বিশ্বজুড়েই স্মার্টফোন হয়ে উঠেছে প্রধান খাবারের মতো। এই ডিভাইসটা ছাড়া যেন একটি মুহুর্তও আমাদের চলে না। অধিক আহার অথবা অস্বাস্থ্যকর খাবার যেমনটা শরীর ও মনের ওপর বিরুপ প্রভাব ফেলছে; মোবাইল ফোন তার চেয়ে কম যাচ্ছে না। সঙ্গত কারণেই স্মার্টফোন ব্যবহারে আরো সচেতন স্মার্ট হওয়ার সময় এসেছে।
তাহলে জেনে নেয়া যাক মোবাইল ফোন ব্যবহারে কী কী স্মার্টনেস প্রয়োজন অথবা স্মার্টফোন ব্যবহারে ৭টি সতর্কতা।
১. চোখের ওপর চাপ: টাইপ অথবা কিছু পড়ার সময় স্মার্টফোনের ছোট পর্দার ফন্টের দিকে দীর্ঘসময় ধরে তাকিয়ে থাকার কারণে চোখে ঝাপসা দেখা, চোখের পানি শুকিয়ে যাওয়া, চোখের ওপর চাপ, মাথা ঘোরানো ইত্যাদি হতে পারে। এমন ঝুঁকি থেকে বাঁচতে ন্যূনতম ১৬ ইঞ্চি দূরত্বে মোবাইল ফোনের স্ক্রিন রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া আপনি মোবাইল ফোন ব্যবহারের সময় প্রতি ২০ মিনিট পর কিছুটা বিরতি নেয়ার চেষ্টা করুন এবং মোবাইল স্ক্রিন থেকে আপনার দৃষ্টি কোনো দূরের স্থানে স্থানান্তর করুন।
২. ঘাড় ও পিঠে ব্যথা: বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা তাদের স্ক্রিনে টানা কয়েক ঘণ্টা ধরে ইন্টারনেট বা সোশ্যাল মিডিয়া ব্রাউজ করেন। এসময় দীর্ঘক্ষণ একইরকমভাবে বসে বা শুয়ে থাকার কারণে ঘাড় ও পিঠের পেশীতে টান পড়তে পারে। ঘাড় ও পিঠে ব্যথার ঝুঁকি থেকে মুক্তি পেতে স্মার্টফোন ব্যবহার করার সময় আপনার শরীর ও মেরুদণ্ড সঠিকভাবে রাখুন।
৩. ঘুমের সমস্যা: অতিরিক্ত মোবাইল ফোনের প্রভাবে আরেকটি নেতিবাচক প্রভাব হচ্ছে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটা। লোকজন প্রায়শই বিছানায় শুয়ে সোশ্যাল মিডিয়া ব্রাউজ করতে ব্যস্ত থাকে, যার ফলে দেরিতে ঘুমায়। আবার ঘুমানোর পর মোবাইল ফোনে ম্যাসেজ, ইমেইলসহ বিভিন্ন নোটিফিকেশনের শব্দও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। এই বদভ্যাস ঘুমের ব্যাঘাত ঘটনার সাথে সাথে অনিদ্রা বা ইনসোমোনিয়োর মতো ঝুঁকির দিকেও মানুষকে নিয়ে যায়। নিয়মিত ঘুমের ব্যাঘাত, মাথা ঘোরা, হতাশা, মেজাজ খারাপ হওয়া, উদ্বেগ এবং আরও অনেক শারীরিক ও মানসিক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। ফলে বিছানায় যাওয়ার পর আপনার স্মার্টফোনে ওয়েব ব্রাউজিং বা ভিডিও এবং সিনেমা দেখা বন্ধ করা উচিৎ। ঘুমের সময় মোবাইল ফোনটি শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ থেকে দূরে রাখতে ভুলবেন না।
৪. ব্রেইন ক্যান্সারের ঝুঁকি: আপনি হয়তো জানেন যে, মোবাইল ফোনে ক্ষতিকর ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন রয়েছে। ক্যান্সার বিষয়ক আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, মাইক্রো ওয়েভ রেডিয়েশনের প্রভাবের অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের ব্রেইন টিউমার বা ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এজন্য ব্রেইন টিউমার বা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে দীর্ঘসময় ধরে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা উচিৎ নয়।
৫. পুরুষের বন্ধ্যাত্ব: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, স্মার্টফোন পকেটে রাখলে পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পায়। মোবাইল ফোনের রেডিয়েশন শুক্রাণুর পরিমাণ, সংখ্যা ও ঘনত্ব হ্রাস করতে পারে। তবে মোবাইল ফোন ব্যবহারে নারীদের প্রজনন ক্ষমতা হ্রাসের বিষয়ে কোনো শক্ত প্রমাণ পাওয়া যায় নি। সুতরাং পুরুষদের সারাক্ষণ পকেটে স্মার্টফোন রাখার বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিৎ।
৬. জীবাণু আক্রমণের ঝুঁকি: একটি মোবাইল ফোনের স্ক্রিন টয়লেটের চেয়েও বেশি জীবাণু ধারণ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে ই. কোলির মতো ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া রয়েছে, যার কারণে ডায়রিয়া, জ্বর, সংক্রমণ, বমি ইত্যাদি হতে পারে। বিশেষ করে শিশুরা মুখ স্মার্টফোনের স্ক্রিন চুষতে থাকে, যার মাধ্যমে তাদের শরীরে জীবাণু প্রবেশ করতে পারে। বিভিন্ন রোগও ছড়াতে পারে। সুতরাং, আপনার বাচ্চাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন থেকে দূরে রাখা উচিৎ। নিয়মিত মোবাইল ফোনের স্ক্রিনটি পরিষ্কার করতে ভুলবেন না।
৭. বিচ্ছিন্নতা: বর্তমান বিশ্বে মোবাইল ফোনের বিভিন্ন সুবিধার কথা আমরা অস্বীকার করতে পারি না। পরিবার ও কর্মক্ষেত্রের সঙ্গে তাত্ক্ষণিক যোগাযোগ, নেটওয়ার্ক তৈরি, বিনোদন, ক্যামেরা, জিপিএস, শিক্ষা, ডাটা সংরক্ষণ, গোপনীয়তা, বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে সহজে দৈনন্দিন কাজ সম্পাদন করেন। বিনোদন ও নেটওয়ার্কিং এর নানা আয়োজন থাকায় দীর্ঘ সময় ডিভাইসটিতেই বুঁদ হয়ে থাকেন। এর ফলে একদিকে যেমন স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা দেয় অন্যদিকে তেমনি পরিবার ও সমাজ থেকেও দূরত্ব সৃষ্টি হয়। অনেকসময় পারিবারিক বন্ধনও ছিঁড়ে যায়। তাই অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারের পরিবর্তে আমরা পর্যাপ্ত ঘুমাতে পারি এবং পরিবার ও বন্ধুদের সাথে ভালো সময় কাটাতে পারি।