সৌরজগতের বাইরে যমজ গ্রহ আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। পৃথিবী থেকে যার অবস্থান ২১৮ আলোকবর্ষ দূরে। লাল বামন (ছোট) নাসার কেপলার স্পেস টেলিস্কোপে ধরা পড়েছে পৃথিবীর থেকে প্রায় দেড়গুণ বড় আকারের এই গ্রহ দুটি। নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকা এই গ্রহমণ্ডলী পৃথিবীর মতো নয়। হোস্ট স্টার-সহ এই জোড়া গ্রহ আবিষ্কারের পর আলোড়ন পড়ে গিয়েছে মহাকাশ বিজ্ঞানে।
কেপলার স্পেস টেলিস্কোপ ছাড়াও যমজ গ্রহগুলি আবিষ্কারের জন্য হাবল ও অবসরপ্রাপ্ত স্পিটজা স্পেস টেলিস্কোপের সহায়তা নেওয়া হয়েছে। জোতির্বিজ্ঞানীদের ধারণা, গ্রহ দুটির উপরিভাগ পানিতে তলিয়ে আছে। এ জন্যই এই দুই গ্রহকে ‘ওয়াটার ওয়ার্ল্ড’ বলে বর্ণনা করেছেন তারা। ফলে ভিনগ্রহে প্রাণের সন্ধানও মিলে যেতে পারে।
কানাডার মন্ট্রিয়ল বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল জোতির্বিজ্ঞানী নাসার হাবল ও স্পিটজা নামে দুটি টেলিস্কোপ ব্যবহার করে তাদের গবেষণায় গ্রহ দুটির সন্ধান পান। গবেষণায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ইনস্টিটিউট ফর রিসার্চ অন দ্য এক্সোপ্লানেটস–এর ক্যারোলিন পিউলেট। নেচার অ্যাস্ট্রনমি নামের একটি বিজ্ঞান সাময়িকীতে কেপলার–১৩৮সি ও কেপলার–১৩৮ডি নামের গ্রহ দুটির বিষয়ে গবেষণায় পাওয়া ফল নিয়ে একটি বিস্তারিত নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষক দলের প্রধান ক্যারোলিন পিউলেট ও তার সহকর্মীরা সৌরজগতের বাইরে যে দুটি গ্রহ আবিষ্কার করেছেন এর বেশির ভাগ অংশ বরফের পৃষ্ঠের পরিবর্তে পরীপূর্ণ জলীয় বাষ্পে।
পর্যবেক্ষণ বলছে, এই দুটি এক্সোপ্ল্যানেট সৌরজগতের বাইরে আবিষ্কৃত অন্য কোনও গ্রহের মতো নয়। লাইরা নক্ষত্রমণ্ডলে ২১৮ আলোকবর্ষ দূরে একটি গ্রহমণ্ডলে অবস্থিত পানিতে তলিয়ে থাকা অনন্য একটি জগত। তবে এখনও সরাসরি পানি শনাক্ত করা যায়নি। গবেষকরা গ্রহের আকার এবং ভরের মডেলের সঙ্গে তুলনা করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন।
এই গ্রহের অর্ধেক পর্যন্ত এমন পদার্থ দিয়ে তৈরি যা, পাথরের থেকে হালকা কিন্তু হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের থেকে ভারী। তা থেকেই অনুমান, এই গ্রহে সব থেকে বেশি উপাদান হিসেবে থাকতে পারে পানি। পৃথিবীর থেকে বড় হওয়ায় এই গ্রহ দুটিকে সুপার আর্থ বলা হচ্ছে। গ্রহগুলি পৃথিবীর থেকে তিনগুণ বেশি হতে পারে। পৃথিবীর ভরের দ্বিগুণ গ্রহগুলি। কেপলার সি ও ডি গ্রহগুলির ঘনত্ব পৃথিবীর তুলনায় অনেক কম। এটি আশ্চর্যজনক যে, আবিষ্কৃত বেশিরভাগ গ্রহগুলিই পৃথিবীর থেকে সামান্য হলেও বড় এবং পাথুরে পৃথিবী।
ইউরোপ বা এনসেলাডাসের বৃহত্তর সংস্করণ এই গ্রহগুলি। যেমন বৃহস্পতি এবং শনিকে প্রদক্ষিণ করে পানি-সমৃদ্ধ চাঁদ, তেমনই এই সুপার আর্থ দুটিও বামন নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করছে। তবে তারা বামন নক্ষত্রের অনেক কাছাকাছি আছে।