বাজেটে আইন পাস করে প্রতি বছর ৩০ নভেম্বর আয়কর রিটার্ন জমার শেষ তারিখ নির্ধারণ করা হয়। ওই দিনই ব্যক্তিশ্রেণির আয়কর রিটার্ন জমার শেষ দিন ধার্যকরেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর। কিন্তু সোমবার পর্যন্ত ৯ লাখের বেশি করদাতা তাদের রিটার্ন দিয়েছেন। অথচ ট্যাক্স পেয়ার আইডেনটিফিকেশন বা টিআইএনধারীর সংখ্যা ৭৮ লাখের বেশি। অর্থাৎ ৮৮ ভাগ টিআইএনধারীই এখনও রিটার্ন জমা দেননি। সাড়া মেলেনি অনলাইনে রিটার্ন জমার সুযোগ গ্রহণেও। অর্থ, সময় ও ভোগান্তি ছাড়াই ই-রিটার্ন দাখিলের সুযোগ থাকার পরও জমা পড়া রিটার্নের মধ্যে মাত্র দশমিক ০৮ শতাংশ এসেছে অনলাইনে।
এনবিআর সূত্র বলছে, করদাতাদের সুবিধার্থে অনলাইনে রিটার্ন জমা দেয়ার পদ্ধতি চালু করেও তেমন সাড়া মিলছে না। অনলাইনে এ পর্যন্ত মাত্র ৭৫ হাজার করদাতা রিটার্ন জমা দিয়েছেন। সব মিলে সোয়া ৯ লাখ রিটার্ন জমা পড়েছে সোমবার পর্যন্ত।
অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার উপায়
-
অনলাইনে রিটার্ন জমা দিতে প্রথমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যান।
-
এবার এখান থেকে ই-রিটার্ন অপশন সিলেক্ট করুন।
-
এবার এখানে থাকা ‘গাইডলাইন’ অপশনে গিয়ে গাইডলাইনগুলো ভালোভাবে পড়ে নিন।আর আগে থেকেই অ্যাকাউন্ট করা থাকলে সেটি লগ ইন করুন। না থাকলে রেজিস্ট্রেশন অপশনে ক্লিক করে অ্যাকাউন্ট করে নিন।
-
আপনার টিন নম্বর, মোবাইল নম্বর ও একটি ক্যাপচা থাকবে সঠিকভাবে দিয়ে ভেরিফাই অপশনে ক্লিক করে দিন।
-
আপনার দেওয়া ফোন নম্বরে যে ওটিপি কোড যাবে সেটি এবার বসিয়ে একটি নতুন পাসওয়ার্ড দিয়ে দিন। নতুন পাসওয়ার্ডটি আবার দিয়ে সাবমিট করুন।
-
এরপর লগইন করলেই একটি ইন্টারফেস পাবেন। যেখানে আপনার নাম ঠিকানাসহ বিভিন্ন তথ্য দিয়ে পূরণ করে সেভ অ্যান্ড কন্টিনিউ দিলেই একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি হয়ে যাবে।
-
এখন নিজের টিআইএন এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে যে কোনো সময় যে কোনো জায়গা থেকে অ্যাকাউন্ট সাইন ইন করতে পারবেন।
-
নিবন্ধন হয়ে গেলে সাইন-ইন করুন এবং বামে উপরে থাকা রিটার্ন সাবমিশন অপশনে গেলেই একটি ফরম আসবে। আপনার সব তথ্য দিয়ে ফরম পূরণ করুন।
-
এভাবে পরের স্টেপগুলোতে আসা ফরমগুলো পূরণ করুন। আপনার ইনকাম সোর্সগুলো সঠিকভাবে বাছাই করুন বা লিখে দিন। তাহলে পরের স্টেপে পাবেন ট্যাক্স অ্যান্ড পেমেন্ট নামের একটি পেজ। সেখানে আপনাকে কত টাকা ট্যাক্স দিতে হবে সেটিও দেখতে পাবেন।
-
যাদের করযোগ্য আয় নেই তাদের ‘জিরো ট্যাক্স’ আসবে। তারা প্রসিট টু অনলাইন রিটার্ন অপশনে ক্লিক করে দিন। তাহলে আপনার রিটার্ন ফ্রম আপনার সামনে আসবে। এখান থেকে ভালোভাবে আবার তথ্য যাচাই করার সুযোগ পাবেন। এরপর সাবমিশন রিটার্ন অপশনে ক্লিক করে দিন। ইয়েস এবং নো দুইটি বার আসবে ইয়েস ক্লিক করলেই আপনার রিটার্ন সাবমিট হয়ে যাবে। আপনাকে একটি রেফারেন্স নম্বর দেওয়া হবে।
-
যাদের ট্যাক্স দিতে হবে তারা পে নাও অপশনে যান। এখানে আপনি কীভাবে ট্যাক্সের টাকা পরিশোধ করতে চান তার বিভিন্ন অপশন পাবেন। এরপর সেখানে গিয়ে পেমেন্ট করে দিন।
-
সবশেষে আপনার রিটার্ন ও ট্যাক্স জমা দেওয়ার স্লিপ ও সার্টিফিকেট ডাউনলোড করে সংরক্ষণ করুন। আপনার হোম পেজের উপরের বামেই সার্টিফিকেট, রিটার্ন ফরম সবকিছু পেয়ে যাবেন।
প্রতি বছরের মতো এবার ঘটা করে কর মেলা না করে ১ নভেম্বর থেকে দেশের প্রতিটি কর অঞ্চল ও সার্কেল কার্যালয়ে কর মেলার আদলে পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। রিটার্ন ফরম পূরণ থেকে শুরু করে জমা দেয়া সবই করা যাচ্ছে সেখানে। করদাতাদের জন্য প্রয়োজনীয় সেবা দিতে বুথও খোলা হয়েছে। এই মেলাটা অনলাইনেও ভার্চুয়াল আবহে করা গেলে অনলাইনে রিটার্ন বাড়বে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। ভার্চুয়াল হেল্প ডেস্কের মাধ্যমে যদি ব্যক্তিকরদাতারা রিটার্ন সংক্রান্ত বিষয়ে সহায়তা পান তাহলে রিটার্ন দাখিলের পরিমাণও বাড়বে। পাশাপাশি অনলেইনে প্রচারণা বাড়ানোর ওপরও গুরুত্বারোপ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রসঙ্গত, প্রতি বছর গড়ে ২৫ লাখের মতো করদাতা রিটার্ন জমা দেন। টিআইএনের তুলনায় রিটার্ন জমার সংখ্যা খুবই কম। তবে এবারের বাজেটে ৩৯টি সেবা নিতে টিআইএনের সঙ্গে প্রাপ্তি স্বীকারপত্রসহ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট রিটার্নের সঙ্গে জমা দেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে এবার আয়কর রিটার্নের সংখ্যা অনেক বাড়বে। এনবিআর প্রত্যাশা করছে, এবার আয়কর রিটার্নের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হবে। বর্তমানে তা আছে ২৫ লাখ।
এদিকে রোববার ঢাকা ট্যাকসেস বার অ্যাসোসিয়েশন রিটার্ন জমার সময় আরও দুই মাস বাড়াতে এনবিআর বরাবর আবেদন করেছে। এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুহিমের কাছে অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকারিয়া খান এই আবেদন করেন।