সাইবার অপরাধ বন্ধ করতেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ রহিতকরণ এবং নতুনভাবে প্রণীত সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ করা হয়েছে। বাক বা সংবাদ পত্রের স্বাধীনতাকে খর্ব করতে না পারে সে জন্য ৫ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা জামিন অযোগ্য বেশ কিছু ধারার জামিনযোগ্য করার পাশাপাশি যেসব ধারায় দ্বিতীয় বারে অপরাধে বাড়তি সাজার বিষয় বাতিল করা হয়েছে। আইনের ১৭, ১৯ ও ৩৩ ধারায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সাজায় কঠোরতা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও, নতুন আইনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সরাসরি অভিযোগ ছাড়া কারও ডিভাইস চেক করার ক্ষমতা দেওয়া হয়নি।
নতুন আইন নিয়ে বৃহস্পতিবার আইসিটি বিভাগের বিসিসি সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তিনি বলেছেন, আগের আইনে প্যানালকোডের সাজা থাকলেও নতুন আইনে তা নেই। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত নিয়ে পেনাল কোডের ২৯৫ ধারায় থাকা সাজার সঙ্গে সামাঞ্জস্য করে রাখা হয়েছে। প্যানালকোডের অপরাধ ফিজিক্যালি করার জন্য হলেও এটা করা হয়েছে ডিজিটালি করার জন্য। ডিজিটাল ব্যপ্তি বেশি হওয়ায় এখানে সাজার পরিমাণ বেশি রাখা হয়েছিলো। আমরা এখন সেটা কমিয়ে দিয়েছি। কয়েক জায়গায় একেবারেই বন্ধ করেছি। কেবল ৫২ ধারার অপরাধ অজামিন যোগ্য। আগে জামিন অযোগ্য থাকলেও নতুন আইনে ১৭, ১৯, ২১, ২৭, ৩০ ও ৩৩ ধারা জামিনযোগ্য করা হয়েছে। জামিনযোগ্য ধারায় আরো ধারা যুক্ত হতে হবে। একইসঙ্গে ২৯ ধারায় অপরাধ সাক্ষ্য -প্রমাণে প্রমাণিত হলে অনধিক ২৫ লাখ অর্থ দণ্ড করা হলেও জেলের বিধান রাখা হয়েছে। মানহানির ক্ষেত্রে এই পরিমাণ বিচারক নির্ধারণ করবেন।
তিনি বলেছেন, এই্ আইন নতুন বদলে পুরোনো মদ নয়। অনেক কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে উপস্থাপনায় আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জানিয়েছেন, ১৭ ধারায় গুরুত্ব তথ্য পরিকাঠামোতে বেআইনি প্রবেশের দায়ে অপরাধ ও দণ্ড বিষয়ে বলা হয়েছে। ১৮ ধারায় কম্পিউটার ডিভাইস ও সিস্টেমে প্রবেশকে জামিন যোগ্য অপরাধ। এছাড়াও ২৭ ধারায় সাইবার সন্ত্রাসী কাজের অপরাধের প্রকৃতি দণ্ড তুলে ধরা হয়েছে। ৩৩ ধারায় হ্যাকিং সংক্রান্ত অপারাধ ও দণ্ডের বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।
তিনি বলেন, ডেটা প্রোটেকশন আইন ২০২৩ হবে দেওয়ানী অপরাধ হিসেবে জরিমানা এবং সাইবার সিকিউরিটি আইন ২০২৩-কে ফৌজদারী হিসেবে কারাদণ্ড ও জরিমানা উভয়ই রাখা হয়েছে।
শুরুতেই আইনের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে সাইবার অপরাধীদের লাগাম টানতেই সকলের মত নিয়েই আইন করার হচ্ছে বলে জানান আইসিটি প্রতিমন্ত্রী। বলেছেন, খসড়া আইনটি গত রাতে ওয়েব সাইটে আপলোড করা হয়েছে। আগামী ১৪ দিন সবাই আইনটি নিয়ে মতামত দিতে পারবেন।
বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ‘জামিন অযোগ্য’ হিসাবে বিবেচিত কিছু ধারাকে ‘জামিনযোগ্য’ করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে সাইবার নিরাপত্তা আইনে। সেই সঙ্গে পুনঃঅপরাধের শাস্তির বিধানও বাদ দেওয়া হয়েছে নতুন আইনে।
সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে নীতিগত অনুমোদনের পর বুধবার তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের ওয়েবসাইটে খসড়া আইনটি প্রকাশ করা হয়েছে নাগরিক ও অংশীজনদের মতামতের জন্য।
দুই আইন মিলিয়ে দেখা যায়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ধারা ১৮ এর উপ-ধারা (১) এর দফা (খ), ২০, ২৫, ২৯ ও ৪৭ এর উপ-ধারা (৩) এর অপরাধসমূহ ‘অ-আমলযোগ্য ও জামিনযোগ্য’ ছিল। প্রস্তাবিত আইনের এগুলোর সঙ্গে ২২, ২৩, ২৪, ২৬, ২৮, ৩১ ও ৩২ ধারাকেও ‘জামিনযোগ্য’ করা হয়েছে।
আগের আইনে ৩৪ নম্বরে ধারায় থাকা হ্যাকিংয়ের শাস্তির বিধান নতুন আইনে ৩৩ নম্বরে এসে ‘অজামিনযোগ্য’ই থাকছে।
সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার পথে বাধা হিসাবে চিহ্নিত ৩৩ ধারা বাতিলের পাশাপাশি অনলাইন মাধ্যমে মানহানির বিধানেও আনা হয়েছে পরিবর্তন।
অন্যদিকে, জামিনযোগ্য হিসাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে থাকা ৪৭ থেকে বর্তমান আইনে ৪৬ নম্বরে উঠে আসা বিধান জামিনযোগ্যই থাকছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব সামসুল আরেফিন, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব গোলাম সারোয়ার, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব মোঃ মইনুল কবির, সাবেক সচিব শহিদুল হক এবং ডিএসএ মহাপরিচালক আবু সাঈদ মো: কামরুজ্জামান সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।