বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কারণ দর্শানোর নোটিসের পরিপূর্ণ জবাব যথাসময়ে দাখিল করতে পারেনি আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি। ছয়টি প্রশ্নের মধ্যে চারটি প্রশ্নের জবাব দিয়ে আরও ছয়মাস সময় চেয়েছে তারা।
ইভ্যালির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উঠে আসা অনিয়মের বিষয়ে গত ১ আগস্টের মধ্যে উত্তর চেয়ে দেয়া ওই কারণ ‘দর্শানোর নোটিস’ এ উত্তর সন্তোষজনক না হলে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক মোঃ হাফিজুর রহমান।
বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে বুধবার এ বিষয়ে বৈঠকে বসছেন তার নেতৃত্বাধীন ৯ সদস্যের সদস্যের আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি। কমিটিতে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের প্রতিনিধিসহ কোম্পানি আইন বিশেষজ্ঞ আইনজীবী তানজীব উল আলমও রয়েছেন।
নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে, ইতোমধ্যেই ই-ভ্যালি যে জবাবগুলো দিয়েছে তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ জন্যই মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠানটিকে বৈঠক থেকে কয়েক মাস সময় দেয়া হতে পারে। কেননা সরকার ই-ভ্যালির বিরুদ্ধে এখনই কোনও সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে না।
তবে এই সময়ের মধ্যে ভোক্তা স্বার্থ নিশ্চিত করতে ডিজিটাল কমার্স নির্দেশনা পরিপালনে ব্যর্থ হলে বিতর্কিত ইভ্যালির কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ করা হতে পারে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যেই অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করা পণ্য একই শহরের মধ্যে হলে সর্বোচ্চ পাঁচ দিনের মধ্যে এবং ভিন্ন শহর বা গ্রামে হলে ১০ দিনের মধ্যে ডেলিভারি দেয়ার যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তা পরিপালন না করা বিষয়ে অভিযোগ ওঠায় সম্প্রতি ই-ভ্যালিকে আরেকটি চিঠি দেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সহকারী পরিচালক-১ এস এম নাজিয়া সুলতানা স্বাক্ষরিত চিঠিতে এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে তা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে বলা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের একটি তদন্ত প্রতিবেদনে ইভ্যালির বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এবং দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর বিভিন্ন ধারা লঙ্ঘন করার তথ্য উঠে আসার পর এ চিঠি পাঠানো হয়।
সূত্রমতে, এমন পরিস্থিতিতে ই-ভ্যালিকে সময় দেয়া হলেও ডিজিটাল কমার্স পরিচালনার নির্দেশিকার বাইরে গিয়ে যেনো ব্যবসা করার কোন সুযোগ না পায় সেজন্য কড়া নজরদারিতে রাখার বিষয়েও কিছু নির্দেশনা আসতে পারে বৈঠক থেকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেছেন, ইভ্যালির বিষয়ে পরবর্তী করণীয় কী হবে, তা আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে চূড়ান্ত করা হবে। আর এই ক্ষেত্রে গ্রাহকদের স্বার্থ যেন কোনোভাবেই ক্ষুণ্ন না হয়, সেদিকে আমরা সর্বোচ্চ নজর দেবো।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ৬ প্রশ্ন
১. গত ১৪ মার্চ পর্যন্ত গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছে মোট ৪০৭ কোটি ১৮ লাখ ৪৮ হাজার ৯৯৪ টাকা দায়ের বিপরীতে ইভ্যালির কাছে মাত্র ৬৫ কোটি ১৭ লাখ ৮৩ হাজার ৭৩৬ টাকা চলতি সম্পদ থাকার কারণ কী?
অবশিষ্ট টাকা ইভ্যালির কাছে আছে কিনা? থাকলে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে, না থাকলে তার পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা দিতে হবে।
২. ১৫ জুলাই পর্যন্ত গ্রাহকের কাছে মোট দায়ের পরিমাণ কত, গ্রাহকের কাছ থেকে নেওয়া অর্থের বিনিময়ে যে পণ্য দেওয়ার কথা, তার কতটা দেওয়া হল?
এসবের বর্তমান অবস্থা কী, এ বিষয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
৩. ১৫ জুলাই পর্যন্ত মার্চেন্টদের কাছে দায়ের পরিমাণ কত এবং তা পরিশোধের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
৪. ব্যবসা শুরুর পর থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত ইভ্যালি গ্রাহকদের কাছ থেকে কী পরিমাণ টাকা নিয়েছে, মার্চেন্টদের কী পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করেছে এবং প্রশাসনিক ও অন্যান্য খাতে কী পরিমাণ অর্থ খরচ করেছে, তার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ।
৫. ইভ্যালির ব্যবসা পদ্ধতি কী এবং বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণের পরিকল্পনা কী?
৬. ডিজিটাল কমার্স পলিসি ২০২০ (সংশোধিত) এবং ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকার সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন কোনো ব্যবসা পদ্ধতি বা কার্যক্রম ইভ্যালিতে এখনও আছে কিনা, থাকলে কী—এসব বিষয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা।
ই-ভ্যালির ৪ জবাব
১. ইভ্যালির ব্যবসা পদ্ধতি এবং বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণের পরিকল্পনা কী? এমন প্রশ্নের জবাবে ইভ্যালি বলেছে, “৩১ মে থেকে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যে পণ্য সরবরাহে ‘প্রায়োরিটি ক্যাম্পেইন’ শুরু হয়েছে। এ ছাড়া ২ জুলাই থেকে ‘টি-১০ ক্যাম্পেইন’ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি মার্চেন্টদের সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে ব্যবসা বৃদ্ধি ও আগের প্রতিশ্রুত পণ্য গ্রাহকদের কাছে সরবরাহের ব্যবস্থা করা হবে।”
২. ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা এবং ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকার সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন কোনও ব্যবসা ইভ্যালি করছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে ইভ্যালি বলেছে, ‘নীতিমালা ও নির্দেশিকার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই সব কার্যক্রম পরিচালনা করছে ইভ্যালি।’
৩. ৩ নং প্রশ্নের জবাবে ই-ভ্যালি বলেছে, ‘প্রত্যেক মার্চেন্টের অর্ডারের বিপরীতে সরবরাহের বর্তমান অবস্থা যাচাই, সরবরাহকৃত পণ্য গ্রাহক যথাযথভাবে পাওয়ার নিশ্চয়তার প্রমাণ, ত্রুটিপূর্ণ পণ্যের অভিযোগ, আগের বিলের সমন্বয়সহ নানা বিষয় জড়িত। পাঁচ হাজারের বেশি মার্চেন্টের এ হিসাব সম্পন্ন করাটা সময়সাপেক্ষ।
২. প্রথম প্রশ্নের জবাবে বলা হয়েছে, ‘নিরীক্ষা শেষ হওয়ার পর সকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব হবে। এ সময়ের মধ্যে ইভ্যালি আগের প্রতিশ্রুত পণ্যের সরবরাহ শেষ করার চেষ্টা করবে এবং প্রতি ১৫ দিন পর সরবরাহের অগ্রগতি প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়কে জানাবে।’