কেবল আকাশ-নৌ বা ভূ-সীমানা নয় অন্তর্জালেও নিজেদের সার্বভৌমত্ব রক্ষা এখন সময়ের দাবি। সেজন্য এখনো গড়ে ওঠেনি তিন বাহিনীর পাশাপাশি সাইবার বাহিনী। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের মতোই বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের বিজিডি ই গভঃ বিডি সার্ট এর অধীনে এই কাজ শুরু করেছে টাইগার সাইবার যোদ্ধারা। প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদের নির্দেশনা আর প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের তত্বাবধানে চলছে তিনটি সাইবার ড্রিল। আন্তঃ বিশ্ববিদ্যালয় আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ড্রিল শেষে বিজয়ের মাসে অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় সাইবার ড্রিল।
বাংলাদেশ কম্পিউটার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম (সার্ট) এর আয়োজনে ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবসের সন্ধ্যায় শুরু হওয়া ৩০ ঘণ্টার এই ড্রিলে এবার অংশ নিয়েছিলো ২৪৭ জন।
আর্থিক ও বাণিজ্যিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে পেছনে ফেলে এবার বর্ষসেরা সাইবার বীরের মুকুট জিতলো শিক্ষানবিশ সাইবার যোদ্ধাদের দল ডিসক্লসিফাই। সাইবার দুনিয়ার ওঁত পেতে থাকা ওয়েব এক্সপ্লয়টেশন, রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং আর হ্যাকার হানা মোকাবেলা করে দলটি নিজেদের ঝুলিতে পুরেছে ৭৭০০ নম্বর।
ওপেন সোর্স ইন্টিলিজেন্স ফ্রেমওয়ার্ক, ডিজিটাল ফরেন্সিক এবং নেটওয়ার্ক সুরক্ষার দুর্গম পথ পেরিয়ে ছুঁয়েছে জাতীয় সাইবার ড্রিলের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। প্রতিযোগিতায় সমসংখ্যক ৭৬০০ নম্বর পেয়ে উত্তর প্রদানের সময়ের উপর ভিত্তি করে রানার্স আপ হয়েছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লাইন্ডার্স এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ সোসাইটি। সমান পয়েন্ট তুলে চতুর্থ হয়েছে দিনাজপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে অংশগ্রহণকারী দল ডিপিআই নাইটস। আর পঞ্চম অবস্থানে আছে সিটিএফ স্টার্টআপ ভুলনসিস।
দেশের ৫৩টি দলকে পেছনে ফেলে প্রথম হওয়া দল ডিসক্লসিফাই দলনেতা ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ছাত্র তাসদির আহমেদ। ড্রিলে তার সঙ্গে ছিলেন একই বিশ্ববিদ্যলয়ের ছাত্র মো. রাসেল ভূঁইয়া, হ্যাক দ্য বক্স কনটেন্ট ইঞ্জিনিয়ার রায়হান আহমেদ, ইউআইটিএস শিক্ষার্থী মো. অটল খান এবং ঢাকা স্টেট কলেজের শিক্ষার্থী আমির হামজা।
অ্যাকাডেমিক চ্যাম্পিয়ন এবং সার্বিক ভাবে দ্বিতীয় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লাইন্ডার্স দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন সিএসব মারুফ বিন মুর্তাজা। তার সঙ্গে লড়েছেন শাহরিয়ার হাসান মিকি, মোঃ আরাফাত সরকার এবং মো. রশিদ শাহরিয়ার স্বচ্ছ।
অ্যাকাডেমিক রানার্সআপ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ সোসাইটির নেতৃত্বে ছিলেন আল আরাফাত তানিন। তার সহযোদ্ধারা হলেন- তাউসিফ শাহরিয়ার, আতাফ ফজলে দ্বীন আহমেদ, জুহির জাকি এবং আব্দুল্লাহ আল ফাহাদ।
জাতীয় পর্যায়ে চতুর্থ হলেও রাজধানীর বাইরে থেকে প্রথম দিনাজপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট নাইটস দলনেতা তারেক আহমেদ জনি মনে করেন, এই স্বীকৃতি দেশে ভার্চুয়াল আকাশকে নিরাপদ রাখতে তাদেরকে স্বঙ্কল্পবদ্ধ করলো। ড্রিলে তার সহযোদ্ধা ছিলো ইসরাত ইমন শাহ, মুবাশ্বের আল আকিফ, মোছাঃ শাপলা আখতার ও সজীব আহমেদ।
সাইবার উদ্যোক্তা হিসেবে এবারের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পঞ্চম স্থান লাভ করে সিটিএফ স্টার্টআপ ভুলসিস। দলনেতা হাসিবুল হাসান শাওনের নেতৃত্বে লড়াই করেছে সহ-প্রতিষ্ঠাতা তারিকুল ইসলাম, আসিফ হোসাইন, আবু সাঈদ রাহাত এবং মুযতাহিদুল ইসলাম।
জাতীয় সাইবার ড্রিলের ফলাফল বলছে, এবারের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে প্রায় ১০টির মতো ব্যাংক। তবে জাতীয় এই সাইবার ড্রিলে অংশ নেয়নি গেলো অক্টোবরে অনুষ্ঠিত আর্থিক খাতের সাইবার ড্রিলের সেরা দলগুলো। অংশগ্রহণকারী ব্যাংকগুলোর মধ্যে এই ড্রিলে ব্যাংক এবং নন-ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রথম হয়েছে তালিকার ১৮তম অবস্থানে থাকা রুপালী ব্যাংক। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে জনতা ব্যাংকের সাইবার ফ্রন্ট লাইনার। আর তৃতীয় মার্কেন্টাইল ব্যাংকের এক্সফোর্স।
এবারের ন্যাশনাল সাইবার ড্রিলে রূপালী ব্যাংকের পক্ষে অংশ নিয়েছে টিম আরবিএল সাইবার ওয়ারিওরস। প্রতিযোগিতায় তাদের প্রাপ্ত নাম্বার ৫৫০০। এই দলের নেতৃত্বে ছিলেন রুপালী ব্যাংকের সাইবার সেলের টিম লিড, জি. এম. ফারুক আহমেদ। তার সঙ্গে ছিলেন-মোঃ মামুনুর রশীদ, মোশারফ হোসেন, মোঃ শরীফুল ইসলাম এবং ওয়ালীউল ইসলাম।
২০২০-২১ সালে জাতীয় সাইবার ড্রিলে বিভিন্ন ব্যাংকের পারফর্মম্যান্স ছিলো লক্ষ্য করার মতো। ওই বছর মার্কেন্টাইল ব্যাংক এর XFORCE ১ম স্থান এবং সামগ্রিক ভাবে ১৩তম স্থান অধিকার করেছিলো। সে বছর ফাইন্যানসিয়াল সাইবার ড্রিলে মার্কেন্টাইল ব্যাংক সামগ্রিকভাবে চতুর্থ এবং বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক গুলোর মধ্য ১ম স্থান অর্জন করে। তবে এবার ব্যাংকটি জাতীয় প্রতিযোগিতায় হয়েছে ২৭ তম। অপরদিকে সর্বশেষ অক্টোবরে অনুষ্ঠিত ফিনান্সিয়াল ইন্সটিটিউশন সাইবার ড্রিলে প্রথম হয়েছিলো ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের সাইবার প্রতিরক্ষা দল ডিফেন্ড এইস।
তিতৃীয় বারোর মতো অনুষ্ঠিত জাতীয় সাইবার ড্রিলের সার্বিক সহায়তা ও তত্ত্বাবধানে ছিল তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী সাইবার বীরদের নিয়ে আগামী ২০২৫ সাল নাগাদ বিশ্বে সেরা ১০টি দেশের তালিকায় আসতে চাইছেন আয়োজক প্রতিষ্ঠান বিজিডি ই-গভ সার্টের প্রকল্প পরিচালক তারেক এম বরকতউল্লাহ।
এর আগের অনুষ্ঠিত দুটি জাতীয় সাইবার ড্রিলের মধ্যে ২০২১ সালে ড্রিলে চ্যাম্পিয়ন হয় ফেডারেল বঙ্ক ইনভেস্টিগেশন ও সিলিকন বিটস। সর্বশেষ রানার্স আপ ছিলো বাইটস ওভার ফ্লো এবং সিলিকন বিটস। আর প্রথম বারে রানার্স আপ হয়েছিলো দ্য ইনফিনিটি বাইটস এবং হেইমডাল।