একটি ক্যামেরায় সর্বোচ্চ কত মেগাপিক্সেল থাকতে পারে—৬৪ বা ১২৮ কিংবা ১৫৬? এটুকুতেই অনেক দূর-দূরান্তের ছবি বেশ পরিষ্কারভাবে পেয়ে যাই আমরা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার মেনলো পার্কের এসএলএসি ন্যাশনাল অ্যাকসেলেরেটর ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানীদের চাহিদা ছিল আরো বেশি। সেই চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে সাত বছর ধরে গবেষণা করে তারা তৈরি করেছেন ৩২০০ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় একদল বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলী দিনরাত এক করে টেলিস্কোপের জন্য এই ক্যামেরা বানান। এতে তোলো ছবিতে রাতের আকাশের বিশাল অংশ ধারণ করা যাবে। অবশ্য গেলো সেপ্টেম্বরে পরীক্ষার জন্য ক্যামেরাটি রাতের আকাশে নয়, তাক করা হয়েছিল মজাদার সব্জি ব্রুকলির দিকে!
ক্যামেরাটি তৈরি ও পরীক্ষার দায়িত্বে আছেন বিজ্ঞানী আরন রুডম্যান। তিনি জানিয়েছেন ক্যামেরার ‘সামনের লেন্স থেকে পেছনের যন্ত্রাংশগুলো পর্যন্ত পুরো ক্যামেরাটি দৈর্ঘ্যে ১৩ ফুট, আর ব্যাস হলো ৫ ফুট—এতটাই বিশাল।’
ক্যামেরাটির ভেতরে লেন্স, ফিল্টার আর অন্যান্য যন্ত্রাংশের সঙ্গে আছে শীতল রাখার ব্যবস্থা। কারণ ক্যামেরাটি কর্মক্ষম রাখতে হলে তাপমাত্রা শূন্যের ১৫০ ডিগ্রি ফারেনহাইট নিচে রাখতে হয়। ক্যামেরাটি পুরোপুরি তৈরি হয়ে গেলে বেশ কিছু লেন্সের সাহায্যে মহাজাগতিক বস্তুগুলোতে ফোকাস ঠিক করা যাবে।
নির্মাতারা বলছেন, ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষণাগারে তৈরি এলএসএসটি ১৫ মাইল দূর থেকে একটি গলফ বলের ছবিও নিখুঁতভাবে তুলে নিতে পারে। শক্তিশালী এই ক্যামেরা বসবে চিলির কেরো পাচো পাহাড়ে। এই পাহাড় থেকে এলএসএসটি পৃথিবীর দক্ষিণ আকাশকে পুরোপুরি ম্যাপিং করতে পারবে। পুরো দক্ষিণ আকাশের পরিষ্কার ছবি পেতে বিজ্ঞানীদের সময় লাগবে প্রায় এক দশক। তবে সাধারণ কোনো ছবি তুলতে ক্যামেরাটি ব্যবহৃত হবে না, রাতের আকাশের ত্রিমাত্রিক ছবি তুলতেই শুধু ব্যবহার হবে।
চলতি বছরের শেষে পরীক্ষামূলকভাবে ছবি তোলা হবে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ডিজিটাল এই ক্যামেরায়। সব ঠিক থাকলে ২০২৩ সালের মে মাসে পুরোপুরি চালু হতে যাচ্ছে এটি। ক্যামেরাটি ব্যবহার করে মহাকাশের ওপর একটি তথ্যচিত্র বানানোর পরিকল্পনা রয়েছে কর্তৃপক্ষের। বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, এলএসএসটি ক্যামেরা ১৭ বিলিয়ন নতুন তারা আবিষ্কার করতে সাহায্য করবে, সেই সঙ্গে আমাদের নিজস্ব সৌরজগতে ছয় মিলিয়ন নতুন বস্তু আবিষ্কারেও সরাসরি ভূমিকা রাখবে। ২৮০০ কিলোগ্রাম ওজনের ক্যামেরাটিতে থাকবে ১৮৯ সেন্সর।
সম্প্রতি জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের মহাকাশের বেশ কিছু ছবি বিজ্ঞানীমহলে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিল। তবে বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, এলএসএসটি জেমস ওয়েবের চেয়েও বিস্তৃত দৃশ্য গ্রহণ করতে পারবে। প্রতি ১৫ সেকেন্ডে চাঁদের আয়তনের সাত গুণ বড় ছবি তুলতে সক্ষম হবে এই ক্যামেরা।
জ্যেতির্বিজ্ঞানীদের আশা, এই ক্যামেরায় মজার সব মহাজাগতিক বস্তুর ছবি তুলতে পারবেন। আর মহাকাশের কোথাও কেউ যদি ব্রকলির চাষাবাদ শুরু করে, তো সেটাও হয়তো ক্যামেরায় উঠে আসবে।