আজ ১২ দিন অতিবাহিত হয়ে গেল সাবমেরিন ক্যাবল (সি-মি-উই-৫) কেবল কোম্পানির ক্যাবলের ত্রুটির। গতকাল আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাবমেরিন কেবল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তা ব্যক্তিদের যে বক্তব্য লক্ষ্য করেছি তা অত্যন্ত দুঃখজনক। গ্রাহকের ভোগান্তির জন্য তারা দুঃখ প্রকাশ না করে এবং দ্রুত সমস্যার সমাধান এর উদ্যোগ না নিয়ে তারা এখন বলছে আরও এক মাস সময় লাগবে। কিন্তু তাদের ব্যর্থতার দায় গ্রাহকরা কেন নেবে?
ইন্টারনেটের ধীরগতির কারণে গ্রাহকরা কাজ করতে পারছে না। তীব্র গরমের কারণে যেখানে বলা হচ্ছে ঘরে থেকে অনলাইনে অফিস, আদালত, ব্যাংক এবং বিভিন্ন সেবা এবং শিক্ষার কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য সেখানে ব্যান্ডউইথ সরবরাহের ঘাটতির কারণে ইন্টারনেটে ধীরগতির ফলে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রাহক। অথচ গ্রাহক কিন্তু মাস শেষে ব্রডব্যান্ড সেবা বা মোবাইল ডাটা ক্রয় করার জন্য সমপরিমাণ অর্থ ব্যয় করছেন ঠিকই। বিপরীতে তারা কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছেন না। এর দায় কে নেবে তাহলে?
আমরা মনে করি এর সম্পূর্ণ দায়-দায়িত্ব নিতে হবে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানিকে। একই সাবমেরিন ক্যাবল থেকে আরো ১৫ টি দেশ সেবা কার্যক্রম পুরোদমে নিতে পারলেও ১৬ তম দেশ বাংলাদেশ নিতে পারছে না কেন? নিশ্চয়ই তাহলে তাদের চুক্তিতে বড় রকমের কোন ত্রুটি রয়েছে। এখন পর্যন্ত সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে থেকে এমন কি ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে কোন বিবৃতি প্রদান করা হয়নি। পররাষ্ট্র পর্যায়ে কোন আলোচনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে সেটাও আমরা লক্ষ্য করিনি। ইন্টারনেট ব্যবসায়ীরা আইটিসির ব্যাকআপ দিয়ে এই সমস্যার প্রকটতা কমানো চেষ্টা করছেন। কিন্তু তীব্র গরম, ব্যান্ডউইথ অপ্রতুলতা পাওয়ার ব্যাকআপ সমস্যা সব মিলিয়ে গ্রাহকের ততটা স্বস্তিতে নেই। এমন পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত তাপপ্রবাহে স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। অফিস-আদালতের অনেকেই অনলাইনে কাজ সারার চেষ্টা করছেন। তারপরও প্রতিদিন হিট স্ট্রোকে প্রাণহানি ঘটছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাবেই গত এক সপ্তাহে হিট স্ট্রোকে মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের। এমন পরিস্থিতে নাগরিককে ঘরে-অফিসে থেকেই অনলাইনে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দ্রুতগতির ইন্টারনেট সরবরাহ করতে সাবমেরিন কেবল কোম্পানির কোনো উদ্যোগ নেই যা দুঃখজনক এবং হতাশা জনক।
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে এ ধরনের ব্যবস্থাপনায় কী আদৌ সম্ভব? পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিপিএলসি) সিমিউই-৪ এবং সিমিউই-৫ নামের দুটি আন্তর্জাতিক সাবমেরিন ক্যাবল কনসোর্টিয়ামের (কোম্পানি) সদস্য। যেটি বাংলাদেশে সাবমেরিন ক্যাবলসের অধিক ক্ষমতা ও পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করে। বর্তমানে সিমিউই-৪ এবং সিমিউই-৫ ক্যাবল দুটির মাধ্যমে বাংলাদেশের ইন্টারনেট এবং আন্তর্জাতিক ভয়েস ট্র্যাফিক চলছে। সিমিউই-৪ এর জন্য বিএসসিসিএলের ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন রয়েছে কক্সবাজারে। আর সিমিউই-৫ এর জন্য বিএসসিসিএলের ল্যান্ডিং স্টেশন চালু হয়েছে পটুয়াখালীর কুয়াকাটাতে। এমন পরিস্থিতিতে ইন্টারনেটকে বলা হচ্ছে স্মার্ট বাংলাদেশের লাইফ লাইন। অনুমান বলঝে, আগামী ২০৩০ সালে ব্যান্ডউইথের ব্যবহার গিয়ে দাঁড়াবে প্রায় ১৫ হাজার জিপিপিএস। তাই দুটি সাবমেরিন কেবল দিয়ে এই চাহিদা পূরণ করা মোটেও সম্ভব নয়। তার জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া উচিত।
আমরা সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা মহোদয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এবং দ্রুত সমস্যার সমাধান করার জন্য সবিনয় অনুরোধ করছি।
লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন।
দ্রষ্টব্য: অভিমত-এ প্রকাশিত পুরো মতামত লেখকের নিজস্ব। এর সঙ্গে ডিজিটাল বাংলা মিডিয়া কর্তৃপক্ষের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। বহুমতের প্রতিফলন গণমাধ্যমের অন্যতম সূচক হিসেবে নীতিগত কোনো সম্পাদনা ছাড়াই এই লেখা প্রকাশ করা হয়। এতে কেউ সংক্ষুবদ্ধ বা উদ্বেলিত হলে তা তার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়।