ঔপনেবেসিকতা থেকে বেরিয়ে প্রযুক্তি নির্ভর আনন্দময় নিজস্ব শিক্ষা ব্যবস্থা চালুর তাগিদ দিয়েছেন টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম দেশ হিসেবে পরিণত করতে শিক্ষার্থীদের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা। পৃষ্ঠপোষকতা করা। তাই তারা আজ যেই বৃটিশ পদ্ধতিতে পড়ছে তাই আমাদের উচিত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের লেখাপড়ার পদ্ধতিতে ঔপনিবেশিক আমলের গোলামীর পদ্ধতি থেকে স্বাধীন করা দরকার। তাদের পাঠদান আনন্দময় করা দরকার।
মঙ্গলবার রাজধানীর মগবজারে অবস্থিত বিটিসিএল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে শহিদ দিবস ও আন্তর্জাজিতক মাতৃভাষা দিবসের আালোচনা ও সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মন্ত্রী।
ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হলে ব্যক্তি থেকে রাষ্ট্রজীবনে বাংলাভাষার চর্চা ও প্রতিষ্ঠা করতে হবে মন্তব্য করে মন্ত্রী আরো বলেন, কৃষি ভিত্তিক বাংলাদেশ এখন পঞ্চম শিল্পবিপ্লবের দিকে যাচ্ছে। এবারের ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলায় স্কুল-মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণদের যে উদ্ভাবন আমরা দেখেছি তাতে আমার কলার উঁচু করার মতো অবস্থা। কেননা, গবেষণা ও উন্নয়নে বছরে ১৮ বিলিয়ন ডলার খরচ করা একটি কোম্পানির সফ্টওয়্যার যদি মেড ইন বাংলাদেশ হয়, তাহলে বুঝতে হবে আমাদের সন্তারদের যে মেধা আছে, সেটা বিশ্বমানের ওপরে। বিশ্বমানের চেয়ে বেশি।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ। এসময় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বাংলা ভাষার পাশাপাশি অবলুপ্ত ভাষার প্রাণ ফিরিয়ে আনতে অবদান রাখছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাভাষার মধুরতার কথা তুলে ধরে অনুষ্ঠানের সভাপতি আবু হেনা মোরশেদ জামানের বললেন, ভাষা কেবল সাংস্কৃতিক বিষয় নয়, ভাষা প্রযুক্তি দেয় স্বাচ্ছন্দ্য এবং অর্থৈনতিক সমৃদ্ধি। ভাষার সামাজিক প্রযুক্তি শক্তি রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও জনযুদ্ধে রূপ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বিশেষ অতিথির বক্তেব্য বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যামসুন্দর সিকদার ভাষা আন্দলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা বিবৃত করতে গিয়ে তুলে ধরেন ওই সময়ের ইন্টিলিজেন্স রিপোর্ট।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর দীর্ঘ ২১ বছর ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের বিষয় উল্লেখ করা হতো না। ভাষা আন্দোলন কেবল ভাষার জন্য নয়, এটি বাঙ্গালির সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন উল্লেখ করে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, ভাষার জন্য এমন আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত পৃথিবীর আর কোথাও নেই। ১৯৫২ সালে যারা আত্মহুতি দিয়েছেন সেই সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, ১৯৪৮ সাল থাকে ভাষা আন্দোলনের বীজ বপন হয়।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রফিকুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আসাদুজ্জামান চৌধুরী।
বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধু ও ভাষা আন্দোলন অভীন্ন। বাংলাকে আন্তর্জাতিক পরিসরে নিয়ে যেতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণার জন্য প্রবাসী বাঙ্গালীদের অবদান অনস্বীকার্য।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এর পক্ষ থেকে কমিশনের চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদারের নেতৃত্বে শহীদদের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিটিআরসি’র ভাইস-চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোঃ মহিউদ্দিন আহমেদ, লিগ্যাল এন্ড লাইসেন্সিং বিভাগের কমিশনার আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন, অর্থ, হিসাব ও রাজস্ব বিভাগের কমিশনার অধ্যাপক ড. মুশফিক মান্নান চৌধুরী, প্রশাসন বিভাগের মহাপরিচালক মোঃ দেলোয়ার হোসাইনসহ বিটিআরসির উধ্বর্তন কর্মকর্তারা। পর্যায়ক্রমে টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড, ডাক অধিদপ্তর, টেলিফোন শিল্প সংস্থা, মেইলিং এন্ড কুরিয়ার লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ, টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের পক্ষ থেকে ফুলেল শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়।
অনুষ্ঠান শেষে দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় ক শাখায় ফাতেহ আল মাহরুম, আজমাইন ও আব্দুল্লাহ তাসনীন এবং খ শাখায় আরিফুজ্জামান সাইম, আহাদুল ইসলাম এবং তরঙ্গ জয় ধর বিজয়ী হয়েছেন।
এছাড়াও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় ক শাখায় প্রথম হয়েছে মেহজাবিন ইসলাম জাহিন (৫ম শ্রেণী), দ্বিতীয় স্নিগ্ধা ঘোষ (৫ম শ্রেণী) এবং তৃতীয় মারিয়া আক্তার মাহিমা (৪র্থ শ্রেণী)।
খ শাখায় বিজয়ীরা হলেন- তাসমিয়াহ তাসবীহ (৭ম শ্রেণী), মোরশেদা আক্তার (৮ম শ্রেণী) এবং আলিফ মনি (৮ম শ্রেণী)।
এর আগে সকাল ৯টার দিকে মন্ত্রী ও সচিব ছাড়াও স্কুলের শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রত্যেক বিভাগের প্রধান ও স্কুল কমিটি।