দেশে ফিরেছেন মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন বিমানবন্দরে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত বেসিসের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি রাসেল টি আহমেদ। সৌভাগ্যক্রমে আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে কম আঘাত প্রাপ্ত ডিজিবাংলা-কে জানিয়েছেন দুর্ঘটনা নিয়ে তার পর্যবেক্ষণ ও অভিজ্ঞতার কথা। জানাচ্ছেন- ইমদাদুল হক।
ডিজি বাংলা : কেমন আছেন?
রাসেল টি আহমেদ : আলহামদুলিল্লাহ। মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে এসেছি। আল্লাহ যে একজন আছেন, তার সাক্ষাত পেলাম। যেই ১০/১২ জন স্পাইনে অর্থাৎ মেরুদন্ডে আঘাত পেয়েছেন তাদের মধ্যে আমার অবস্থা ভাল। দুর্ঘটনাটি এমন ছিলো যে বাঁচার কোনো সুযোগ ছিলো না। সৃষ্টিকর্তার অপার কৃপায় ভালো আছি।
ডিজি বাংলা : কেউ তো মারা যায়নি..
রাসেল টি আহমেদ : হুম, বিমানটি ধপাস করে পড়ে গিয়ে লম্বালম্বি ভাবে দুই ভাগ হয়ে গিয়েছিলো। এটাই আল্লাহর কৃপা, বিমানটিতে আগুন ধরেনি। ধরলে বাঁচার কোনো সুযোগ ছিল না। উফ্।
ডিজি বাংলা : আসলে কী ঘটেছিলো?
রাসেল টি আহমেদ : প্রথমবার আমি বুঝলাম উড়োজাহাজটি নামতে গিয়েও ওপরের দিকে উঠে যাচ্ছে। তখন বলা হলো, খারাপ ওয়েদারের কথা। এর ৭-৮ মিনিট পর আবার বিমানটি অবতরণ করতে শুরু করলো। কিন্তু লক্ষ্য করলাম রানওয়েতে চাকা স্পর্শের আগেই বিমানটি রানওয়ের অনেকটা পথ চলে এসেছে। তখনই আমি আতঙ্কিত হই। কেননা প্রথম ল্যান্ডিং এপ্রোচে ওয়েদার খারাপ ছিল। দ্বিতীয় এপ্রোচে লক্ষনীয়ভাবে খারাপ ছিল না। আমরা নীচে দেখতে পাচ্ছিলাম। রানওয়ে দেখা যাচ্ছে। তখনো চাকা লাগছে না!। এরপর যা হবার তাই। রানওয়ের মাঝামাঝি গিয়ে ধপাস করে একটা বাড়ি খেলো বিমানটি। এরপর ওপরে উঠলো, আবার নিচে পড়লো। এভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে রানওয়ে থেকে ছিটকে যায় উড়োজাহাজটি। সঙ্গে সঙ্গেই বিমানটি লম্বালম্বি দুই ভাগ হয়ে যায়। ফলে এমারজেন্সি এক্সিটটাও আটকে যায়।
ডিজি বাংলা : এরপর?
রাসেল টি আহমেদ : এরপর আমরা সবাই বের হওয়ার চেষ্টা করলাম। আমি এবং সামনের সিটে বসা একজন অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক দরজার লিবারটি পুশ করে খোলার চেষ্টা করছি। কিন্তু পুল করতে পারছিলাম না। এরপর বিমানবন্দরের রেসকিউ টিম আমাদের দ্রুত দরজা কেটে উদ্ধার করে।
ডিজি বাংলা : উদ্ধার পরবর্তী অভিজ্ঞতা?
রাসেল টি আহমেদ : পরবর্তী অভিজ্ঞতা খুব একটা খারাপ না। তবে অ্যাম্বুলেন্স আসতে অন্তত ৩৫ মিনিট সময় নিয়েছে। প্রথমেই স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে পাঠানো হয় ইয়াঙ্গুন জেনারেল হাসপাতালে। এরপর বিমান কর্তৃপক্ষের চাপে এআর ওয়াইইউ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। আর মিয়ানমারের সরকারের পাশাপাশি আমাদের দূতাবাসের কর্মকর্তারাও ছিলেন আন্তরিক। তারা ২৪ ঘণ্টাই আমাদের সঙ্গে ছিলেন।
ডিজি বাংলা : এখন শরীরের অবস্থা কেমন?
রাসেল টি আহমেদ : লোয়ার স্পাইনালের এল-২ হাড় ফ্র্যাকচার হয়েছে। ১০-২০ শতাংশ। এ জন্যই অপারেশনের প্রয়োজন হয়নি। ডাক্তার বলেছেন, সপ্তাহ তিনেক বিশ্রাম নিতে হবে। চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে।
ডিজি বাংলা : আপনি তো বললেন, আবহাওয়া ততটা খারাপ ছিলো না, তাহলে দুর্ঘটনাটি ঘটলো কীভাবে?
রাসেল টি আহমেদ : দীর্ঘদিনের বিমান অভিজ্ঞতা থেকে ৩টি বিষয়ে আমার খটকা লেগেছে। খারাপ আবহাওয়ার করণে প্রথমবার সমস্যা হয় বলে জানানো হয়। অবশ্য আমরা ভেতর-বাইরে কেথাও আবহাওয়া খারাপের আলামত পাইনি। আবার দ্বিতীয় বারেও কোনো সতর্ক বার্তা দেয়া হয়নি। তাহলে সমস্যাটা কোথায় ছিলো? আমার কাছে মনে হয়েছে, বিমানের মিটার রিডিং কিংবা পাইলটের ভুল হয়েছিলো কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার। তদন্ত চলছে। সে ক্ষেত্রে কোনো প্রয়োজন হলে যাত্রী হিসেবে আমি আমার অভিজ্ঞতা জানাতে প্রস্তুত। আমরা জানতে চাই, কী হয়েছিলো বিমানে?
প্রসঙ্গত, গত ৮ মে সন্ধ্যায় মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন বিমানবন্দরে বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে অবতরণ করতে গিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে। এ সময় বিমানে থাকা পাইলট কেবিন ক্রুসহ ৩৫ জন আহত হন।
দুর্ঘটনার বিষয়ে বিমানের পাইলট শামীম নজরুল জানান, ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজটি নিরাপদেই অবতরণ করেছিল। তবে হঠাৎ ঝড়ের কবলে পড়ে বিমানটি রানওয়ে থেকে ছিটকে যায়। তাৎক্ষণিক ইঞ্জিন বন্ধ করে দেয়ায় বড় দুর্ঘটনা থেকে যাত্রীরা রক্ষা পান।