২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে প্রযুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বড় উত্থান ঘটে। এসময় তিন ধরনের ব্যবসায়িক মডেল গড়ে ওঠে। অ্যাপসভিত্তিক পরিবহন সেবা; অনলাইনভিত্তিক বিনোদন ব্যবস্থা এবং ব্যবহারকারীদের মাধ্যমে নিজেদের লক্ষ্যযুক্ত বিজ্ঞাপন প্রচার।
গত কয়ক বছরে ওই ব্যবসায়িক মডেলগুলোর ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে উবার ও ডোরক্যাশ, নেটফ্লিক্স ও স্পটিফাই এবং স্ন্যাপ ও মেটার মতো প্রতিষ্ঠানগুলো। কয়েক বছর ভালো ব্যবসা করলেও, গত এক বছরে বাজার মূলধনের দুই-তৃতীয়াংশ হারিয়েছে তারা। একইভাবে অ্যালফাবেট, আমাজন, অ্যাপল ও মাইক্রোসটের মতো টেক জায়ান্টরা হারিয়েছে মোট ২ ট্রিলিয়ন ডলার ।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পরিসংখ্যান প্রদানকারী সংস্থা ন্যাসডক বলছে, গেলো বছরে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৩০ শতাংশ ইন্টারনেট নির্ভর সেবা প্রতিষ্ঠান। ডৌ জনস এভারেজের তথ্য অনুযায়ী, তুলনামূলক দুর্বল প্রাযুক্তিক শক্তি নিয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার দাম ১০ শতাংশেরও নিচে নেমেছে।
আশঙ্কা করা হচ্ছে, পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। রাইডশেয়ারিংয়ে বিশ্বব্যাপী শীর্ষস্থানীয় হওয়া সত্ত্বেও, উবার তার মূল নগদ প্রবাহ থেকে আরও এক চতুর্থাংশ হারাতে পারে। প্রতিষ্ঠানটি ১৩ বছরে ২৫০ কোটি ডলার হারিয়েছে, যা এর বর্তমান বাজারমূল্যের প্রায় অর্ধেকের সমান।
১৯৯০ সালে স্বল্প পরিসরে যাত্রা শুরু করলেও ২০০৭ সাল থেকে অনলাইন বিনোদন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যাপক প্রসার লাভ করে নেটফ্লিক্স। গত ১০ বছরের মধ্যে নেটফ্লিক্স লাভের চেয়ে বেশি গ্রাহক হারিয়েছে। এর ফলে তাদের শেয়ারও ২০ শতাংশ কমেছে। অন্যদিকে, মেটার বার্ষিক আয় পরপর দুই প্রান্তিকে কমেছে।
খাদ্য সরবরাহে শীর্ষে থাকা ডোরড্যাশও লোকসানকারীদের তালিকায় রয়েছে। অন্যদিকে, স্বাভাবিকভাবে আয় বাড়লেও স্পটিফাই ও স্ন্যাপও রয়েছে এ তালিকায়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘স্ন্যাপে’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী ইভান স্পিগেল একটি চিঠিতে লিখেছেন- প্রতিষ্ঠানটি ২০২২ সালের নতুন অর্থনৈতিক বাস্তবতার কাছে অসহায় অনুভব করছে। তিনি হয়তো ওই চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রের সমগ্র প্রযুক্তিখাতের বিপর্যস্ত অবস্থার কথা ইঙ্গিত করেছিলেন।
বলা হচ্ছে, বহু বছর পৃথিবীজুড়ে একচেটিয়া কর্তৃত্ব ধরে রাখার পর মার্কিন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো বর্তমানে লোকসান, ব্যাপক কাটছাঁট ও সংশোধনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ক্রাঞ্চবেজের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো এ বছর ৪৫ হাজারেরও বেশি কর্মীকে ছাঁটাই করেছে।
আপাত দৃষ্টিতে হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার ও অ্যাপ ভিত্তিক সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যেমন বিস্তর ফারাক রয়েছে, তেমনি তাদের সমস্যাগুলোও স্বতন্ত্র। কিন্তু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, নেটওয়ার্ক প্রসারে ভুল বিশ্বাস, ব্যবসায় প্রবেশের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত অর্থপূর্ণ বাধা না থাকা ও অন্য কোনো প্ল্যাটফর্মের ওপর নির্ভরশীল থাকা- এ তিন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যবসায় প্রবেশের ক্ষেত্রে অর্থপূর্ণ বাধা থাকলে উবারের মতো পরিবহন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো করবে। নেটওয়ার্ক প্রভাব শক্তিশালী হলে অনলাইন বিনোদন মাধ্যমগুলোর ব্যবসা ভালো হবে। তাছাড়া টিকে থাকতে হলে অ্যাপসভিত্তিক এসব প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট কোনো মোবাইল ফোন কোম্পানি বা অন্য কোনো অ্যাপসের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে, না হলে ওই তিনটির যেকোনো একটি কারণে তাদের পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।