সরকারি সেবায় নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করতে চলতি বছরের জুলাইয়ে ন্যাশনওয়াইড বা জাতীয় আইএসপি লাইসেন্স পেতে বাংলাদেশে টেলেযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন-বিটিআরসি’র কাছে আবেদন করেছিলো বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)। সেই আবেদন পর্যালোচনার পর এরই মধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে সবুজ সঙ্কেতও দেয়া হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ডিজিবাংলাটেক-কে বলেছন, আমরা বিসিসি-কে লািইসেন্স দেয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিয়ে দিয়েছি। এখন যে কোনো সময় বিটিআরসি তাদের লাইসেন্স দিয়ে দেবে। সেই লাইসেন্স নিয়ে তারা তাদের মতো করে ব্যবসা করতে পারবে।
এ বিষয়ে বিটিআরসি’র লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্স শাখার মহাপরিচালক আশীষ কুমার কুণ্ড সরাসরি কিছু বলতে রাজি হননি।
তবে নির্ভরযোগ্য সূত্র অনুযায়ী, জুলাইয়ে আবেদনের পর বিসিসির সব কাগজপত্র ও লাইসেন্স ইস্যুর বিষয়ে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ঠিক পেয়েছে নতুন আবেদন মূল্যায়ন কমিটি। এছাড়া অফিসও পরিদর্শন করে। এসময় তাদের কোয়ালিটি অব সার্ভিস সহ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লােইসেন্স গাইড লাইনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু বিষয়ে ব্যখ্যা চাওয়া হয়। এরপর বিষয়টি আরও পর্যালোচনার পর গেলো অক্টোবরে বিসিসিকে এই জাতীয় আইএসপি লাইসেন্স ইস্যুর সিদ্ধান্ত হয়। সম্প্রতি কমিশন বৈঠক শেষে বিসিসি-কে জাতীয় আইএসপি লাইসেন্সের সুপারিশসহ ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগকে পূর্বানুমোদনের জন্য চিঠিও পাঠিয়েছে। ওই একই সময়ে আরো ছয়টি নতুন আইএসপি লাইসেন্স দেয়ারও সুপারিশ করা হলেও মন্ত্রণালয় অনুমোদন দেয়নি।
এদিকে বিসিসি-কে লাইসেন্স দেয়ার বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হক। তার মতে, এর ফলে ব্যবসায়ের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নষ্ট হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। কেননা সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করতে গেলে ব্যবসায় পরিবেশ নষ্ট হয়; প্রতিযোগিতার পরিবেশ থাকে না। বিটিসিএল এর উদাহরণ টেনে তিনি বলেছেন, এ ধরণের উদ্যোগে সরকারি অর্থের অপচয় হওয়ার শঙ্কা থেকেই যায়।
তবে লাইসেন্স আবেদন বিষয়ে বিসিসি নির্বাহী পরিচালক রণজিৎ কুমার ডিজিবাংলাকে বলেছেন, তারা ব্যবসা করতে লাইসেন্স নিচ্ছেন না। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণে বিশেষ করে, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের গুরুত্বপূণ ভিডিও কনফারেন্স, জাতীয় টায়ার-৩ ডেটা সেন্টারের মাধ্যমে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ই-সেবা এবং কানেক্টেড বাংলাদেশ ও ইনফো সরকার প্রকল্প বাস্তবায়নে এই লাইসেন্স এর আবেদন করেছিলেন।
লাইসেন্স প্রাপ্যতার ইতিবাচক বিষয় উল্লেখ করে ‘ডেভেলমেন্ট অব ইনফ্রাসট্রাকচার ফর আইটি অ্যাপ্লিকেশনস’ নামের একটি প্রকল্পের নামে বিসিসি একসময় সেন্ট্রাল আইএসপি লাইসেন্সধারী ছিলো বলেও জানান বিসিসি প্রধান নির্বাহী। ২০১৩ সালে সেই লাইসেন্সের মেয়াদ ফুরিয়ে গেলেও ভিডিও কনফারেন্সিং এবং সরকারি ই-সেবার বিষয়টি কল্পনায় না থাকায় আর নবায়ন করা হয়নি বলে জানান তিনি। সঙ্গত কারণেই ওই লাইসেন্সটি বাতিল করে বিটিআরসি।
প্রসঙ্গত, ইনফো সরকার প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশে ১৮ হাজার ১৩০ সরকারি দপ্তরে ই-সেবা দিচ্ছে। বিটিআরসির এসওএফ তহবিল দিয়ে ৬১৭ ইউনিয়নে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের কাজ করছে। এছাড়া দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করছে বিসিসি।