নাটকীয়তার জন্ম দিয়ে শনিবার যথাসময়েই হচ্ছে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জাতীয় বাণিজ্য সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)-এর বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম)। শুক্রবার রাতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক চিঠিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়। এর ফলে বেসিস এর ২৫তম এই সাধারণ সভাটি হতে যাচ্ছে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ইতিহাসে ঐতিহাসিক।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, বেসিসের ১৬ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য এজিএম স্থগিত করার জন্য জারিকৃত সূত্রস্থ পত্রের কার্যকারিতা অনিবার্য কারণে নির্দেশক্রমে স্থগিত করা হলো।
এর আগে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (টিও-২ শাখা) মো. আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন, গত ১০ মার্চ ডাকাতিয়ার প্রোপাইটর মো. ফাইকুজ্জামানের আবেদনের প্রেক্ষিতে বেসিসের আগামী ১৬ মার্চ শনিবার অনুষ্ঠিতব্য এজিএম স্থগিত করা হলো। একইসঙ্গে সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আর্থিক নিরীক্ষা (অডিট) কার্যক্রম সঠিকভাবে সম্পন্ন করে এজিএম করার নির্দেশনা দেওয়া হয় জিঠিতে।
এদিকে বেসিস সদস্য নয় এমন এক ব্যক্তির উড়ো চিঠিতে কোনো শুনানি ছাড়াই এজিএম স্থগিত করার বিষয়টি নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। প্রকাশ্যে কিছু না বললেও সেই শঙ্কাই এবার সত্যি হলো। ফলে এই শঙ্কা কাটিয়ে যথারীতি রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত এই রাওয়া কনভেনশন সেন্টারেই মে অনুষ্ঠিত হবে বেসিস এর ১৫তম কার্য নির্বাহী কমিটির ভোট।
প্রসঙ্গত, অভিযোগ দাখিলকার ডাকাতিয়া প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এসএম শাহ রাইহান। কিন্তু বিস্ময়ের বিষয় হলো প্রতিষ্ঠানটির প্রোপাইটার হিসেবে দাবীদার মো. ফাইকুজ্জামানের কোনো তথ্য বেসিস ওয়েবসাইটে নেই। এমন পরিস্থিতিতে বেসিস বৃহস্পতিবার রাতেই সেই চিঠির জবাব পাঠায়। চিঠিতে বলা হয়, ১৪ মার্চ ২০২৪ আপনার স্বাক্ষরিত একটি পত্র আমরা অফিস সময়ের ২ ঘণ্টারও বেশি সময় পরে অর্থাৎ সন্ধ্যা ৫টা ৪৬ মিনিটে ইমেইলে ও হোয়াটসঅ্যাপে পেয়েছি। গত ১০ মার্চ ২০২৪ তারিখে জনৈক বেসিস সদস্য ফাইকুজ্জামানের আবেদনের প্রেক্ষিতে আগামী ১৬/৩/২০২৪ তারিখ, শনিবার অনুষ্ঠেয় বেসিস এজিএম স্থগিত করতে বলা হয়েছে। অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বিগত ৪ দিনে বেসিসকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়নি বা কোনো শুনানিতেও ডাকা হয়নি বা ব্যাখ্যা চাওয়া হয়নি। চিঠিতে বেসিস মহাপরিচালক বাণিজ্য সংগঠন (ডিটিও) থেকে পরবর্তী নির্দেশনা দেওয়ার অনুরোধ করেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত বেসিস সফটএক্সপো আয়োজনের দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই প্রতিষ্ঠানের প্রায় দুই কোটি টাকার বিল প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে পরিশোধ না ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে পরিশোধের অভিযোগ ওঠে। বিধি বহির্ভূত এই লেনদেন নিয়ে প্রশ্ন তুললে কার্যনির্বাহী কমিটিকে (ইসি) না জানিয়ে এবং বিশেষ বর্ধিত সভা (ইজিএম) আয়োজন না করেই নির্ধারিত অডিট ফার্ম মিজান অ্যান্ড কোং-কে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এর বদলে অধিকারি অ্যান্ড কোং অডিট ফার্মকে দিয়ে নতুন করে নিরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করানো হয়।
বেসিস সূত্রে জানা যায়, এজিএম সামনে রেখে আমন্ত্রণ ও নিরীক্ষা প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন নথিপত্র সদস্যদের পাঠানোর পর গত শনিবার (৯ মার্চ) বেসিসের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক ছিল। সেখানে অডিট ফার্ম পরিবর্তন নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েন বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ। একপর্যায়ে বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ ও সহসভাপতি (অর্থ) ফাহিম আহমেদ জানান, আগের অডিট ফার্ম মিজান অ্যান্ড কোং যেসব অডিট আপত্তি দিয়েছে, তা পূরণ করতে হলে এক কোটি ছয় লাখ টাকা বাড়তি কর দিতে হবে। এই কর এড়ানোর জন্যই নতুন অডিট ফার্ম নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
বিধি বহির্ভূত লেনদেন ও সবার অগোচরে অডিট ফার্ম পরিবর্তনের ঘটনায় বেসিসের তিন পরিচালক ‘নোট অব ডিসেন্ট’ও দিয়েছিলেন বেসিসে।