ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ইভ্যালির সাভারের দুটি গুদামে ২৫ কোটি টাকার পণ্য রয়েছে। এছাড়াও ৬টি পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে আছে প্রায় ২৫ কোটি টাকা। এর বিপরীতে গ্রাহক ও ব্যবসায়ীদের কাছে প্রতিষ্ঠানটির দায়ের পরিমাণ ৪০৩.৮০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে অবশিষ্ট সম্পদ ও ব্যাঙ্কের টাকা দিয়ে গ্রাহক ও মার্চেন্টদের দায় মেটানো কোম্পানিটির পক্ষে অসম্ভব। কিন্তু ‘এক পাসওয়ার্ডেই আটকে আছে ইভ্যালির গ্রাহকদের অর্থ ‘।
ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে থাকা মাহবুব কবীর মিলন জানান, অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেসে থাকা ইভ্যালির সার্ভারের পাসওয়ার্ড জানতে আদালতের অনুমতি নিয়ে জেলে গিয়ে রাসেলের সঙ্গেও কথা বলা হয়েছে। রাসেল জানিয়েছেন, পাসওয়ার্ডটি তার মনে নেই। এটি একটা জটিল পাসওয়ার্ড, যা তার ডেস্কের ড্রয়ারে একটি কালো ডায়েরিতে লিখে রাখা ছিল। কিন্তু আমরা যখন এই অফিসে বোর্ড গঠন করেছি তখন কোনো কাগজপত্রই পাইনি।
মিলন জানান, আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, এটুআই, সিআইডিসহ একাধিক আইটি এক্সপার্টদের সঙ্গে বসে অ্যামাজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে পাসওয়ার্ডটি উদ্ধারের চেষ্টা করেছি, কিন্তু সম্ভব হয়নি। অ্যামাজন বলেছে, ‘পাসওয়ার্ড ছাড়া কোনো তথ্য পাওয়া যাবে না। যে অ্যাকাউন্টটি তৈরি করেছে, সে ছাড়া অন্যকারোর চেষ্টায় কাজ হবে না।’ এমনকি অ্যামাজন ইভ্যালির কাছে কত টাকা পায়, সেটিও আমরা জানি না।
মাহবুব কবীর মিলন আরও বলেন, আমরা ইভ্যালির সাবেক আইটি প্রধান তানভিরের সঙ্গে কথা বলেছি। তানভীরের দাবি তিনি রাসেল গ্রেফতারের আরও দু’মাস আগে চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন, তখন আইডি পাসওয়ার্ড সহ সব তথ্য রাসেলকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। আগের পাসওয়ার্ড এখন কাজ করছে না, অর্থাৎ রাসেল তা পরিবর্তন করেছিলেন। কিন্তু সেটি এখনো উদ্ধার করা যায়নি। সার্ভারে প্রবেশ করা না গেলে গ্রাহকদের লেনদেনের তথ্যও পাওয়া যাবে না। গেটওয়েতে আটকে থাকা পণ্য বা টাকাও ছাড় পাবে না।
ধানমন্ডির ইভ্যালি কার্যালয়ে ইভ্যালির বোর্ড সদস্যদের এক সংবাদ সম্মেলনে শুক্রবার (১ জুলাই) সন্ধ্যায় এমন হতাশার কথাই উচ্চারিত হয় নন্দিত এই অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিবের কণ্ঠে।
ইভ্যালি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন শেষে বের হয়ে গ্রাহকদের প্রশ্নের মুখে তিনি বলেন, আস্থা রাখুন। কোম্পানি বাঁচলে ব্যবসা চলবে। কোম্পানি না বাঁচলে টাকা ফেরতের বন্দোবস্ত করা হবে। ধৈর্য ধরুন, ফেসবুকে গালাগালি বন্ধ করুন। আমাদের ওপর আস্থা রাখুন। কোম্পানি বাঁচানোর চেষ্টা করছি। আপনারা যেন পণ্য অথবা টাকা ফেরত পান, সেই চেষ্টা করছি।
সংবাদ সম্মেলনে ইভ্যালির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক জানান, সাভারে ইভ্যালির দুটো গোডাউন আছে। সেখানে আমাদের ইনভেন্ট্রি করতে হয়েছে। একটা হলো পিঙ্ক সিটিতে। সেখানে দুই হাজারে ৬৫৯টি আইটেম রয়েছে। পণ্যগুলোর বাজারদর কমপেয়ার করে দেখা গেছে, সেখানে প্রায় ১৬ কোটি টাকার পণ্য আছে। বলিয়াপুরের আরেকটা গোডাউন আছে। সেখানে পাওয়া গেছে, এক হাজার ৭৩৬টি আইটেম। বাজারদর যাচাই করে দেখাগেছে, সেখানে প্রায় নয় কোটি টাকার পণ্য আছে। প্রায় ২৫ কোটি টাকার জিনিস দুটো গোডাউনে রয়েছে। এছাড়া নয়টি কাভার্ডভ্যান ও পাঁচটি গাড়ি আছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে ইভ্যালির যে অর্থের তথ্য পাওয়া গেছে এবং ব্যাংকে যে টাকা আছে, তা দিয়ে গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধ সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, ‘এক পাসওয়ার্ডেই আটকে আছে ইভ্যালির গ্রাহকদের অর্থ। ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ রাসেলের কাছে বারবার জিজ্ঞাসাবাদ করার পরেও পাসওয়ার্ড মনে করতে পারিননি তিনি। পাসওয়ার্ড যে ডায়রিতে লিখে রাখার কথা কলেছেন সেটও উদ্ধার করতে পারেনি পরিচালনা পর্ষদ। মূল সার্ভার সচল না হওয়া পর্যন্ত গেটওয়েতে থাকা প্রায় ২৫ কোটি টাকা ছাড় করবে না ব্যাংকগুলো। পাওনাদারদের সঠিক তথ্য না পাওয়ায় প্রায় ২৫ কোটি টাকার সমপরিমাণ মূল্যের পণ্য থাকলেও তা দেওয়া যাচ্ছে না।’
তাছাড়া ‘ইভ্যালির সিইও মো. রাসেল ও তার স্ত্রী ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন বিনিয়োগকারী আনতে পারবেন বলে উচ্চ আদালতে একটি আর্জি দিয়েছেন। তারা যদি বিনিয়োগকারী আনতে পারে তবেই কোম্পানি চলবে, পাওনাদাররাও টাকা পাবে। এটা নির্ভর করছে তারা বিনিয়োগকারী আনতে পারবেন কি-না।’—এমনটা জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- বোর্ডের সদস্য সাবেক সচিব মোহাম্মদ রেজাউল আহসান, মাহবুবুল করিম, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফখরুদ্দিন আহম্মেদ, আইনজীবী ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ।
সংবাদ সম্মেলনে ই-ভ্যালির সম্পদ ও জরুরী নথি সরিয়ে ফেলার পেছনে ভবন মালিকের দিকেও প্রশ্নের বান ছুঁড়ে দেন বোর্ড সদস্যরা। উঠে আসে নতুন বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটিকে ফের সচল করার উদ্যোগের বিষয়ও। তবে চলতি জুলাই মাসের শেষে আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির বর্তমান আর্থিক অবস্থা পর্যালোচনা করে দায়-দেনা ও সম্পদের নিরীক্ষা প্রতিবেদন (অডিট রিপোর্ট) তৈরি করে আদালতে উপস্থাপন করার পর কী রায় আসে তার ওপরই নির্ভর করছে ভবিষ্যত।