আগামী বছরের মার্চ নাগাদ টপ লেভেল ডোমেইনে স্বীকৃতি পাচ্ছে বাংলা লিপি। ভার্চুয়াল জগতে সমুন্বত হতে যাচ্ছে বাংলা ভাষা। মাস খানেকের মধ্যে ইন্টারনেট প্রোটকলে যাচ্ছে বাংলাদেশের জন্য স্বতন্ত্র বাংলা লিপি। তখন ইউনিকোডে নোক্তা কোনো লিপি হিসেবে ব্যবহৃত না হলেও বাংলা বর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হবে। ড়, ঢ়, য় বাংলাদেশের একক বর্ণ হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। টেকনিক্যাল টিম যাচাই শেষে দুই মাস পর এই সিদ্ধান্ত পাবলিক কমেন্টেসে যাবে।
এর মাস খানেক পরে ইন্টারনেটের ডোমেইন ঠিকানা বরাদ্দকারী সংস্থা ইন্টারনেট করপোরেশন ফর অ্যাসাইনড নেমস অ্যান্ড নাম্বারস- আইকান কৃতৃপক্ষ বাংলা লিপি-কে টপ লেভেল হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেবে। আর এর মাধ্যমে অনলাইন দুনিয়াতেও ভাষার লড়াইয়ে জয়ী হবে বাংলাদেশ। সেকেন্ড লেভেল ডোমেইন হিসেবে তখন বাংলাদেশের অঞ্চল, প্রতিষ্ঠানের নামেও ডোমেইন নাম খোলা সম্ভব হবে। একইসঙ্গে ডোমেইনে অক্ষর যুক্ত করার সুবিধা মিলবে।
বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরামের সঙ্গে আইকানের অনলাইন বৈঠকে সোমবার (১৪ অক্টোবর) এসব সিদ্ধান্ত হয়ে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সরকারের আইসিটি বিভাগের প্রকল্প পরিচালক মো. জিয়াউদ্দিন, বিটিআরসি’র ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন বিভাগের মহাপরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মাহ্ফুজুল করিম মজুমদার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) পরামর্শক মামুন অর রশীদ, বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরামের মহাসচিব মোহাম্মাদ আব্দুল হক অনু এবং ভাষা প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও প্রফেশনালস সিস্টেমসের প্রধান নির্বাহী হাসিব রহমান।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরামের মহাসচিব মোহাম্মদ আবদুল হক অনু বলেন, ইতিমধ্যেই এ বিষয়ক সকল মিটিং মিনিটসগুলো আমরা আইকান-কে পাঠিয়েছি। তারা আমাদের প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। এখন বিষয়টি আইপিতে (ইন্টারনেট প্রটোকল) যাবে। সেখানে ভেরিফাই হয়ে পাবলিক কমেন্টসের জন্য যাবে। সেখানে সব ঠিক থাকলে মার্চ মাস নাগাদ বাংলা ভাষা থেকে নোকতা অপসারণ হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের লড়াইটা ছিল টপ লেভেল কান্ট্রি ডোমেইন নিয়ে। সেটা চূড়ান্ত। এটা শেষ হলে আমরা সেকেন্ড লেভেল ডোমেইনের প্রতি বিশেষ নজর দেবো। এটা সম্পন্ন হলে ডট বাংলার পাশাপাশি ডট ঢাকা, ডট খুলনা, ডট বরিশাল, ডট সুন্দরবন, ডট স্কুল, ডট কলেজ ইত্যাদি বিষয়ে ডোমেইন নেওয়া যাবে। এমনকি পুরো কাজ শেষ হলে ডোমেইন নামে নিউমেরিক সংখ্যাও বসানো যাবে। তখন .৭১, .৫২ এমনকি বাংলাতেই .প্রথম আলো, .কমপিউটার জগত লেখা যাবে।
মোহাম্মদ আবদুল হক অনু বলেন, আমরা ভাষাভিত্তিক দেশ হলেও অনলাইনে বাংলা ভাষা প্রযুক্তি এখনো পিছিয়ে আছে। স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে আমরা কিছু কাজ করছি। কিন্তু এটি নিয়ে জাতীয়ভাবে কাজ হওয়া দরকার। এ জন্য সরকারের তহবিল বরাদ্দ দেওয়া উচিত বলে মত দেন তিনি।
তিনি বলেন, তহবিল বরাদ্দ দিয়ে বিষয়টি নিয়ে একটি সেল খোলা যেতে পারে। সেখানে গবেষণার কাজও থাকতে পারে। ফলে বিষয়টি একটা গতি পাবে। তাছাড়া এর ফলে অনলাইনে বাংলা ভাষায় লিখিত বিষয়বস্তুরও গুরুত্ব বাড়বে। ভাষার অর্থনৈতিক মূল্য বিবেচনায়ও আমরা ঋদ্ধ হবো।
এ বিষয়ৈ বৈঠকে অংশ নেয়া ভাষা প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ হাসিব রহমান জানান, বাংলা ডোমেইন লেখার রীতি একটি প্যানেলের মাধ্যমে করা হচ্ছে। ওই প্যানেলের নাম নিউ ব্রাক্ষ্মি জেনারেশন প্যানেল বা এনবিজিপি। এই প্যানেল ভারতের নয়টি লিপির (তামিল, তেলেগু, গুজরাটি, গুরুমুখী, দেবনাগরি, কানাড়া, মালায়ালাম, ওড়িয়া ও বাংলা) নীতিমালা (এলজিআর) চূড়ান্তকরণ নিয়ে কাজ করছে। ওটা শেষ হলে নতুন করে প্যানেল তৈরির করার প্রস্তাব দিয়েছি আমরা। ওটার নিয়ন্ত্রণ যেন আমাদের থাকে সে বিষয়টিও প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে।
আইকানের সঙ্গে বাংলাদেশ টিমের বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো এখন ইন্টারনেট প্রটোকলের ইন্টিগ্রেশন প্যানেলে যাবে তিনি আরো জানান, সেখানে কোনও এরর আছে কিনা পরীক্ষা করে দেখা হবে। কোনও এরর বা অসুবিধা না পেলে তা চলে যাবে পাবলিক কমেন্টসের জন্য সেখান থেকে আবার ব্যাক করবে। এই পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ হতে প্রায় ৬ মাসের মতো সময় লাগবে।