গত বছরের ২০ জুলাই মঙ্গল যাত্রা শুরু করে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার মহাকাশযান ‘পারসিভারেন্স”। অবশেষে প্রায় দুই লাখ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে বৃহস্পতিবার দিবাগত বাংলাদেশ সময় রাত ৩টার দিকে মঙ্গলের বুকে সফলভাবে অবতরণ করেছে। আর এর অবতরণ নিশ্চয়তার মাধ্যমে মানব ইতিহাসে শুরু হলো আরেকটি অধ্যায়।
এখন সেখানে এনসিয়েন্ট লাইফ, শিলা, মাটির সন্ধান করা এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান, প্রাচীন মাইক্রো বায়াল লাইফ, ভূতত্ত্ব ও অতীত আবহাওয়ার তথ্য কালেক্ট করার মধ্যে দিয়ে রেড প্ল্যানেটে মানুষ এর যাওয়ার পথ সুগম করবেই এই রোবটটি।
পারসিভারেন্স রোভারটি সিলড টিউবেও(বাতাস বা কোনো গ্যাস প্রবেশ করতে পারবে না এমন টিউব) নমুনা সংগ্রহ করে রাখবে। পরবর্তীকালে মানুষবাহী কোন মিশন গেলে, সংগ্রহ করা যাবে সেটি। এই রোভারটিতে রয়েছে ২৩টি ক্যামেরা, ২টি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন মাইক্রোফোন যা মঙ্গলের বাতাসের শব্দকেও ধরে রাখতে পারবে।
মঙ্গলে মানুষের বসবাসের জন্য প্রচুর গবেষণা চলছে। রয়েছে প্রচুর বাধা। কেননা, এই লাল গ্রহে, মঙ্গলের বৈরী আবহাওয়ায় বেঁচে থাকাটাই মস্ত চ্যালেঞ্জ। সেখানে রয়েছে তীব্র তেজস্ক্রিয়তায় যা প্রাণহানী ঘটাতে পারে সহজেই। এছাড়া ও অ্যান্টার্কটিক অঞ্চলের চেয়ে তীব্র ঠান্ডা মঙ্গলের আবহাওয়া। তার ওপর মঙ্গলের বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের আধিক্য আর মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলীয় চাপ খুবই কম হওয়ায় বাইরের তাপমাত্রার প্রভাবে আপনার রক্তচাপ অনেক বেড়ে যাবে, তাই এই গ্রহে ল্যান্ড করার পর কোনো মানুষই স্বাভাবিকভাবে বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারবে না।
মার্স মিশনে রোবট পারসিভারেন্স এর সাথে আছে “ হেলিকপ্টার ইনজেনুইটি“
মঙ্গল গ্রহে হেলিকপ্টার, ড্রোন এবং অন্যান্য বিমান উড়তে পারে কিনা তা প্রমাণ করতে সেখানে যাচ্ছে “ হেলিকপ্টার ইনজেনুইটি“ এছাড়া মঙ্গলের ভুমিতে ইমেজ ডাটা এনালাইসিস এর কাজ ও করবে কপ্টারটি।
১.৮ কেজি ওজনের সোলার পাওয়ার চালিত এই কপ্টার টিতে রয়েছে অত্যাধুনিক ওয়ারলেস সিস্টেম, সাধারন হেলিকপ্টার এর ব্লেড ৪৫০-৫০০ আরপিএম এ রোটেট করতে পারলেও ইনজেনুইটির রোটেশনাল স্পিড ২৪০০ আরপিএম! এছাড়া ও রয়েছে কম্পিউটার, সেন্সর এবং দুটি ক্যামেরা।
হাই অল্টিটিউড এ হেলিকপ্টার ক্ষেত্রে ৪০০০০ ফিট ওয়ার্ল্ড রেকর্ড, প্লেন ৮৫০০০ ফিট, কিন্তু অবিশ্বাস্য ইনজেনুইটি ১ লক্ষ ফিট ( ৩০.৫ কিলোমিটার) উচ্চতায় ও ফ্লাই করতে পারে এর কারন মঙ্গল গ্রহের বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর তুলনায় অনেক পাতলা। পৃষ্ঠের চাপ প্রায় ৬১০ পাস্কাল (০.০৮৮ পিএসআই) যা পৃথিবীর মানের ১% এরও কম!
লেখক: আরিফুল হাসান অপু
ক্রু চিফ, স্পেস ইনোভেশন ক্যাম্প