প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে থেকে দেশের তিন জেলার প্রান্তিক তরুণদের ৯ ব্যবসা পরিকল্পনা প্রদর্শিত হয়েছে এবং জিতে নিয়েছে মোট ২ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন এবং কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম-এর আয়োজনে প্রতিবছরের মতো এ বছরও ‘ইয়ুথ লেড ইনোভেশন ল্যাব’ নামক এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সাতক্ষীরা জেলার তরুণদের ৯ ব্যবসা পরিকল্পনার মাঝে।
সোমবার রেডিসন ব্লু ঢাকা ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে চূড়ান্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ১ম, ২য় এবং ৩য় বিজয়ী দল নির্বাচিত হয়।
প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেছে ‘হংস রাজ্য’ নামে সাতক্ষীরার একটি ব্যবসা পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী কম খরচে পুষ্টিকর খাবার সরবরাহের মাধ্যমে এলাকার অপুষ্টি দূর করা যাবে। ধান, শামুক, শেওলা, ভুট্টা ইত্যাদি জৈব খাদ্য খাওয়ানোর মাধ্যমে খামারে বিভিন্ন প্রজাতির হাঁস পালন করা হবে, যা থেকে রাসায়নিকযুক্ত খাবারের পরিবর্তে জৈব পদ্ধতিতে মাংস ও ডিম পাওয়া যাবে। এছাড়াও, ঘোড়ার বিষ্ঠা দিয়ে জৈব সার তৈরি করার পরিকল্পনা দেয় দলটি। প্রথম স্থান অর্জন করে ‘হংস রাজ্য’ জিতে নেয় ১ লক্ষ টাকা।
২য় অবস্থানে আছে ঢাকার ‘গ্রো উইথ গ্রিন’, তারা জিতে নেয় পঁচাত্তর হাজার টাকা এবং ৩য় অবস্থানে থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা জিতে নিয়েছে চট্টগ্রামের দল ‘রোড টু গ্রিন’।
চূড়ান্ত বাছাই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “ইয়ুথ লেড ইনোভেশন ল্যাবের মাধ্যমে অনেক তরুণ উদ্যোক্তার দারুণ দারুণ আইডিয়া দেখার সুযোগ হলো। সরকার তোমাদের সহায়তা করতে প্রস্তুত এবং আমাদের মন্ত্রণালয় তোমাদের সাথে কাজ করতেও প্রস্তুত।”
প্রতিযোগিতার শুরু হয় তিন জেলায় সেভ দ্য চিলড্রেনের প্রকল্প এলাকা ও তার আশেপাশের এলাকায় ঘোষণা প্রদানের মধ্য দিয়ে। প্রতি জেলায় ১৬-২৪ বছর বয়সী তরুণরা তাদের দলভিত্তিক পরিকল্পনা সেভ দ্য চিলড্রেনের কাছে পাঠালে তা থেকে কিছু সংখ্যক বাছাই করে তিনদিনের ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হয়। ওয়ার্কশপে স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা, প্রাইভেট সেক্টর প্রতিনিধি এবং সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ নিয়ে কর্মরত বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিরা তিন জেলা থেকে মোট ৯টি পরিকল্পনা বাছাই করেন।
এই ৯ পরিকল্পনা প্রদানকারী দল হলোঃ ঢাকা- ইন্সপায়ারিং ইয়েলো, অর্গানিক সার হাউজ এবং গ্রো উইথ গ্রিন; চট্টগ্রাম- রোড টু গ্রিন মাইলস, উদয়ন (বিজ ব্যাংক) এবং স্বপ্নের বাজার; সাতক্ষীরা- পরিবেশ বন্ধু, হংস রাজ্য এবং আশা ডেইরি।
এর আগে গত ২২ ডিসেম্বর ঢাকায় এই ৯ পরিকল্পনা প্রদানকারী দল নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় ‘বুট ক্যাম্প’ যেখানে তাদের পরিকল্পনা বিষয়ে পুনরায় মেন্টরিং করা হয়। সেভ দ্য চিলড্রেনের বিশেষজ্ঞগণ সহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি এবং প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারাও যার যার সেক্টর সংশ্লিষ্ট পরিকল্পনা প্রদানকারী দলকে ওয়ার্কশপের মধ্য দিয়ে মেন্টরিং করেন।
সোমবার জেলা পর্যায়ে বিজয়ী দলগুলো বিচারকদের সামনে তাদের পরিকল্পনাগুলো মডেল আকারে উপস্থাপন করে। বিচারকদের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা, আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার কর্মী, ব্যবসায়ী, তরুণ উন্নয়ন বিষেশজ্ঞ এবং প্রকৌশলী ছিলেন। উপস্থাপনের পর প্রতিটি দল তাদের পরিকল্পনা বিষয়ে এক মিনিটে বর্ণনা করে। বিচারকমন্ডলী নাম্বার প্রদানের মাধ্যমে চূড়ান্ত তিন বিজয়ীদল নির্ধারণ করেন।
ইয়ুথ লেড ইনোভেশন ল্যাব তরুণ ও যুবদের প্রতিভা এবং নতুন আইডিয়া প্রদর্শনের একটি দারুণ প্লাটফর্ম বলে বিএসআরএম- এর কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি অ্যাডভাইজার রুহি মুরশিদ আহমেদ অনুভূতি ব্যক্ত করেন। “এই প্ল্যাটফর্ম তাদের নেটওয়ার্কিং এবং নতুন যোগাযোগ তৈরি করার সুযোগও দিচ্ছে”- বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জো গুডিংস- হেড অফ কো অপারেশন (ডেভেলপমেন্ট এসিস্ট্যান্স); অনো ভ্যান ম্যানেন- কান্ট্রি ডিরেক্টর, সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশ এবং তানিয়া শারমিন- পরিচালক, চাইল্ড পোভার্টি সেক্টর, সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশ। এছাড়াও ছিলেন বিটপি দাস চৌধুরী- হেড অফ কর্পোরেট এফেয়ারস, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বাংলাদেশ; সৈয়দ রাশেদ আল জায়েদ- সিনিয়র ইকনোমিস্ট, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক; এবং মোঃ আজম উদ্দিন- অতিরিক্ত উপ পরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।