রবিবার সন্ধ্যায় শেষ হচ্ছে দুই দিনের বাংলাদেশ বিপিও সম্মেলন। সম্মেলনের ৯টি সেমিনারের মধ্যে বেশির ভাগই সেমিনারেই দেখিয়েছে স্মার্ট ক্যারিয়ারের টেকসই পথ। পেশা থেকে উদ্যোক্তা হওয়ার কৌশল।
বিপিও খাতের ভবিষ্যত নেতৃত্ব গড়ে তুলতে বাংলাদেশের বিপিও প্রতিষ্ঠানগুলোর বৈশ্বিক সংযোগ প্রতিষ্ঠায় অ্যাকাডেমিয়া-ইন্ডাস্ট্রি মিথস্ক্রিয়ার বিষয়টি উঠে আসে প্রথম দিনের শেষ সেমিনারে। সেখানে উঠে আসে শর্টকাট ট্যাবলেট নয় প্রার্থীর সিরিয়াসনেস ও হাঙ্গার মাইনসেট নিয়ে আসে কর্মজীবনের সফলতা। আর চাকরিতে সবচেয়ে গুরুত্ব পায় কর্মীর যোগাযোগ দক্ষতা, ক্রিটিক্যাল থিংকিং ও সৃজনশীলতার ওপর।
বিজ্ঞান লেখক মুনির হাসানের সঞ্চালনায় ইন্ডাস্ট্রি-অ্যকাডেমিয়া সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইবিএ অধ্যাপক রিদ্বওয়ানুল হক ও আইইউবি’র স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন ইউসুফ মাহবুবুল ইসলাম।
সেমিনারে প্রতি ৯ সেকেন্ড পর পর কীভাবে আজকের প্রজন্ম মনোযোগ হারাচ্ছেন তার ওপর ভিত্তি করে সঠিক ডেটা’র সঙ্কটের কথা তুলে ধরেন অধ্যাপক রিদ্বওয়ানুল হক। আর স্নাতকত্তোর অর্জনের পরও শিক্ষার্থীদের মধ্যে হীনমন্যতায় ভোগার বিষয় উঠে আসে ইউসুফ মাহবুবুল ইসলামের কণ্ঠে।
এই সেশনে আলোচক ছিলেন গ্রাফিক পিপল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমতিয়াজ এলাহী, আমরাই ডিজিটাল ‘আমরাই ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর আহ্বায়ক লিয়াকত হোসেন এবং গ্রামীণফোনের র চিফ হিউম্যান রিসোর্স অফিসার সৈয়দ তানভীর হুসেইন। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন ইউজিসি’র সদস্য সাজ্জাদ হোসেন।
এর আগে ক্যারিয়ার সম্মেলনে সফলতার টোটকা দেন টেন মিনিট স্কুল প্রতিষ্ঠাতা আইমান সাদিক। ডন সামদানির সঞ্চালনায় অনলাইনে সংযুক্ত হয়ে ক্যারিয়ারের শুরুতে নিজেদের কলসেন্টার কর্মী জীবনের গল্প শেয়ার করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেল।
তিনি বলেন, লন্ডনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রর্থমবর্ষে ছাত্রাবস্থায় আমি ব্রিটিশ টেলিকমের কলসেন্টার হিসেবে নিয়োজিত ওয়ান ডে-তে চাকরি পাই। তিন সপ্তাহের প্রশিক্ষণ নিয়ে কোর কলিং করে গ্রাহককে বুঝিয়ে কল ও ইন্টারনেট প্যাকেজ বিক্রি করতাম। বার স্কুলে পড়ার সময় আমি ইউনিয়ন কিংডম বেনিফিটে ইন্সুরেন্স পলিসি বিক্রির কাজ করি।
কলসেন্টার বা বিজনেস প্রসেসিং কাজের জন্য আমি কিছু দক্ষতা প্রশিক্ষণ নেই, সেই সফট স্কিল আমার পরবর্তী জীবনেও কাজে লেগেছে বলে যোগ করেন উপমন্ত্রী। তিনি বলেন, কল সেন্টারে বসে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে ভাষার বৈচিত্র শিখেছি যা কমিউনিকেশন স্কিল বাড়িয়েছে। কেননা ভাষা-সংস্কৃতি ব্যবসায় সেবা বিক্রির পথকে প্রশস্ত করে।
উপস্থিত তরুণদের উদ্দেশ্যে নওফেল বলেন, বিপিও কিন্তু আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য শুধু আয়-উপার্জনের ক্ষেত্রে উপকৃত হবেন তা নয়। এর মাধ্যমে নানান ধরনের প্রশিক্ষণ নিয়ে সফট স্কিল অর্জন সহজ হবে যা পরবর্তী পেশা জীবনে কাজে লাগবে। কমিউনিকেশন ও পেজেন্টেশন স্কিলের কোনো বিকল্প নেই। এগুলো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শেখা সম্ভব নয়।
সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে বাক্কো সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ হোসেন, ইউমেন ইন ডিজিটাল প্রতিষ্ঠাতা আছিয়া নীলা, এসো সিইও জায়ীদ আহমেদ এবং নিজের বলার মতো গল্প বলা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ইকবাল বাহার জাহিদ।
এছাড়াও বিপিও খাতের বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে অনুষ্ঠিত সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন বক্কো পরিচালক আবু দাউদ খান। জুম কলে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিজনেস প্রসেস ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান ডব্লিউএনএস ইন্টারন্যাশনাল প্রধান আনন সুব্রামানিয়ান।
মারিয়া অ্যান্ড কো প্রতিষ্ঠাতা মারিয়া হওয়লাদারের সঞ্চালনায় মূল আলোচনায় ভারত, শ্রীলংকা, ফিলিপিন ও মালোয়িশার মতো হিসাবরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের বিপিও খাতকেও এগিয়ে নেয়ার বিষয়ে প্যানেল আলোচনায় বিশেষজ্ঞ মতামত তুলে ধরেন ব্রাভিন নূর এ্যরো, ভার্চুয়াল সিএফও সেবা দাতা মোহাম্মাদ সিহাব, কামরুল হাসান ও আমিনুল হক। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইসিএমএবি সভাপতি মোঃ আব্দুর রহমান খান।
তৃতীয় সেশনে দেশের বিপিও খাতকে বৈশ্বিক পর্যায়ে সংযুক্ত করার বিষয়ে আলোকপাত করেন মূল প্রবন্ধ আলোচক গ্লোবাল বিপিও অ্যালায়েন্সের সিইও দীনেশ গীতে।
বাক্কো পরিচালক আবু দাউদ খানের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন এইজ প্রকল্প পরিচালক নাহিদ সুলতানা মল্লিক, শ্রীলঙ্কা দূতাবাসের ফার্স সেক্রেটারি শ্রীমালী জয় রত্নে, টেকনো হ্যাভেন সিইও হাবিবুল্লাহ নিয়ামুল করিম, অ্যাডকম লিমিটেড ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজিম ফারহান চৌধুরী, বেসিস জ্যেষ্ঠ সভাপতি সামিরা জুবেরি হিমিকা, আস্থা আইটি সিইও হাসনাইন রিজভী রহমান, এবং স্কাই টেক প্রতিষ্ঠাতা মুসনাদ ই আহমেদ।
সেমিনার প্রধান অতিথি ছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বকারী দলের প্রধান ও রাষ্ট্রদূত চার্লস হুইটলি। বক্তব্যে বিপিও খাতে সরকারের প্রণোদনাকে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ লক্ষ্যপূরণে সহায়ক মন্তব্য করে ডেটা সুরক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
বলেছেন, আপনাদের জিডিপিআর মান মেনেই তথ্য সুরক্ষা করা উচিত। এটা ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষার পাশাপাশি ব্যবসায়ের পরিসরকেও উন্মুক্ত করবে। আমি যতদূর জানি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের তথ্য সুরক্ষা আইনের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
সামনের দিনে দক্ষতার কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে চার্লস হুইটলি বলেন, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে আমাদের ৮০ লাখ আইসিটি দক্ষ কর্মীর দরকার। ক্লাউড, ডেটা প্রকৌশল ও সাইবার সুরক্ষায় আমাদের বিশেষজ্ঞ কর্মীর প্রয়োজন সবেচেয়ে বেশি। আমি মনে করি, বাংলাদেশ এই সুযোগটা ভালোভাবে গ্রহণ করবে। তাই নীতিগত সহায়তার মাধ্যমে এ ক্ষেত্রে দক্ষ কর্মী গঠন করা দরকার। খরচ ও শিক্ষায় বাংলাদেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। আমার বিশ্বাস, আগামী ৩-৪ বছরের মধ্যে ইউরোপে বাংলাদেশী প্রকৌশলীদের চাহিদা বাড়বে।