কীটনাশক ছিটানো থেকে জরিপকাজ পরিচালনা, চলচ্চিত্রের শুটিং থেকে গবেষণা, জরুরি সাহায্য পাঠানো থেকে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা—হেন কোনো কাজ নেই, যে কাজে এখন মনুষ্যবিহীন আকাশ যান অর্থাৎ ড্রোনের ব্যবহার নেই। এই ধারাবাহিকতায় আসছে ২০২৫ সালে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ড্রোন ফুটবলের বিশ্বকাপ। এর আগেই রাজধানীর বনানীতে হোটেল শেরাটনে দেখা মিললো বিশ্বের নবীন ই-স্পোর্টস ড্রোন সকারের। বুধবার সকালে ‘বাংলাদেশ-কোরিয়া ড্রোন রোড শো-তে মাথার ওপর দিয়ে ৫টি সকার ড্রোনের ফুটবল কসরৎ উপভোগ করেছেন অভ্যাগত অতিথিরা। ড্রোন বিশ্বকাপের বিস্তারিত তুলে ধরার সময় চকিত এই প্রদর্শনী উপস্থাপন করেন স্বাগতিক দেশ কোরিয়ান ড্রোন সকার অ্যাসোসিয়েশন পরিচালক প্রফেসার উইলিয়াম প্র্যাগিন।
ঢাকার দক্ষিণ কোরিয়া দূতাবাসের আয়োজেনে আধা বেলার এই সম্মেলনে কোরিয়ার ৬টি প্রতিষ্ঠান তাদের ড্রোন ও জিআইএস বিষয়ক পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে ড্রোনের ভূমিকা তুলে ধরার পাশাপাশি খেলতে খেলতে কীভাবে ড্রোন প্রযুক্তিতে বিদ্যমান সমস্যার সমাধান করা যায় তার ওপর আলোকপাত করেন বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক জহুরুল হক। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় ট্রাফিক ড্রোন, রুম সার্ভিস ড্রোন থেকে শুরু করে এগ্রি বট, ক্র্যাফ্টম্যানশিপ এমনকি মাছ সদৃশ কৃত্রিমি বুদ্ধিমত্তার ড্রোন নিয়ে বুয়েট ল্যাবের গবেষণা ও উন্নয়নের অগ্রগতির তথ্যচিত্র তুলেন ধরেন তিনি। জানালেন, এই কাজে তাঁর সঙ্গে আছেন একই বিভাগের অধ্যাপক শাহেরিন চৌধুরী, প্রিয়ম দাস এবং শাহরিয়ার আলম। সহযোগিতা করছেন তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা। বাণিজ্যিক ভাবে এই গবেষণা এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান বুয়েটের এই শিক্ষক।
এরপর জিআইএস সফটওয়্যারের মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ড্রোনের পরিবেশবান্ধব ব্যবহার তুলে ধরেন কোরিয়ার হোজাং সল্যুশনের অ্যান্ড্রু চো। মহাকাশের ইমেজ ডেটা অ্যানালাইসিস সার্ভিস বিষয়ে আলোকপাত করেন হ্যানকম ইনস্পেস এর মিয়াং চ্যাং, ডিজিটাল টুইন সল্যুশন তুলে ধরেন মেইসা প্লানেট গ্রুপ। স্মার্ট ফার্মিং সল্যুশন তুলে ধরেন জিও স্পেশাল ইনফরমেশনের সুকগু কিম। ৯ বছর আগে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কৃষি জমির ম্যাপিং করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
এর আগে ড্রোন শো-কেইসের উদ্বোধনী বক্তব্যে এ ধরনের রোড শো বাংলাদেশে স্টার্টআপ, উদ্ভাবক, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সহ পুরো আইসিটি খাতের জন্যে একটি নতুন সম্ভাবনা ও সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে বলে অভিমত জানান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক।
সবশেষে, বাংলাদেশ-কোরিয়া এর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আগামীতে আরো শক্তিশালী হবে এবং চলমান থাকবে বলে আশা ব্যক্ত করেন প্রতিমন্ত্রী।
স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ-কোরিয়া যৌথভাবে ড্রোন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং-কিউন। এক্ষেত্রে তরুণদের ড্রোনে আগ্রাহী করতে ড্রোন সকারের প্রসঙ্গ টেনে আনেন তিনি।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান, সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল এন্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস-সিইজিআইএস ব্যবস্থাপনা পরিচালক মালিক ফিদা এ খান, কে-বিডি অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ইয়ং ওহ রিউ সহ বাংলাদেশের ভূমি, অবকাঠামো ও পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং কোরিয়ার ইনস্টিটিউট অব এভিয়েশন সেফটি টেকনোলজি, কোরিয়ান ইউএভি প্রযুক্তি কোম্পানি এবং স্থানীয় সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা।