‘স্মার্ট শিক্ষা ইকো-সিস্টেম’ গড়ে তোলার অংশ হিসেবে বুধবার রাতে উন্মোচন করা হলো প্রযুক্তি ভিত্তিক মূল্যায়ন অ্যাপ “নৈপুণ্য”। নতুন শিক্ষাক্রমকে সামনে রেখে নির্ধারিত প্রান্তিক যোগ্যতাগুলো শিক্ষার্থীরা সুষ্ঠুভাবে অর্জন করতে পারছে কি না মূল্যায়নে এই অ্যাপটি ডেভেলপ করেছে অ্যাসপায়ার টু ইনোভেট।
বুধবার দেশের শিক্ষা কারিকুলামে প্রথমবারের মতন প্রযুক্তি ভিত্তিক মূল্যায়ন অ্যাপ- নৈপুণ্য অ্যাপটি উদ্বোধন করে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, নতুন কারিকুলামে শিক্ষার্থীদের নির্ভুল ও গভীরভাবে মূল্যায়ন করবে এই অ্যাপ।
নতুন শিক্ষা কারিকুলাম নিয়ে অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, একটি মহল গুজব ছড়াচ্ছে নতুন কারিকুলামে ধর্ম শিক্ষাকে উপেক্ষা করা হয়েছে। বাস্তবতা হলো সব বিষয়কে সমানভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
দীপু মনি বলেন, ‘অনেকে বলছেন, নতুন কারিকুলামে পরীক্ষা থাকবে না, ধর্মশিক্ষাও থাকবে না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে— অন্য বিষয়ে মূল্যায়ন যেমন হবে, ধর্মীয় শিক্ষাও সেভাবেই মূল্যায়ন করা হবে। আমরা শিক্ষার সঙ্গে জীবন এক করে দিতে চাই। ছাত্র-ছাত্রীরা এখন জীবনমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত হবে। চার দেয়ালের মধ্যে এখন আর শিক্ষার সীমাবদ্ধ থাকবে না।’
অনুষ্ঠানে অন্যানের মধ্যে বক্তব্যে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক আগামীতে বাংলাদেশ মাইক্রোচিপ নকশার মাধ্যমে বিলিয়ন ডলার আয় করতে সক্ষম হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
তিনি জানান, স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্য বাস্তবায়নে নতুন কারিকুলাম শিক্ষার্থীদের আরো দক্ষ ও কর্মমুখী হিসেবে গড়ে তুলবে। নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রমে মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় নৈপূণ্য অ্যাপটি ব্যবহার করবেন শিক্ষকরা।
পলক বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে আমাদের বর্তমান শিক্ষার্থীরা স্মার্ট বাংলাদেশে প্রবেশ করবে। নতুন শিক্ষাক্রম তাদের স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করবে। সরকার আমাদের শিক্ষার্থীদের নতুন শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে যুগোপযোগী হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছে।
এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী আরাফাত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, নাট্যনির্দেশক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা নাসির উদ্দিন ইউসুফ, নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, সাংবাদিক ও কলামিস্ট সুভাষ সিংহ রায়সহ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এর অধীনস্ত বিভিন্ন বোর্ড ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রচলিত শিক্ষা কাঠামোয় পরীক্ষানির্ভর হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মাঝে ফলনির্ভরতা ছিল। তবে, নতুন শিক্ষাক্রমে ফলনির্ভরতা রাখা হয়নি। ফলে শিক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষাক্রমে আরও বেশি শিখতে পারবে। তিনি বলেন, হেফজ সিস্টেমে যারা মুখস্থ করছেন, তারা কিন্তু ভাষা শিখতে পারছেন না। যে কারণে নতুন শিক্ষাক্রম এসেছে। এখানে শিক্ষার্থীদের শুধু পাঠদান করার মধ্যেই শিক্ষা আবদ্ধ থাকবে না বরং শিক্ষার্থীরা নিজেরা তা সাথে সাথে করে দেখাবে।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, সুন্দর করে শিক্ষার্থীদের প্রতিটি বিষয় এই অ্যাপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশের যে যাত্রা শুরু হয়েছে এটি তার প্রমাণ। শিক্ষার্থীদের ছোটবেলা থেকেই স্মার্ট নাগরিক তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল সংস্কার শুরু হয়েছে- যা অনেকের প্রত্যাশা ছিল। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এখন অন্য এক দিগন্তে এগিয়ে যাচ্ছে।
ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বক্তব্যে বলেন, আমরা পিছিয়ে যাবো, না এগিয়ে যাবো তা ভাবতে হবে। নতুন শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে অনেক অপপ্রচার হচ্ছে। নতুন শিক্ষা কারিকুলামে মুখস্তবিদ্যা থেকে বের হতে পারবো।
শিক্ষাক্রম রূপান্তরের পটভূমি নিয়ে অনুষ্ঠানে তথ্যচিত্র উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক এম তারিক আহসান।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এর নির্দেশনায় অ্যাপটি তৈরি করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়নে সহযোগী ছিলো ইউনিসেফ।
অনুষ্ঠানে এটুআই কর্মকর্তারা জানান, নৈপুণ্য অ্যাপ হবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ব্ল্যাক বক্স। ভবিষ্যতে কোনো তথ্য দরকার হলে এই অ্যাপ থেকে সহযোগিতা পাওয়া যাবে। শিক্ষার্থীরা যা-ই অর্জন করবে, তার রেকর্ড এখানে থাকবে। শিক্ষার্থীদের তথ্য এই অ্যাপে সংরক্ষণ করা যাবে। শিক্ষার্থীরা তাদের অর্জন যে কোনো সময় এই অ্যাপে দেখতে পারবে। এটি শিক্ষা ব্যবস্থার একটি বড় মাইলফলক হয়ে থাকবে।