার কৌতুহল নিবারণের জন্য কখনও ই-মেইলের মাধ্যমে বা চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে তার জানা বা অজানার দ্বিধা-দ্বন্দ্ব দূর করতে পারেন। এছাড়া আলোচনার মাধ্যমে তার সহপাঠীর সঙ্গে উদ্ভূত সমস্যা শেয়ার করতে পারেন। তবে কখনও কখনও ই-লার্নিং ম্যাটেরিয়ালস পাওয়ার জন্য এবং ই-লার্নিং কোর্স সম্পন্ন করার জন্য মূল্য পরিশোধ করতে হয়।
দেশের সর্বত্র ভাল ব্যান্ডউইথ, সহজলভ্য ও কমমূল্যে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করা গেলে গ্লোবাল শিক্ষা ব্যবস্থায় ই-লার্নিং নতুন এক সংস্কৃতি ও চর্চার জায়গায় উপনীত হবে। মূলত বাংলাদেশের ই-লার্নিং ব্যবস্থাকে সাধারণ মানুষের মধ্যে সহজলভ্য ও জনবান্ধব করে একে দেশের শিক্ষা ও সংস্কৃতির মূল অংশে পরিগণিত করতে হবে।
[প্রিয় পাঠক, আপনিও ডিজি বাংলা’র অংশ হয়ে উঠুন। প্রযুক্তি বিষয়ক খবরা-খবর, মোবাইল-গেম রিভিউ, স্কুল-কলেজ পর্যায়ের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উদ্ভাবন-গবেষণা, মেলা, ফ্যাশন, লাইফস্ট্যাইল, ক্যারিয়ার, পরামর্শ, টিপস নিয়ে লিখুন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ভিডিও/ছবিসহ মেইল করুন[email protected] এ ঠিকানায়। আপনার সঙ্গে যোগাযোগের নম্বরটিও লিখুন। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে। মনোনীত লেখার জন্য সম্মানি দেয়া হবে।]