দরজায় কড়া নাড়ছে জাতীয় নির্বাচন। এরইমধ্যে দারুণ উন্নতিতে কপাল চিন্তার ভাঁজ ফেলছে ডিপফেক এআই। ‘একুশ শতকের ফটোশপিং’এই প্রযুক্তিটি এক্সিসটিং সোর্সকে সরিয়ে বা সোয়াইপ করে নতুন কিছু বসাতে পারদর্শী। অর্থাৎ এর মাধ্যমে আপনার মুখের জায়গায় অনায়াসেই ব্যবহার করা যাবে অন্য কোনো ব্যক্তির মুখ। এআই নির্ভর এই প্রযুক্তি শুধু ভিডিও নয়, ফেক প্রোফাইলের ছবি তৈরিতেও ব্যবহার করা হয়। সঙ্গত কারণে যে কোনো ছবি বা ভিডিও প্রথম দর্শনেই বিশ্বাস করাটা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই সিরিয়াস কোনো ভিডিও বিশ্বাস করার আগে বেশ কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখা দরকার।
ডিপফেক ভিডিও বোঝার বেশ কিছু উপায় রয়েছে। সাধারণত ডিপফেক ভিডিও খুব একটা বড় হয় না। কারণ, একটা ভিডিওতে চরিত্রের মুখের প্রতিটা অভিব্যক্তি ফ্রেম বাই ফ্রেম এডিট করতে হয়। ভিডিওর দৈর্ঘ্য যদি বেশি হয়, সেক্ষেত্রে ফ্রেম বাই ফ্রেম এডিট করাটা প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়। আবার ডিপফেক তৈরির জন্য প্রতারকরা এমন ভিডিও বেছে নেয় না, যেখানে চরিত্রের ক্লোজ-আপ শট কাজে লাগাতে হয়। সেখানেও ফ্রেম বাই ফ্রেম এডিট করাটা মুশকিলের হয়ে যায়। তাই ডিপফেক ছবি বা ভিডিও সনাক্তে চরিত্রের চোখ, ঠোঁট, ত্বক, চুল এমনকি দাঁতটাও খড় দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। তখন সহজেই ধরা যাবে-
- মুখের অভিব্যক্তির অসঙ্গিতি
- চারপাশের পরিবেশের বৈসাদৃশ্য
- অপ্রাকৃতিক অডিও টোন, পিচ
- বিষয়বস্তুর প্রাসঙ্গিকতা
চোখের অস্বাভাবিক পিটপিট
চোখ সত্যিই মনের কথা বলে। ডিপফেক ভিডিওতে তাই লক্ষ্য করতে হবে চরিত্রের চোখের পাতা স্বাভাবিক পিট পিট (ব্লিঙ্ক) করছে কি না। সাধারণত ডিপফেক ভিডিওতে চোখ দ্রুত পিট-পিট করে। কিংবা অনেক ধীরে করে। ২০১৮ সালের একটি গবেষণার সূত্র ধরে সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া রাশমিকা মান্দানার ভিডিওতে এর প্রমান মিলেছে। এই ডিপফেক ভিডিওতে দেখা গেছে তার চোখ স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ ব্লিঙ্ক করেছে। চোখ দুটোও একটু অন্যরকম দেখাচ্ছিল।
লিপ সিঙ্কিং-এ খুঁত
একটু খারাপ মানের ডিপফেক ভিডিও ধরে ফেলাটা খুব সহজ। আর তা ধরতে পারবেন চরিত্রের খারাপ লিপ-সিঙ্কিং থেকে। অডিওর সঙ্গে চরিত্রের লিপ-সিঙ্কিং কিছু না কিছু অসঙ্গতি দেখাতেই থাকবে। তাছাড়া গাল ও কপালের মধ্যে ঠোঁট নড়ানোর সময় ছন্দময়তা থাকেনা।
ত্বকের স্বাভাবিক ভাঁজ
আসল ব্যক্তি আর ভুয়া ব্যক্তির ত্বকের টোন নিশ্চয়ই এক হবে না। যদিও একটা ভিডিও থেকে একনজরে তা বোঝাটা একটু অসম্ভবই বটে। ডিপফেক ভিডিওতে চরিত্রের এমনই ত্বক দেখানো হয়, যাতে কোনো দাগ নেই। এছাড়াও শরীরের অদ্ভুত নড়াচড়াও সেক্ষেত্রে একটি বড় লক্ষণ।
চুল ও দাঁত থাকে নিখুঁত
ডিপফেক ভিডিওতে চুল এক্কেবারে নিখুঁত রাখা হয়। তার কারণ মূল চরিত্রের হুবহু নকল করা একটা উচ্চমানের সফটওয়্যারের জন্যও ভালোভাবে রেন্ডার করাটা কঠিন করে তোলে। চুল ও দাঁত অনেক সময় ডিপফেক ভিডিও ডিকোড করতে সাহায্য করে। কারণ সেগুলো কখনই স্বাভাবিক দেখাতে পারে না।
এছাড়াও ফেইব ব্যক্তির হাতে থাকা আংটি, গলার হার ইত্যাদি থাকলে সেগুলো উজ্জ্বল ও স্বচ্ছ দেখাবে না। আলোর প্রভাবে সেগুলো অস্বাভাবিক দেখাতে পারে। ডিপফেকের ক্ষেত্রে এই সম্ভাবনা প্রবল।