নিরাপদে অনলাইন ব্যবহার নিশ্চিত করতে বিষয়টি পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্তির দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে রোববার বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) আয়োজিত ‘অনলাইনে যৌন নির্যাতন’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় আলোচকেরা এই দাবি জানান।
আলোচনা সভায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮, শিশু আইন-২০১৩, পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১২, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন-২০০৬—এসব আইনে অনলাইনে নির্যাতনের শিকার হলে প্রতিকারের আইনগুলো সহজ ভাষায় ও সংক্ষিপ্তভাবে পাঠক্রমে রাখার পরামর্শও দেয়া হয়।
সভায় বক্তারা বলেন, সব বয়সী শিশুরাই এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। কিন্তু এদের অনেকেই নিজেকে সুরক্ষিত রেখে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে জানে না। এমনকি অনেকের অনলাইনে ‘যৌন নির্যাতন’ বা ‘যৌন শোষণ’ সম্পর্কেও স্পষ্ট ধারণা নেই। আবার যৌন নির্যাতনের শিকার হলেও পরিবারকে জানাতে ভয় পায়। আইনের আশ্রয়ও নেয় না তারা।
তারা জানান, দিনে কমবেশি চার শ শিশু সাইবার ক্রাইমের শিকার হচ্ছে। এসব শিশুর অনেকেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকে, বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ। শিশুদের জন্য
আলোচনায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মঞ্জুর আহমেদ বলেন, নিরাপদে অনলাইন ব্যবহারের জন্য পাঠ্যপুস্তকে অনলাইনে যৌন নির্যাতনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। তবে পাঠক্রমে কীভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে, শিক্ষকেরা শ্রেণিকক্ষে কীভাবে পড়াবেন, শিক্ষার্থী-অভিভাবকেরা কীভাবে নেবেন—বিষয়গুলো ভেবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
অনলাইনে নির্যাতনের ঘটনা সামাজিক ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে উল্লেখ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব লুৎফুন নাহার বলেন, পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করলেই অনলাইনে যৌন নির্যাতন প্রতিরোধে কার্যকর ফল আসবে কি না—তা আরও যাচাই-বাছাইয়ের দরকার। পাশাপাশি ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতাদের চাপের কারণে কতটুকু করা যাবে, সেটিও ভাবার বিষয়।
কাকলি হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক আরজু আক্তার বলেন, বিষয়টি পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হলে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবকেরাও জানতে পারবেন।
মতবিনিময় সভাটি পরিচালনা করেন আসকের নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজা। এ সময় তিনি বলেন, পাঠ্যপুস্তকে অনলাইনে যৌন নির্যাতনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। এতে শিশুরা অনলাইনে তাদের ঝুঁকিপূর্ণ সাইটগুলো চিহ্নিত করতে পারবে। নিরাপদে ব্যবহার করার কৌশলগুলো তারা জানতে পারবে।
সভার শুরুতে আসকের শিশু অধিকার ইউনিটের সমন্বয়ক অম্বিকা রায় তথ্য-উপাত্ত দিয়ে অনলাইনে যৌন নির্যাতনের চিত্র ও প্রতিকারে করণীয় বিষয় তুলে ধরেন। এ সময় তিনি বলেন, ইন্টারনেট ব্যবহার করে শিশুকে অশালীন বার্তা, ছবি বা ভিডিও প্রদান করা, আবেগীয় সম্পর্ক স্থাপন করে যৌনকর্মে নিয়োজিত করা, শিশুর বিবিধ পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বা অর্থ, উপহারের মাধ্যমে যৌন অঙ্গভঙ্গি বা আচরণে প্ররোচিত করা, যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে স্থিরচিত্র বা ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া বা ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে যৌন সম্পর্কে বাধ্য করার মাধ্যমে অনলাইনে যৌন নির্যাতন করা হয়।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সাল থেকে আসকের উদ্যোগে দেশের ২৮টি স্কুলে অনলাইনে যৌন নির্যাতনের বিষয়ে পড়ানো হয়। এতে নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত অনলাইন ব্যবহারে ইতিবাচক ফলাফল আসছে বলে জানান সংস্থার প্রতিনিধি ও শিক্ষকেরা।