দেশে প্রতি মাস তথা প্রতি বছরেই বৃদ্ধি পাচ্ছে মোবাইল অপারেটরগুলোর গ্রাহক সংখ্যা। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত মোবাইল গ্রাহক বেড়েছে ৭২ লাখ ৪৩ হাজার। একই সঙ্গে ৮ মার্চ স্পেকট্রাম নিলামের মধ্য দিয়ে বেড়েছে মোবাইল অপারেটরদের তরঙ্গ।
এক নজরে মোবাইল অপারেটরদের স্পেকট্রামের পরিমান।গ্রাফিক্স:ডিজিবাংলা
বিটিআরসির সবশেষ তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গ্রাহক বৃদ্ধি ও তরঙ্গ বৃদ্ধির ফলে প্রতি মেগাহার্টজ তরঙ্গ ব্যবহারকারীও কমেছে। বিভিন্ন ব্যান্ডের ২৭ মেগাহার্টজ তরঙ্গ বৃদ্ধির ফলে প্রতি মেগাহার্টজ তরঙ্গ বরাদ্দ থাকবে ১১ লাখের বেশি মোবাইল ব্যবহারকারীর জন্য। যা নিলামের আগে ছিল ১৩ লাখ ৩০ হাজারের বেশি।
তরঙ্গ ক্রয় পরবর্তী চিত্র
এক নজরে গ্রামীণফোনের ১ মেগাহার্টজ ব্যবহারকারীর সংখ্যা/গ্রাফিক্স:ডিজিবাংলা
গ্রামীণফোন: গ্রামীণফোনের আগে ছিল ৩৭ মেগাহার্টজ তরঙ্গ। নতুন স্পেকট্রাম ক্রয়ের মাধ্যমে তাদের হয়েছে এখন ৪৭ দশমিক ৪ মেগাহার্টজ। এর মধ্যে ১৮০০ ব্যান্ডে যোগ হয়েছে দশমিক ৪ মেগাহার্টজ এবং ২১০০ ব্যান্ডে যোগ হয়েছে ১০ মেগাহার্টজ।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গ্রামীণফোনের মোট গ্রাহক সংখ্যা হয়েছে ৮ কোটি তিন লাখ ৯০ হাজার। নতুন স্পেকট্রাম কেনার পর জিপির ১ মেগাহার্টজ তরঙ্গ ব্যবহার করবেন ১৬ লাখ ৯৫ হাজারের বেশি গ্রাহক। তরঙ্গ কেনার আগে যা ছিল ২১ লাখ ৫৫ হাজারের বেশি। অর্থাৎ নতুন অধিগ্রহণে গ্রামীণফোনের গ্রাহক পর্যায়ে তরঙ্গ বরাদ্দ বাড়বে ২১ শতাংশ।
এক নজরে রবির ১ মেগাহার্টজ ব্যবহারকারীর সংখ্যা/গ্রাফিক্স:ডিজিবাংলা
রবি: রবির আগে ছিল ৩৬ দশমিক ৪ মেগাহার্টজ তরঙ্গ। নতুন স্পেকট্রাম ক্রয়ের মাধ্যমে তাদের হয়েছে এখন ৪৪ মেগাহার্টজ। এর মধ্যে ১৮০০ ব্যান্ডে যোগ হয়েছে দশমিক ২ দশমিক ৬ মেগাহার্টজ এবং ২১০০ ব্যান্ডে যোগ হয়েছে ৫ মেগাহার্টজ।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রবির মোট গ্রাহক সংখ্যা হয়েছে ৫ কোটি ১৫ লাখ ১৫ হাজার। নতুন স্পেকট্রাম কেনার পর রবির ১ মেগাহার্টজ তরঙ্গ ব্যবহার করবেন ১১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি গ্রাহক। তরঙ্গ কেনার আগে যা ছিল ১৪ লাখের বেশি। হিসাব অনুযায়ী, রবি’র গ্রাহক পর্যায়ে তরঙ্গ বেড়েছে ১৬ শতাংশ।
এক নজরে বাংলালিংকের ১ মেগাহার্টজ ব্যবহারকারীর সংখ্যা/গ্রাফিক্স:ডিজিবাংলা
বাংলালিংক: নিলাম দৌড়ে তৃতীয় অবস্থানে থাকলেও গ্রাহক পর্যায়ে সর্বোচ্চ ২২ শতাংশের বেশি তরঙ্গ বেড়েছে বাংলালিংকের। বাংলালিংকের আগে ছিল ৩০ দশমিক ৬ মেগাহার্টজ তরঙ্গ। নতুন স্পেকট্রাম ক্রয়ের মাধ্যমে তাদের হয়েছে এখন ৪০ মেগাহার্টজ। এর মধ্যে ১৮০০ ব্যান্ডে যোগ হয়েছে দশমিক ৪ দশমিক ৪ মেগাহার্টজ এবং ২১০০ ব্যান্ডে যোগ হয়েছে ৫ মেগাহার্টজ।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলালিংকের মোট গ্রাহক সংখ্যা হয়েছে ৩ কোটি ৫৯ লাখ ২০ হাজার। নতুন স্পেকট্রাম কেনার পর বাংলালিংকের ১ মেগাহার্টজ তরঙ্গ ব্যবহার করবেন ৮ লাখ ৯৮ হাজার গ্রাহক। তরঙ্গ কেনার আগে যা ছিল ১১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি।
টেলিটক: স্পেকট্রাম নিলামে রাষ্ট্রায়াত্ব অপারেটর টেলিটক কোনো তরঙ্গ ক্রয় করেনি। তবে ফেব্রুয়ারিতে অপারেটরটির গ্রাহক বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৫ কোটি ৫৩ লাখ ২ হাজার। ফলে এখন এই অপারেটরটির ২ লাখ ১৯ হাজারের বেশি গ্রাহক ব্যবহার করবেন ১ মেগাহার্টজ তরঙ্গ। যা জানুয়ারিতে ছিল দুই লাখ ১৫ হাজারের বেশি।
কারা সুবিধাজনক অবস্থানে?
বিটিআরসির তথ্য উপাত্ত ও মোবাইল অপারেটরগুলোর দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বেসরকারি মোবাইল অপারেটরগুলোর মধ্যে বাংলালিংকের ১ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম ব্যবহার করেন সবচেয়ে কম গ্রাহক। সেই তুলনায় যথাক্রমে রবি ও গ্রামীণফোনের বেশি গ্রাহক ১ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম ব্যবহার করেন।
অপরদিকে গ্রামীণফোনের সর্বশেষ প্রান্তিকের তথ্য অনুযায়ী তাদের মোট নেটওয়ার্ক সাইট রয়েছে ১৬ হাজার ৫৪৭টি। ডিজিবাংলাকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী রবির রয়েছে ১৪ হাজারের বেশি এবং বাংলালিংকের প্রায় ১০ হাজার নেটওয়ার্ক সাইট।
নেটওয়ার্ক সাইট অনুযায়ী বাংলালিংকের অবস্থান তৃতীয়, রবি দ্বিতীয় এবং গ্রামীণফোন প্রথম।
খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, কেবল তরঙ্গই নয় গ্রাহক প্রতি নেটওয়ার্ক কাভারেজ শক্তিশালী হলেই বাড়বে গ্রাহক সেবার মান। অবশ্য নিলাম শেষে সরকারের পকেট ভারী হলেও গ্রাহকের পকেট শূন্য হবে বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, যে পরিমান তরঙ্গ বরাদ্দ দেওয়া হবে এতে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু জনগণের আকাঙ্খা, প্রত্যাশা সেটি কোনোভাবেই প্রতিফলিত হবে না। এতে সরকারের পকেট ভরলেও জনগণের পকেট শূন্য হবে এটি স্বাভাবিক। এই তরঙ্গ দিয়ে ভালো কোনো সেবা প্রত্যাশা করা যায় না।
মোবাইল অপারেটরদের জন্য তরঙ্গ বরাদ্দ বৃদ্ধির পাশাপাশি দাম কমানোর আহ্বান জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, তরঙ্গ নিলামে রাষ্ট্রীয় মোবাইল অপারেটর টেলিটক অংশ নিলেও উচ্চ মূল্যের কারণে তরঙ্গ ক্রয় করতে পারেনি। এভাবে তরঙ্গের দাম বৃদ্ধি পেতে থাকলে টেলিটকের আর তরঙ্গ ক্রয় করার ক্ষমতাই থাকবে না।
মোবাইল অপারেটরদের বক্তব্য
তরঙ্গ নিলাম শেষে পৃথক পৃথক বিবৃতিতে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেছে গ্রামীণফোন ও বাংলালিংক।
গ্রামীণফোনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী এবং প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা ইয়েন্স বেকার বলেন, “একটি সফল ও স্বচ্ছ নিলাম পরিচালনা করার জন্য আমরা বিটিআরসি এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কাছে কৃতজ্ঞ। এ নিলামের ফল দেশ, টেলিকম খাত এবং গ্রাহকদের জন্য ভালো ফল নিয়ে আসবে। অতিরিক্ত এ স্পেক্ট্রামের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ উদ্যোগে আরও বেশি অবদান রাখতে এবং শহর ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে গ্রাহকদের ক্রমবর্ধমান উচ্চগতির ইন্টারনেট চাহিদা মেটাতে গ্রামীণফোনকে আরও বেশি সমর্থ করে তুলবে।”
বাংলালিংক-এর চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার এরিক অস বলেন,“ডিজিটাল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গ্রাহকদের উন্নত মানের সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের এই স্পেকট্রাম গ্রহণ বিশেষ এক মাইলফলক। বাংলালিংক ২০২০ সালে দেশের সর্বোচ্চ গতির নেটওয়ার্ক হিসেবে ওকলা-এর স্বীকৃতও পেয়েছে। আমরা মার্কেট শেয়ার, ডেটা থেকে আয় ও ডেটা ব্যবহারকারীর সংখ্যাসহ বিভিন্ন সূচকে উন্নতি করে ভালো ফলাফল ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। নতুন স্পেকট্রাম এই সাফল্যের মাত্রা ও গ্রাহক সস্তুষ্টি আরও বৃদ্ধি করতে আমাদের সাহায্য করবে। বাংলালিংক-এর সাথে থেকে নতুন পরিকল্পনা ও লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যেতে উৎসাহ দেওয়ার জন্য গ্রাহকদের আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই।”