স্বয়ংক্রিয় ভাবে নিবন্ধিত হবে সচল ফোন, নিবন্ধনে এক মাস সময় পাবে ব্যবসায়ীরা, জুলাই থেকে অ্যাকশন
আগামী তিন মাসে অর্থাৎ এপ্রিলের মাঝামাঝি অর্জিত হবে প্রযুক্তি নির্ভর সক্ষমতা। আর ছয় মাস পর থেকে (৩০ জুনের পর) সেলুলার নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হবে অনিবন্ধিত মোবাইল ফোন। এ জন্য মালিকানা নিবন্ধন ও নাম বদলের স্বয়ংক্রিয় নিবন্ধন প্রক্রিয়া চালু করতে কাজ করছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন।
অবৈধ হ্যান্ডসেট নিবন্ধন করতে বিটিআরসি’র নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট ঠিকানা neir.btrc.gov.bd ওয়েব লিংকে গিয়ে বিদ্যমান সিটিজেন পোর্টাল এবং মোবাইল অপারেটরের কাস্টমার কেয়ার সেন্টারের সহায়তা নিতে পরবেন গ্রাহকরা।
এর আগেও আন-অফিসিয়াল বা অবৈধ মোবাইল ফোনসেট বন্ধ করে দিতে ১ অক্টোবর সময় বেঁধে দিয়েছিলো কমিশন। ওইসময় বিটিআরসি সূত্র জানিয়েছিলো, ব্যবহারকারীর হাতের মোবাইল ফোনসেট বৈধ না অবৈধ বা আন-অফিসিয়াল তা জানার জন্য পরীক্ষামূলকভাবে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) নামের একটি সিস্টেম ওই বছরের ১ জুলাই থেকে চালু করা হয়। এই সিস্টেমটি মোবাইল ফোন অপারেটর ও আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ফোন আইডেন্টিটি নম্বর) ডাটাবেসের সঙ্গে সংযুক্ত। এতে আগে থেকে মোবাইল অপারেটরের নেটওয়ার্কে যুক্ত থাকা, বৈধ পথে আমদানি এবং দেশে তৈরি মোবাইল ফোনের তথ্য সংরক্ষিত আছে। ফলে আগে থেকেই চালু থাকা মোবাইল নম্বর ও হ্যান্ডসেট স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হয়েছে।
ওই সময় ঘোষণা দেয়া হয়েছিলো, ৩০ জুনের পরে যেসব মোবাইল ফোন নিয়ম মেনে দেশে ঢুকবে না, সেগুলো সচল হবে প্রক্রিয়া মেনে। তখন আশা প্রকাশ করা হয়েছিলো, বিটিআরসির অনুমোদন নিয়ে যেসব মোবাইল ফোনসেট আমদানি বা প্রস্তুত করা হয়নি, সেগুলোই হচ্ছে অবৈধ। নতুন উদ্যোগ পুরোপুরি কার্যকর হলে দেশে কোনো অবৈধ মোবাইল ফোন থাকবে না। দেশের বাইরে থেকে অবৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে আসা ফোনও চালু হবে না। এতে করে বৈধ পথে দেশে মোবাইল ফোন আমদানি বাড়বে, সরকারের রাজস্বও বাড়বে।
মোবাইল ফোনের ডেটাবেজ এবং অটোমেটিক রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) রয়েছে। হ্যান্ডসেটটি সচল রাখতে সেটি নিবন্ধিত কিনা তা জানা জরুরি। হ্যান্ডসেটটি নিবন্ধিত কিনা তা যাচাই করতে ব্যবহারিত মোবাইলে যেকোনো সিম চালু করে ফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে KYD<স্পেস>মোবাইল ফোন সেটের ১৫ ডিজিটের IMEI নম্বরটি লিখতে হবে। এরপর সেটা ১৬০০২ নম্বরে পাঠাতে হবে। ফিরতি মেসেজে মোবাইল হ্যান্ডসেটের বৈধতা সম্পর্কে জানিয়ে দেয়া হবে।
মোবাইল হ্যান্ডসেটের আইএমইআই নম্বর জানা না থাকলে ডায়াল অপশনে গিয়ে *#০৬# চাপলে আইএমইআই নম্বর পাওয়া যাবে। এছাড়া মোবাইলের বক্সে কিংবা মোবাইলের পেছনে একটি স্টিকারেও এটি লেখা থাকে।
অবৈধ মোবাইল ফোন বন্ধ করার ব্যাপারে এর আগে একাধিকবার বিটিআরসি সময়সীমা নির্ধারণ করলেও সেটি কার্যকর করতে পারেনি। ২০২১ সালে জুলাই থেকে সেটগুলো বন্ধের ঘোষণা দিয়ে তা থেকেও সরে আসে বিটিআরসি। নতুন দায়িত্ব নিয়ে আবারো সেই ঘোষণা এলো ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এর কাছ থেকে। আগের বার সফল না হলেও এবার তারা সফল হবেন বলে দৃঢ়তা ব্যক্ত করেছেন তিনি। কীভাবে সম্ভব হবে তা নিয়ে তিনি বলেছেন,
দেশে ব্যবহৃত ৭০ শতাংশ ফোনই ফিচার ফোন। এগুলো চোরা পথে আসে না। স্মার্টফোনও দেশেই তৈরি করছে বাংলাদেশের সহ বহুজাতিক ব্র্যান্ডগুলো। আর যেগুলো চোরাই পথে আসছে সেগুলো তাদের বিনিয়োগকে হুমকীতে ফেলছে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বিনষ্টের পাশাপাশি মানুষের জীবনের জন্য হুমকি ডেকে আনছে। এসব বিবেচনায় প্রযুক্তির মাধ্যমেই স্মার্ট ও স্বয়ংক্রিয় নিবন্ধন পদ্ধতি নিয়ে কাজ করছে বিটিআরসি। তিন মাসের মধ্যে সেই প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে কাজটা কঠিন হবে না। মানুষ তার নিজের কল্যাণেই এটা বাস্তবায়ন করবেন। সিম ও গাড়ি যেভাবে নিবন্ধন ছাড়া চলে না হ্যান্ডসেটও অনিবন্ধিত থাকবে না।
জুনাইদ আহমেদ পলক, প্রতিমন্ত্রী, ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি
সূত্র মতে বিদ্যমান মোবাইলফোন স্বয়ংক্রিয় ভাবেই যেই সিমের অধীনে চলছে তার নামে হ্যান্ডসেটটি নিবন্ধন হয়ে যাবে। আর বাজারে থাকা অবৈধ সেট নিবন্ধনে কিছু দিনের মধ্যেই ব্যবসায়ীদের আল্টিমেটাম দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিটিআরসি’র কমিশনার রিয়াজ আহমেদ।
আগামী মার্চ মাস থেকে চালু হবে এনইআইআর কার্যক্রম। এর আগে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে ব্যবসায়ীদের কাছে থাকা অবৈধ হ্যান্ডসেট নিবন্ধন করে নিতে হবে। তবে ব্যবহৃত হ্যান্ডসেটগুলো স্বয়ংক্রিয় ভাবেই নিবন্ধিত হয়ে যাবে। অপরদিকে কালোবাজারীদের এক মাসের মধ্যে অবৈধ হ্যান্ডসেট বৈধভাবে নিবন্ধনের আল্টিমেটাম দিয়ে দেয়া হবে।
রিয়াজ আহমেদ, কমিশনার, বিটিআরসি
প্রসঙ্গত, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের উদ্যোগে প্রথম দেশে চোরাই পথে আসা অনিবন্ধিত হ্যান্ডসেট নিয়ন্ত্রণ ও দেশে উৎপাদিত হ্যান্ডসেটের সুরক্ষায় ২০২১ সালের জুলাইয়ে ন্যাশনাল ইক্যুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) প্রকল্প চালু করে বিটিআরসি। কিন্তু কার্যক্রম শুরুর মাসেই বন্ধ হয়ে যায় প্রকল্পটি। এতে দেশের ১৪ কোটি টাকার মোবাইল হ্যান্ডসেটের বাজারের প্রায় ৪০ শতাংশই গ্রে-মার্কেটের কব্জায় চলে যায়। প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে দেশে উৎপাদন শুরু করা প্রতিষ্ঠানগুলো ২০২২ থেকে ২০২৩ সালে এসে হ্যান্ডসেট উৎপাদন ৩ কোটি ১৫ লাখ পিস থেকে ২ কোটি ৩৩ লাখে কমিয়ে আনে। এরপর দেশে উৎপাদনে থাকা ১৭টি হ্যান্ডসেট নির্মাতার পক্ষে গত ১৫ জানুয়ারি নিজেদের বিনিয়োজিত ৫ হাজার কোটি টাকা সুরক্ষায় এনইআইআর বাস্তবায়নে বিটিআরসি-কে চিঠি দেয়। একইসঙ্গে টেলিকম প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে উৎপাদকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গ্রে-মার্কেটের কারণে সরকার ২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ক হারাবে বলে অনুমেয়ে হিসাব দেয় মোবাইল ফোন ইন্ডাস্টি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এমওআইবি)।
গ্রে-মার্কেটের দৌরাত্ম্যে এরই মধ্যে আমরা এক তৃতীয়াশ বাজার হারিয়েছি। এই ভাবে চলতে থাকলে ব্যবসায়িক ক্ষতি পাশাপাশি এই খাতের কর্মসংস্থানও হারাবে।
মেসবাহ উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক , এমওআইবি
প্রতিমন্ত্রী এই বক্তব্যকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে পরের দিনই কঠোর সিদ্ধান্ত জানান। বিটিআরিসি’র সঙ্গে প্রথম বৈঠকেই অবৈধ মোবাইল হ্যান্ডসেট বন্ধ করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটিকে নির্দেশনা দিয়ে এটি বাস্তবায়নে সমন্বিত উদ্যোগের অংশ হিসেবে এমটবকে স্মার্ট একটি সল্যুশন দেয়ার আহ্বান জানান।