সৈয়দ আলমাস কবীর
এখন ডিজিটাল যুগ পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে অগ্রসর হচ্ছি আমরা। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২৬ সালের পর স্বল্পোন্নত আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি আইসিটি খাত নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
কিন্তু ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রপ্তানির বিপরীতে রপ্তানি প্রণোদনা/ নগদ সহায়তা প্রদান প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক আজ একটি সার্কুলার জারি করেছে; যেখানে-
বাংলাদেশ হতে সফটওয়্যার, আইটিইএস (Information Technology Enabled Services) ও হার্ডওয়্যার রপ্তানির বিপরীতে প্রনোদনা ১০% থেকে কমিয়ে ৮% এবং সফটওয়্যার, আইটিইএস সেবা রপ্তানির বিপরীতে ব্যক্তি পর্যায়ের ফ্রিল্যান্সারদের জন্য রপ্তানি প্রনোদনা ৪% থেকে কমিয়ে ৩%করা হয়েছে। যা আমাদের প্রযুক্তির অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করবে নিঃসন্দেহে।
প্রথমত, ২০২৫ সাল নাগাদ সরকারের ৫০০ কোটি (৫ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন- ইন্ডাস্ট্রির ধারণ করা এই টার্গেট সরকারও এখন ধারণ করে। তাই ২০২৫ এর আগে রপ্তানি প্রণোদনা কোনোভাবেই ৮% করা যাবে না। রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে এবং নগদ প্রণোদনা হ্রাস রপ্তানিকারকদের নিরুৎসাহিত করবে।
আমাদের অবশ্যই ৫ বিলিয়ন অর্জনের লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রণোদনা বজায় রাখতে হবে। দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির মুখে পড়বে আইসিটি খাত।
দ্বিতীয়ত, অন্যান্য শিল্প খাতে কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে প্রণোদনা নিয়ে অনিয়ম হয়েছে। অন্যান্য খাতের অনিয়মের জন্য আইসিটি শিল্পকে শাস্তি দেওয়া উচিত নয়। এগুলি অসৎ লোকদের দ্বারা বিপথগামী, সম্পর্কহীন ঘটনা। তথ্য-প্রযুক্তি একটি জ্ঞান-ভিত্তিক-ইন্ডাস্ট্রি এবং এই অনিয়ম এখানে নেই।তাই এর ঋণাত্মক প্রভাব আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসায়ীদের উপর পড়বে।
তৃতীয়ত, রপ্তানিতে বিপিও ইন্ডাস্ট্রি উল্লেখযোগ্য অবস্থায় আছে- এর সাথে যুক্ত আছে দেশের অনেক ছেলেমেয়ে ও তাদের কর্মসংস্থান। আমাদের ব্যবসায়ীদেরসহ তরুণ প্রজন্মকেও নিরুৎসাহিত করবে এই উদ্যোগ। আরএমজি সেক্টরের পাশাপাশি রেমিট্যান্স আনার জন্য সম্ভাবনাময় এই খাতকে দাঁড়ানোর জন্য এই খাতেও প্রণোদনা প্রদান অব্যাহত রাখতে হবে।
অন্যদিকে ২০২৬ সালের পর যখন আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে একটি উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হব, তখন আমরা কিছু সুযোগ পাব। আমাদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে এবং দেশের আরও উন্নয়ন করতে আমাদের সেই সুযোগগুলোকে কাজে লাগাতে হবে, রপ্তানি ক্ষেত্রে পণ্যসেবা এবং বাজার বহুমুখীকরণে যেতে হবে। আমরা বুঝতে পেরেছি যে ২০২৬ সালের পরে প্রণোদনা বন্ধ করতে হবে। কিন্তু, ততদিনে আমরা আমাদের দক্ষতার ভিত্তি গড়ে তুলব এবং হাই-ভ্যালু মার্কেটের জন্য প্রস্তুত হইয়ে যাব যাতে আমরা এখন যা উপার্জন করছি তার ৩-৪ গুণ উপার্জন করতে পারব। ফলশ্রুতিতে আমরা রপ্তানির পরিমাণ ৫ বিলিয়নে উন্নীত হতে সক্ষম হব এবং ঊর্ধ্বমুখী পথ ধরে রাখতে পারব। সামগ্রিকভাবে সরকারঘোষিত অগ্রাধিকার খাত ও শিল্প হিসেবে বিবেচিত এই তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসায় তরুণ উদ্যোক্তা ও পেশাজীবীদের এবং বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে এ অব্যাহতির সীমা হ্রাসের এখনই প্রকৃত সময় নয় বলে আমি মনে করি।