মুক্তিযুদ্ধ – কেবল শত্রুমুক্ত ভূখণ্ড বা সার্বভৌমত্ব অর্জন নয়, মুক্তিযুদ্ধ মানবের হৃদয়ের সার্বক্ষণিক কাতরতার নাম। তাই মুক্তিযুদ্ধ অতীত হয় না, দিনমান শিহরিত করে, অনুরণিত হয় প্রাণে প্রাণে। তাই তো সময় বদলে গেলেও মুক্তিযুদ্ধের আবেদন বা অর্জন কখনোই ম্লান হয় না। নতুন নতুন মাধ্যমে তা আরও ব্যাপকতা লাভ করে। তেমনি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাথা আরও শক্তিমান হচ্ছে ডিজিটাল মাধ্যমে। বই কিংবা সেলুলয়েডের বাইরে সংরক্ষিত হয়েছে ডিজিটাল আর্কাইভে। রণাঙ্গণের দিনগুলো আজ আরও বাঙময় হয়েছে মুঠোফোন। খুবই ছোট উদ্যোগে এমন তিনটি বড় আর্কাইভ – যুদ্ধ দলিল, মুক্তিযুদ্ধ ই আর্কাইভ ও জেনোসাইড বাংলাদেশ।
যুদ্ধদলিল
‘আমাদের পরিচয় হোক মুক্তিযুদ্ধ’ স্লোগানে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দলিলনির্ভর একটি ওয়েব ঠিকানা – যুদ্ধদলিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র সংকলনের ১৫টি খণ্ড ইউনিকোডে কম্পাইল এবং ইংরেজি দলিলসমূহ অনুবাদ করে তা এই ওয়েবসাইটে সর্বসাধারণের চর্চার জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে। কম্পাইলেশন ও অনুবাদের কাজটি বিনামূল্যে স্বেচ্ছাসেবক কর্তৃক সম্পাদিত। কয়েকবার নিরীক্ষণ সত্বেও এডিটর ও কম্পাইলারদের অনিচ্ছাকৃত ভুল থেকে থাকলে প্রমাণসাপেক্ষে তা সংশোধনেরও সুযোগ রয়েছে। তাই এর কোনো অংশ রেফারেন্স আকারে ব্যবহারের পূর্বে মূল সংকলন থেকে ক্রসচেক করে নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে ওয়েবসাইটটির মূল পাতায়। ফ্লিকারের মতো ছবি সংরক্ষণের সাইটে জমা করা হচ্ছে বড় রেজল্যুশনে মুক্তিযুদ্ধের সব ছবি। ওয়েবের পাশপাশি ফেসবুক পেজও রয়েছে যুদ্ধ দলিলের।
পাশাপাশি মুঠোফোনে সহজে ব্যবহারের জন্য রয়েছে অ্যাপ। ২.৬ এমবি এই অ্যাপটি মিলবে https://apkpure.com/যুদ্ধদলিল/com.muktizuddho71.dolil ঠিকানায়।
মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভ
ভার্চুয়াল বিশ্বে আমাদের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংগ্রহ ও সংরক্ষণের পাশাপাশি গবেষণা ও বিকৃতি রোধে ওয়েব দুনিয়ায় গড়ে উঠেছে মুক্তিযুদ্ধের ডিজিটাল আর্কাইভ। ২০০৭ সালে এটি গঠন করে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ পাঠাগার ও গবেষণা কেন্দ্র। সব মিলিয়ে এই আর্কাইভে স্থান পেয়েছে প্রায় ১৫ টেরাবাইটের (১০২৪ গিগাবাইট = ১ টেরাবাইট) তথ্য।
এই আর্কাইভে রয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার বই। মুক্তিযুদ্ধের দুর্লভ অনেক দলিল, মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তী সময়ের উল্লেখযোগ্য ঘটনার পত্রিকাও (১৯৪৭ থেকে ২০০০ সাল) রাখা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেট ও বিভিন্ন তালিকা, শতাধিক প্রামাণ্যচিত্র, এক হাজারের বেশি ভিডিও ফুটেজ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক অন্তত পাঁচ হাজার আলোকচিত্র, অসংখ্য প্রবন্ধ-নিবন্ধ তো রয়েছেই। বাংলার পাশাপাশি রয়েছে ইংরেজি বিভাগ। আছে ১৫ খণ্ডের স্বাধীনতাযুদ্ধের দলিলপত্র। মুক্তিযুদ্ধ-সংক্রান্ত বিভিন্ন দেশের নথি, আন্তর্জাতিক পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গবেষকদের প্রকাশিত প্রায় সব বইও সংরক্ষিত আছে এই আর্কাইভে। এর বাইরে মুক্তিযুদ্ধকালীন বিভিন্নজনের লেখা রোজনামচা ও স্মৃতিকথা, মুক্তিযুদ্ধের সময় লেখা উপন্যাস-শহীদ বুদ্ধিজীবী আনোয়ার পাশার রাইফেল রোটি আওরাত; তরুণ লেখক মিজানুর রহমান খানের মুক্তিযুদ্ধের গল্প সোনার পরমতলা’র মতো গল্প গ্রন্থ। এই ডিজিটাল গ্রন্থগারটি গড়ে তুলেছেন মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভ ট্রাস্ট এর প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক সাব্বির হোসাইন ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি শান্তা আনোয়ার।
জেনোসাইড বাংলাদেশ
জেনোসাইড বাংলাদেশ ওয়েবসাইটটির টাইমলাইন অংশে ক্রমানুসারে লিপিবদ্ধ আছে মুক্তিযুদ্ধ এবং এর আগের ও পরের সময়ের ঘটনাপ্রবাহ। ১৯৪৭ সাল থেকে শুরু করে রয়েছে ১৯৭৫ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য ঘটনাপ্রবাহের আর্কাইভ। ভিডিও ও ফটো গ্যালারিতে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও ও আলোকচিত্র। সেই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত চলচ্চিত্রের তালিকাও আছে। তবে বছর তিনেক আগে বেশ সাড়া ফেলা এ ওয়েবসাইটটির কিছু কিছু লিংক ঠিকমতো কাজ করছে না। অবশ্য প্রত্যক্ষদর্শীদের অ্যাকাউন্ট এই ওয়েবসাইটটিকে দিয়েছে বিশেষ তথ্যসমৃদ্ধতার তকমা। ইংরেজির পাশাপাশি রয়েছে বাংলা আর্কাইভ।