পড়ন্ত দুপুর থেকেই ফেসবুক জুড়ে ছিলো বিদ্যুতের জন্য হাহাকার। মোবাইল সংযোগ পেতে বিড়ম্বনা আর ইন্টারনেটে ধীর গতি নিয়ে অজানা শঙ্কায় ভুগছিলেন নেটিজেনরা। নেটিজেনদের এমন হা-হুাতশ যেনো গুজবের ডাল-পালার জন্ম না দেয় সে ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়াকে সক্রিয় ছিলেন তিন মন্ত্রী।
সবশেষ মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ নিজের ভেরিফারেড ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ঢাকার মিরপুর, মগবাজার, মাদারটেক, রামপুরা, গুলশান, উলন, বসুন্ধরা, ধানমন্ডি, আফতাবনগর, বনশ্রী, ধানমন্ডি (আংশিক), আদাবর, শেরেবাংলা নগর, তেজগাঁও, মিন্টো রোড, মতিঝিল, শ্যামপুর, পাগলা, পোস্তগোলাসহ বেশ কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল হয়েছে।
এর দুই ঘণ্টা আগে এক ফেসবুক পোস্টে টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, জামালপুর, মানিকগঞ্জে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হওয়ার কথা জানান প্রতিমন্ত্রী। এ ছাড়া ঢাকা, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ ও সিদ্ধিরগঞ্জের আংশিক এলাকায় সরবরাহ চালু হওয়ার কথা সে সময় জানিয়েছিলেন তিনি।
এরইমধ্যে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের প্রায় আট ঘণ্টা পর রাজধানী ঢাকাসহ দেশের পূর্বাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়া শুরু করেছে। ফলে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ অঞ্চলে বিদ্যুৎ ফিরতে শুরু করেছে।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসার মুহূর্তে নিজেরে ভেরিফায়েড পেজে ডাক ও টেলিযোগাযাগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার লিখেছেন, ‘বিদ্যুৎ দাও। বিদ্যুৎ দিয়ে মোবাইল চার্জ করব। সাথে মোবাইলে কথা বলার পাশাপাশি ইন্টারনেটও ব্যবহার করার সুযোগ দাও-আজ বিকেল থেকে এমনই কথা শুনছি। বোঝা যায় মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট এখন শ্বাস প্রশ্বাসের মতোই জরুরি।’
অবশ্য এর আগেই বিকেল সাড়ে চারটার দিকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক নিজের ফেসবুক পেজে জানিয়েছিলেন, `পাওয়ার গ্রিডে ট্রিপ ও বিদ্যুৎ সরবরাহ আপডেট–আমিন বাজার গ্রিড পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে। পাওয়ার গ্রিডে ট্রিপ এক সেকেন্ডে হলেও রিস্টরেশন অনেক লম্বা আর জটিল প্রসেস। সন্ধ্যার থেকে রাত ৮ টার মধ্যে ঢাকা শহরের সব এলাকা এবং তারপর ৯ টার মধ্যে চট্টগ্রামের সব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। পাওয়ার গ্রিডের ইঞ্জিনিয়ার ও টেকনিশিয়ানরা কাজ করছেন, গুজব না ছড়িয়ে একটু ধৈর্য ধরার অনুরোধ থাকলো শহর অঞ্চলের সবার প্রতি’।
এদিকে মঙ্গলবার রাতে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার বেলা আড়াইটায় আশুগঞ্জ-সিরাজগঞ্জ ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন চালুর মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করা হয়। রাত ৯টায় সিস্টেম জেনারেশন ৮ হাজার ৪৩১ মেগাওয়াট এবং পরে জেনারেশন বৃদ্ধি করে সতর্কতার সঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করার কাজ চলছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, জাতীয় গ্রিডের পূর্বাঞ্চলের বড় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র (ঘোড়াশাল, আশুগঞ্জ, মেঘনাঘাট, হরিপুর, সিদ্ধিরগঞ্জ) চালু করে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হচ্ছে। রাত ৯টা ৪০ মিনিটে ঢাকায় ২ হাজার ৩০০ মেগাওয়াটের বিপরীতে ১ হাজার ৭৫০ মেগাওয়াট সরবরাহ করা হচ্ছে।
জাতীয় গ্রিডে অনাকাঙ্ক্ষিত বিদ্যুৎ–বিভ্রাটের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মঙ্গলবার বেলা ২টা ৪ মিনিটে জাতীয় গ্রিডের পূর্বাঞ্চলে (ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ) অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বিদ্যুৎ–বিভ্রাট হয়েছে। অতি দ্রুততর সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বিদ্যুৎ বিভাগ ও সংশ্লিষ্টরা কাজ করছেন। এ সময় দেশের উত্তর অঞ্চল (রাজশাহী, রংপুর) ও দক্ষিণ অঞ্চলের (খুলনা, বরিশাল) বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক ছিল।